Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

চোখরাঙানি আর নয়

‘ইচ্ছেমতো’র দু’টি নাটকে। লিখছেন পিয়ালী দাসসম্প্রতি ‘ইচ্ছেমতো’র প্রযোজনায় একই দিনে মঞ্চস্থ হল দুটি ভিন্ন স্বাদের নাটক। যেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বর্তমান সময়ের ক্ষত, বিপ্লব, অপেক্ষা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আজও নারীর অবস্থান, ক্ষমতার অভিমুখ পরিবর্তনের খেলা, রাজনীতির রং থেকে সমসাময়িকতা এরকমই আরও বিষয়। তবে দলের নামকরণ যে সার্থক তা তাদের প্রযোজনাতেই প্রমাণিত। কোনও রকম রক্ষণশীলতার চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই ইচ্ছেমতো’র ইচ্ছেরা ডানা মেলেছে চরিত্রদের সংলাপে। পরিচালনায় সৌরভ পালোধী।

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

সম্প্রতি ‘ইচ্ছেমতো’র প্রযোজনায় একই দিনে মঞ্চস্থ হল দুটি ভিন্ন স্বাদের নাটক। যেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বর্তমান সময়ের ক্ষত, বিপ্লব, অপেক্ষা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আজও নারীর অবস্থান, ক্ষমতার অভিমুখ পরিবর্তনের খেলা, রাজনীতির রং থেকে সমসাময়িকতা এরকমই আরও বিষয়। তবে দলের নামকরণ যে সার্থক তা তাদের প্রযোজনাতেই প্রমাণিত। কোনও রকম রক্ষণশীলতার চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই ইচ্ছেমতো’র ইচ্ছেরা ডানা মেলেছে চরিত্রদের সংলাপে। পরিচালনায় সৌরভ পালোধী।
প্রথমেই বলা যাক ‘নাটকটির নাম কী?’ নাটকের কথা। এ নাটকের প্রধান চরিত্র নিঃসঙ্গ, খামখেয়ালি, আত্মভোলা এক নাট্যকার। যিনি তাঁর কলমের জাদু কাঠিতে চরিত্রদের সৃষ্টি করেন আবার ইচ্ছেমতো মেরেও ফেলেন। কখনও প্রেমের খেলায় মাতিয়ে দেন। তাঁর সৃষ্ট নারী চরিত্রকে ধর্ষিতা হতে হয়, প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও শুনতে হয়। একাকীত্বের জীবনে এই চরিত্রদের নিয়েই সময় কেটে যায় নাট্যকারের। তাদের সঙ্গেই ঝগড়া করেন আবার তাদের ভালওবাসেন।
এভাবেই তাঁর কলমে জন্ম নেয় ইচ্ছামতী ও প্রত্যয়। ইচ্ছামতী, যাকে বিজয়া দশমীর রাতে ধর্ষিতা হতে হয়েছিল। আর প্রত্যয়, মিছিলে কুশপুতুল সাপ্লাই দেওয়াই তার পেশা। তবে কুশপুতুলগুলোর নির্দিষ্ট কোনও রং বা লিঙ্গ নির্ধারিত থাকে না। চাহিদা অনুযায়ী সেগুলি সেজে ওঠে নারী বা পুরুষ রূপে। একসময় প্রত্যয় আর ইচ্ছামতীর মধ্যে মিষ্টি বন্ধুত্ব তৈরি হয়। নিজের সৃষ্ট চরিত্রদের সঙ্গে নাট্যকারের ক্রমশ আলাপ জমে ওঠে আর উঠে আসে তাদের জীবনের কথা।
চরিত্রদের কথপোকথনে রসিকতা ঝড়ে পড়ে, কখনও ব্যঙ্গে, কখনও সরাসরি আক্রমণে। যে আক্রমণের মুখে পড়তে হয় এই নাট্যকারকে আবার কখনও বাস্তবের বর্তমান সরকারের প্রধানকে বা প্রাক্তনকে। সবক্ষেত্রেই আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে রাষ্ট্রযন্ত্র তথা ক্ষমতা। তবে বিশেষ করে যেখানে রাজনীতির প্রসঙ্গ এসেছে, এসেছে নেতা-নেত্রী, শিল্পীদের কথা সেখানে সংলাপ নির্বাচনে কিছুটা সংযত হওয়ার প্রয়োজন ছিল। এবার আসা যাক চরিত্রদের কথায়। ‘ইচ্ছামতী’র চরিত্রে তূর্ণা দাশ। তিনি বেশ প্রাণবন্ত। এই চরিত্রে অনেক রং পাওয়া যায়। ধর্ষিতা হওয়ার কথা বলার সময় কষ্ট-যন্ত্রণার প্রকাশে এক রকম, নাচের দৃশ্যে কিম্বা প্রেমের দৃশ্য রচনায় অন্য রকম ভাবে ধরা দেন তূর্ণা। উদাত্ত কণ্ঠে তাঁকে গাইতেও শোনা যায় (আমি অপার হয়ে বসে আছি)। সৌরভ পালোধীর প্রত্যয় চরিত্রটির বুননও বেশ সুন্দর। যাকে প্রেমের জোয়ারে ভাসতে দেখা যায়। আবার রং পরিবর্তনের খেলাতেও যে মেতে ওঠে (বদলা নয় বদল চাই। ... পরিবর্তন নিপাত যাক)। নাট্যকারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন নীল মুখোপাধ্যায়। তিনিই এই নাটকের কেন্দ্রবিন্দুতে। তাঁর অভিনয় মন ছুঁয়ে যায়। নাটকের শেষ দৃশ্যে তাঁর সৃষ্ট চরিত্ররা জবাব চেয়ে তাদের জন্মদাতাকে তীব্র আক্রমণ করে, প্রাণে মারতে চায়। নীলের শরীরটাকে টেনে হিচড়ে ফুটবলের মত লোফালুফি করতে থাকে। এক নিষ্ঠুর দৃশ্য। নীল বার বার আঁছড়ে মঞ্চের মাটিতে ছিটকে গিয়ে পরেন। অন্যান্য চরিত্রে উল্লেখের দাবি রাখেন নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়, ভিকি নন্দী, সৌম্য, সৌমিক। সিধুর সঙ্গীত এ নাটকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।

ইচ্ছেমতো’র প্রথম নিবেদন ছিল ‘এবং ও’। অপেক্ষা আর নৈঃশব্দের দৃশ্য রচিত হয় এ নাটকে। লাজুক স্বভাবের একটি মেয়ে রোজ অপেক্ষা করে কারও জন্য। ডাকাবুকো আরও একটি মেয়ে আসে সেখানে। তবে সে কারও জন্য অপেক্ষা করে না। দুজনের আলাপ জমে ওঠে। কথায় কথায় প্রথম জন বলে ওঠে ‘ও খুব ভাল কবিতা লেখে’। দ্বিতীয় জনের কথায়, ‘ও খুব ভাল কবিতা লিখত’। অর্থাৎ এক জনের কাছে যে অতীত, অন্যজনের কাছে সে বর্তমান। কিন্তু এ অপেক্ষা যে কোন প্রেমিকের জন্যই নাটকে তার উল্লেখ পাওয়া যায় না। মনে হয়, মেয়ে দুটো হয়তো আলাদা কেউ নয়। একই নারীর দুটো ভিন্ন সত্তা। একটা সাহসী যে প্রতিবাদ করে, অপরটি ভীরু যে সব কিছু মেনে নেয়। নাটকের পরিচালক সৌরভ পালোধী বলতে চেয়েছেন, ‘এই অপেক্ষা প্রেমিকের জন্য নাও হতে পারে। হয়তো কোনও রেভোলিউশনের জন্য। তারও পথ চেয়ে থাকতে পারে ওঁরা।’ এই বিষয়টা সচেতন ভাবেই প্রকাশ করতে চাননি সৌরভ। নাটকের মঞ্চসজ্জা থেকে ডিজাইনিং সবটাই বেশ সুপরিকল্পিত। অভিনয়ে তূর্ণা দাশ (প্রথম মেয়েটি), নিবেদিতা মুখোপাধ্যায় (দ্বিতীয় মেয়েটি)। দুজনের অভিনয়ই সমান উল্লেখের দাবি রাখে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy