Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ফিরে আসে হারানো ভালবাসা

‘রস’ নাটকটি দেখে এলেন পিয়ালী দাসযে কোনও সৃষ্টির মূলেই থাকে সম্মিলিত প্রয়াস। যাতে শ্রম-ভালবাসা সবটা মিলেমিশে থাকে। কিন্তু এর কোনওটির অভাব হলেই সৃষ্টি পরিপূর্ণ হয় না। যে কারণেই হয়তো মতি মিঞার তৈরি গুড়ের মানও এক সময় পড়ে যায়। যার গুড়ের কথা হাটে-বাজারে, লোকের মুখে মুখে ফিরতো। কিন্তু এখন? সেই মোতি মিঞার গুড় লোকে বাড়ি এসে ফিরিয়ে দিয়ে যায়। তাদের ধারণা লোক ঠকানোর ব্যবসা করছে মোতি।

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

যে কোনও সৃষ্টির মূলেই থাকে সম্মিলিত প্রয়াস। যাতে শ্রম-ভালবাসা সবটা মিলেমিশে থাকে। কিন্তু এর কোনওটির অভাব হলেই সৃষ্টি পরিপূর্ণ হয় না। যে কারণেই হয়তো মতি মিঞার তৈরি গুড়ের মানও এক সময় পড়ে যায়। যার গুড়ের কথা হাটে-বাজারে, লোকের মুখে মুখে ফিরতো। কিন্তু এখন? সেই মোতি মিঞার গুড় লোকে বাড়ি এসে ফিরিয়ে দিয়ে যায়। তাদের ধারণা লোক ঠকানোর ব্যবসা করছে মোতি।

সঙ্গীতা পাল এর নির্দেশনায়, নরেন্দ্রনাথ মিত্রের গল্প অবলম্বনে সম্প্রতি মঞ্চস্থ হল ‘রস’ নাটকটি। যেখানে লুকিয়ে আছে টানাপড়েন আর সংকট। যে টানাপড়েন যৌন চাহিদা, সৌন্দর্যবোধ এবং অর্থনীতির। সঙ্গে রয়েছে শিল্প বা উৎপাদনের ক্ষেত্রে যৌথতার স্বীকৃতি। তবে এই জটিল বহুস্তরিক ও মনঃস্তাত্ত্বিক গল্পের প্রাণটি ধরে রাখে চরিত্রদের নিখুঁত অভিনয়। যার কিছুটা প্রকাশিত, কিছুটা নীরব।

সুপুরুষ, স্বভাবে রসিক মতি রসের কারবারী। প্রথম বউ মারা যাওয়ার পরে প্রেমে পড়েন সুন্দরী ফুলবানুর। কিন্তু ফুলবানুর বাবা পণের টাকা দিতে না পারায় মেয়েকে মোতির হাতে দিতে নারাজ তিনি। চিন্তায় পড়ে মোতি। রস তো আর এমনি বাজারে বিকোয় না, তাকে জাল দিয়ে ভাল জাতের গুড় বানাতে হয়।

এ কাজে দক্ষ মাজুবিবি। সুযোগসন্ধানী মোতি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করে মাজু। সমস্ত গুণ সে উজাড় করে দেয় সংসারে। মোতি মিঞার গুড়ের সুনাম ও লাভ দুইই বেড়ে চলে। কিন্তু তাতেও শরীরে মনে শান্তি নেই মোতির। তার মন যে বাঁধা ফুলবানুর কাছে।

শীত যেতেই মাজুবিবিকে অন্যায় দোষারোপে তালাক দিয়ে ফুলবানুকে বিয়ে করে সে। কিন্তু এ সুখ বেশি দিন সয় না। শীতকাল আসতেই বিষাদে ভরে ওঠে দাম্পত্য। মাজুবিবির মতো মিষ্টি গুড় তৈরিতে সক্ষম হয় না ফুলবানু। ফলে মোতির সুনাম, ব্যবসা দুইই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। শেষ পর্যন্ত জীবিকার টানেই মাজুবিবির কাছে ফিরে আসে মোতি। দুজনেই অনুভব করে তাদের মধ্যেকার ভালবাসার আগুন এখনও নেভেনি।

মোতি মিঞা’র চরিত্রে কৌশিক করের অভিনয়ে গ্রাম্যতা, রুক্ষতা সবটাই সুন্দর ভাবে ফুটে ওঠে। মনের কথা প্রকাশ পায় নীরবতায়, চাহনিতে, শারীরিক অস্থিরতায়, অভিব্যক্তিতে। একটি দৃশ্যে বিশেষভাবে নজর কাড়েন কৌশিক। ঘুমের মধ্যে রসের হাড়িটাকে ফুলবানু ভেবে আদর করতে থাকে মোতি মিঞা। স্বপ্ন ভেঙে গেলে না পাওয়ার যন্ত্রণায় হাঁড়িটাকে সজোরে বাজাতে বাজাতে ভেঙে চুরমার করে দেন। এই দৃশ্য ধাক্কা দেয় দর্শকের মনেও।

তেজী, আত্মবিশ্বাসী, নিজের দক্ষতায় অটুট মাজুবিবি চরিত্রে সঙ্গীতা পাল অনবদ্য। ভরা যৌবনের উচ্ছ্বাসে, প্রাণবন্ত ফুলবানু চরিত্রে মন ভরিয়ে দেন বহ্নি চক্রবর্তী।

এছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে বাবুন চক্রবর্তী, উত্তম চট্টোপাধ্যায়, নবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভঙ্কর দাশশর্মা, সুদীপ্ত ঘোষ, অরুণাভ গুহ এবং দেবজিৎ নাগ মানানসই।

ক্লাসিকের ধীর গতিটাও ফুটে ওঠে নাটক জুড়ে। তবে সংলাপ জোরালো না হলে নাটকটি পরিপূর্ণতা পেত না। এই কৃতিত্বের দাবিদার অবশ্যই চিত্রনাট্যকার, গীতিকার শুভঙ্কর দাশশর্মা। সংলাপ এবং গানের কথা মিলেমিশে একটি লিরিক্যাল আমেজ বয়ে আনে।

সুরকার অভিজিৎ আচার্য, মঞ্চসজ্জায় হিরণ মিত্র এবং আলোকসজ্জায় দীপক মুখোপাধ্যায় প্রশংসা পাবেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy