Advertisement
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪
science news

সূর্যের করোনার প্রথম মানচিত্র আঁকলেন দুই বাঙালি

সূর্য-পরিচয়ের নতুন ‘বর্ণপরিচয়’-এও লেখা থাকল বাঙালিরই নাম। বিদ্যা বিনয় ও তন্ময়ের।

সূর্যের করোনার টৌম্বক ক্ষেত্রগুলি। ছবি- নাসার সৌজন্যে।

সূর্যের করোনার টৌম্বক ক্ষেত্রগুলি। ছবি- নাসার সৌজন্যে।

সুজয় চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২০ ১০:২৮
Share: Save:

সূর্যের বায়ুমণ্ডলে ডুব দিয়ে ‘মুক্তো’ তুলে আনলেন বাংলার কৃষক পরিবারের দুই সন্তান!

বাঁকুড়ার বাঁশি গ্রামের বিদ্যাবিনয় কারক। আর হুগলির পশ্চিমপাড়া গ্রামের তন্ময় সামন্ত। যাঁরা কার্যত কাদামাখা পায়ে চাষের ক্ষেত থেকে উঠে পৌঁছে গিয়েছেন ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে সূর্যের বায়ুমণ্ডলে। করোনায়।

কখন ভয়ঙ্কর সৌরঝড় উঠবে, দেখা দেবে আগুন ঝরানো সৌরঝলক, কোথা থেকে কখন সূর্যের ‘মাংস’ উপড়ে এনে সৌরমণ্ডলে ঝাঁপিয়ে পড়বে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর করোনাল মাস ইজেকশন, এ বার সে সব হয়তো আগেভাগেই বলে দেওয়া যাবে।

ফলে, সূর্য থেকে ছুটে আসা এই হানাদারদের হাত থেকে আমাদের, কৃত্রিম উপগ্রহ, মহাকাশযান, মহাকাশচারী আর মহাকাশের আবহাওয়াকে বাঁচাতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে অনেক আগেভাগে। পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার হাত থেকে বাঁচানো যাবে পৃথিবীর টেলিযোগাযোগ ও বিদ্যুৎ স‌ংযোগ ব্যবস্থাকেও।

১০০ বছরের অপেক্ষার পর...

গত ১০০ বছর ধরে যার জন্য হাপিত্যেশ অপেক্ষায় ছিলেন বিশ্বের সৌরপদার্থবিজ্ঞানীরা, সেই অসাধ্যসাধনের কাজটা এ বার সহজ করার পথ দেখাল সাম্প্রতিক একটি গবেষণা। সূর্যের বায়ুমণ্ডল বা করোনার সুবিশাল এলাকায় অত্যন্ত শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রগুলি কোথায় কী ভাবে জুড়ে যাচ্ছে, কী ভাবে বিপরীত মেরুর (উত্তর ও দক্ষিণ) চৌম্বক ক্ষেত্রগুলির সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে সেগুলির ধ্বংস হচ্ছে সৌরঝড়, সৌরঝলক ও করোনাল মাস ইজেকশনের জন্ম দিয়ে, এই প্রথম তার প্রায়-পূর্ণাঙ্গ একটি মানচিত্র আঁকা সম্ভব হল।

ভারতীয় ও চিনাদের সেই অবাক করা গবেষণাপত্রটি বেরিয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ। যেখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের ‘রামানুজন ফেলো’ এবং ‘ইন্‌সা ইয়ং সায়েন্টিস্ট’ পুরস্কারজয়ী বিদ্যাবিনয় ও আমেরিকার জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট ডক্টরাল গবেষক তন্ময়ের। গবেষণাটি চালানো হয়েছে বিশিষ্ট সৌরপদার্থবিজ্ঞানী চিনা অধ্যাপক হুই টিয়ানের তদারকিতে।

সূর্যের নতুন ‘বর্ণপরিচয়’! মাঝখানে দুই বঙ্গসন্তান তন্ময় সামন্ত (বাঁ দিকে) ও বিদ্যাবিনয় কারক। দু’পাশে চিনা গবেষকরা। হুই টিয়ান (একেবারে বাঁ দিকে) ও জিয়াও ইয়াং।

সূর্যের এই মানচিত্রের প্রয়োজন হল কেন?

ছবি সব সময়েই যে কোনও জিনিসকে মনে রাখতে, সহজে বুঝতে সাহায্য করে। তাই ‘এ ফর অ্যাপ্‌ল’ দিয়ে আমাদের শুরু হয় বর্ণপরিচয়। তার পর ধীরে ধীরে ‘এম ফর ম্যাপ’ দিয়ে আমরা দেখতে চিনতে শুরু করি আমাদের দেশের মানচিত্র। দেশটাকে চেনার, বোঝার সেই শুরু। তাই কাশ্মীর বলতেই উত্তর, কেরল বলতেই দক্ষিণ দিক আর গুজরাত বলতেই পশ্চিম দিকটা আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্রায় শৈশবেই। মানচিত্র মনে পড়লেই কোন রাজ্য আকারে কত বড়, কোনটা তুলনায় ছোট, সেই ছবিও ভেসে ওঠে। মনে পড়ে কোন রাজ্যের সীমানা পেরলেই কোন রাজ্যে ঢুকে পড়া যায়, তার পরে কোন রাজ্যের শুরু।

সূর্যের করোনায় থাকা চৌম্বক ক্ষেত্রগুলির একটা মানচিত্রের প্রয়োজন অনেক দিন ধরেই বোধ করছিলেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, বোঝা যাচ্ছিল, এদের জন্মস্থান, চেহারা-চরিত্র, গতিবিধি, আচার-আচরণ, ‘খামখেয়ালিপনা’র উপরেই নির্ভর করে সূর্যের আচার-আচরণের প্রায় সব কিছু।

সূর্যের করোনার ঠিক কোথা থেকে উঠবে সৌরঝড় (‘সোলার স্টর্ম’), কখন বেরিয়ে আসবে আগুন ঝরানো সৌরঝলক (‘সোলার ফ্লেয়ার’), গরমের হল্‌কা সৌরবায়ু (‘সোলার উইন্ড’), তা নির্ভর করে বিপরীত মেরুর (উত্তর ও দক্ষিণ) এই চৌম্বক ক্ষেত্রগুলির মধ্যে কী ভাবে কতটা পরিমাণে ধাক্কাধাক্কি লাগছে, তার উপর। সেই ধাক্কাধাক্কিটা যদি অসম্ভব জোরালো হয়, তা হলে করোনা থেকে একেবারে সূর্যের ‘মাংস’ উপড়ে নিয়ে বেরিয়ে আসে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ‘করোনাল মাস ইজেকশন (সিএমই)’। আবার বিপরীত মেরুর এই চৌম্বক ক্ষেত্রগুলির মধ্যে ধাক্কাধাক্কির (‘ম্যাগনেটিক রিকানেকশান’) জন্যই সূর্যের পিঠের (‘ফোটোস্ফিয়ার’) তাপমাত্রার (৬ হাজার ডিগ্রি কেলভিন) চেয়ে কয়েক লক্ষ গুণ বেশি হয় করোনার তাপমাত্রা (প্রায় ১০ লক্ষ ডিগ্রি কেলভিন)। যার অর্থ, করোনাকে অসম্ভব গরম করে তোলার ব্যাপারেও প্রধান ভূমিকা রয়েছে এই চৌম্বক ক্ষেত্রগুলির।

যে কোনও চুম্বকেরই চার পাশে একটা চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়। আর তার থাকে দু’টি মেরু। বিপরীত মেরু একে অন্যকে আকর্ষণ করে। আর সম মেরু একে অন্যকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়। চুম্বক যত শক্তিশালী হয়, তার চৌম্বক ক্ষেত্রও হয় তত জোরালো। চৌম্বক রেখাগুলি থাকে এই চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে। চৌম্বক রেখাগুলিকে অবশ্য দেখা যায় না। তবে কোনও চৌম্বক ক্ষেত্র কতটা শক্তিশালী হবে আর তা কতটা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে, তা নির্ভর করে চৌম্বক রেখাগুলির উপরেই।

অসম্ভব শক্তিশালী চুম্বক রয়েছে সূর্যের পিঠের (‘ফোটোস্ফিয়ার’) অনেক গভীরে। সূর্যের যাবতীয় জ্বালানি তৈরির জন্য সুবিশাল পরমাণু চুল্লিটা রয়েছে যেখানে, তার কিছুটা উপরে। সেখান থেকেই চৌম্বক রেখা ও ক্ষেত্রগুলির জন্ম হচ্ছে। সেগুলি উঠে আসছে ফোটোস্ফিয়ারে। তৈরি করছে সৌরকলঙ্ক (‘সানস্পট’)। সূর্যের এই চৌম্বক রেখাগুলির বেশির ভাগই হয় ‘ক্লোজ্‌ড’ বা আবদ্ধ। এক দিক থেকে উঠে অন্য দিক দিয়ে তা সূর্যের ভিতরে ঢুকে যায়। একই ঘটনা ঘটে পৃথিবীর দুই মেরুতেও। আবার সূর্যের কিছু কিছু চৌম্বক রেখা হয় একেবারে সরলরেখার মতো। যেগুলি সূর্য থেকে বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে সৌরমণ্ডলের সর্বত্র। তার একেবারে শেষ প্রান্ত ‘হেলিওস্ফিয়ার’ পর্যন্ত। এদের মাধ্যমেই পৃথিবী-সহ সৌরমণ্ডলের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে সৌরবায়ু বা সোলার উইন্ড। আগুন ঝরানো হল্‌কা।

সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্র কী, দেখুন নাসার ভিডিয়ো

এই বিশাল মানচিত্র কেন এত দিন বানানো যায়নি?

এর প্রথম কারণ, সূর্যের করোনার দেখা পাওয়াটাই দুঃসাধ্য। আমরা সূর্য বলতে যা দেখি, সেটা তার পিঠ (‘সারফেস’)। যার নাম- ফোটোস্ফিয়ার। সেখান থেকে যে জোরালো আলো বেরিয়ে আসে, আমরা সেটাই দেখি। বেশি ক্ষণ দেখাও যায় না। চোখ ধাঁধিয়ে যায়। সেই জোরালো আলোই সূর্যের করোনাকে দেখতে দেয় না আমাদের। তাই কোনও ভাবে যদি সূর্যের মাঝখানটা চাপা দেওয়া যায়, একমাত্র তখনই করোনাকে দেখতে পাওয়া সম্ভব। ফোটোস্ফিয়ারের উপরে ৭০ লক্ষ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত সূর্যের করোনা বা বায়ুমণ্ডল।

আরও পড়ুন- এ বার মঙ্গল অভিযানে নাসার বড় ভরসা ভারতের বলরাম

আরও পড়ুন- ‘চাঁদের বাড়ি’র জন্য এই প্রথম মহাকাশের ইট বানাল ইসরো, আইআইএসসি​

প্রাকৃতিক ভাবে সেটা হয় সূর্যের পূর্ণগ্রাস (‘টোটাল সোলার একলিপ্স’) হলে। তাই পূর্ণগ্রাস হলেই তা দেখার জন্য ছুটোছুটি শুরু হয়ে যায় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সৌরপদার্থবিজ্ঞানীদের। কিন্তু পৃথিবীর কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় সূর্যের পুর্ণগ্রাস দেখা যায় কালেভদ্রে। তা-ও খুব সামান্য এলাকায়, খুবই অল্প সময়ের জন্য। ওই সামান্য অবকাশে সূর্যের করোনার সবক’টি চৌম্বক ক্ষেত্রকে পর্যবেক্ষণ করার কাজটা কঠিন বললে কমই বলা হয়। ফলে, তাদের নিয়ে মানচিত্র বানানোর কাজটা আরও দুরূহ হয়ে পড়ে।

কৃত্রিম উপায়ে সূর্যের করোনাকে দেখতে হয় বিশেষ একটি যন্ত্রের সাহায্যে। তার নাম- ‘করোনাগ্রাফ’। তাতেও সূর্যের মাঝখানটা পুরোপুরি চাপা দেওয়া সম্ভব হয়।

করোনার চৌম্বক রেখাগুলি।

তবে সে ক্ষেত্রেও অসুবিধা রয়েছে। সূর্যের বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব তার পিঠের ঘনত্বের ১০০ ভাগের এক ভাগ মাত্র। বা আরও কম। আরও অসুবিধা, করোনায় থাকা চৌম্বক রেখাগুলি খুবই ক্ষীণ (‘ফেন্ট’)। এতটাই যে, খুব শক্তিশালী টেলিস্কোপ বা করোনাগ্রাফেও তা ভাল ভাবে দেখা যায় না। যেন হারিয়ে যায়!

এ বার সম্ভব হল কী ভাবে?

হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের একটি পাহাড়চূড়ায় বসানো একটি বিশাল করোনাগ্রাফ ব্যবহার করেছিলেন গবেষকরা। কিন্তু তার পরেও করোনার বিশাল একটা এলাকায় থাকা খুবই ক্ষীণ চৌম্বক ক্ষেত্রগুলিকে কী ভাবে দেখতে পাওয়া সম্ভব হল এ বার?

দুই বাঙালির কৃতিত্ব

সেটা সম্ভব হয়েছে মূলত বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান বিদ্যাবিনয় কারকের দৌলতে। বিদ্যাবিনয় এখন ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি)’-র বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অধ্যাপক।

নাসার সোলার ডায়নামিক অবজারভেটরি থেকে অতিবেগুনি রশ্মিতে ( বাঁ দিকে) তোলা করোনার ছবি, (ডান দিকে) ওই ছবির উপর বসানো করোনার চৌম্বক ক্ষেত্র (ডান দিকে)।

করোনায় সূর্যের দু’টি বিপরীত মেরুর চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হলে প্রচুর পরিমাণে শক্তির জন্ম হয়। সেই শক্তি মূলত তাপ ও গতিশক্তিতে পরিবর্তিত হয়। এই দুই ধরনের শক্তির ছড়িয়ে পড়ার জন্য প্রয়োজন তরঙ্গের।

বিদ্যাবিনয়ের কৃতিত্ব, তিনি সেই তরঙ্গের সূত্র ধরেই করোনার অত্যন্ত ক্ষীণ চৌম্বক ক্ষেত্রগুলি কোথায় কী ভাবে রয়েছে, সেগুলি কী ভাবে জুড়ে যাচ্ছে (‘রিকানেকশান’), তা বলতে পেরেছেন। তার ফলে, করোনার বিশাল একটা এলাকায় অত্যন্ত ক্ষীণ চৌম্বক রেখাগুলি কোথায় কী ভাবে রয়েছে, তা কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত, তার মানচিত্র বানানো সম্ভব হয়েছে এই প্রথম।

আর তন্ময়ের কৃতিত্ব, তিনি তথ্য বিশ্লেষণের জন্য জরুরি সফ্‌টওয়্যার-সহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন।

করোনার চৌন্বক ক্ষেত্রের মানচিত্র।

বিদ্যাবিনয়ের কথায়, ‘‘আমরা ফোটোস্ফিয়ার থেকে ৩৫ হাজার কিলোমিটার উপরে থাকা করোনার চৌম্বক ক্ষেত্রগুলিকে দেখা শুরু করি। সেটা চালিয়ে গিয়েছি ফোটোস্ফিয়ার থেকে আড়াই লক্ষ কিলোমিটার উপরে থাকা করোনার চৌম্বক ক্ষেত্রগুলি পর্যন্ত। যেগুলি অত্যন্ত ক্ষীণ বললেও কমই বলা হয়। সূর্য আদতে একটা গোলক (‘স্ফেরিক্যাল’)। আমরা সেই গোলকের ওই পরিমাণ এলাকায় অত্যন্ত ক্ষীণ চৌম্বক ক্ষেত্রগুলির হদিশ পেয়েছি। তাই আমরা এটাকে গ্লোবাল বলছি। যা এর আগে সূর্যের বায়ুমণ্ডলের এতটা বিশাল এলাকা জুড়ে করা সম্ভব হয়নি।’’

যে পথে এগিয়েছিলেন গবেষকরা...

এই মানচিত্র বানাতে গিয়ে তাঁরা ঠিক কোন পথ ধরে এগিয়েছেন, তা ব্যাখ্যা করলেন অন্যতম গবেষক তন্ময় সামন্ত। জানালেন, পৃথিবী থেকে সূর্যের করোনা দেখে তার বৈশিষ্ট্যগুলি বোঝার জন্য একটি বিশেষ প্রকৌশলের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। যার নাম- ‘করোনাল সিস্‌মোলজি’ বা ‘ম্যাগনেটোসিস্‌মোলজি’।

আমরা জানি, বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের গতিবেগ হয় বিভিন্ন রকমের। বাতাসে শব্দ যে গতিবেগে ছোটে, জলে সেই গতিবেগে ছোটে না। আবার ধাতুর মধ্যে দিয়ে গেলে শব্দের গতিবেগ আলাদা হয়। এর অর্থ, মাধ্যমের ঘনত্ব ও তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে শব্দের তরঙ্গ-ধর্ম বদলায়। ফলে, সেই তরঙ্গগুলিকে দেখে সেগুলি কোন মাধ্যম দিয়ে ছড়াচ্ছে, তা বোঝা যায়।

আরও পড়ুন- সূর্যের করোনায় এই প্রথম হদিশ ‘ক্যাম্পফায়ার’-এর

আরও পড়ুন- নিজের ছোড়া ‘বাণ’ থেকে আমাদের বাঁচায় সূর্যই! দেখালেন মেদিনীপুরের সঞ্চিতা

তন্ময় বলছেন, ‘‘একই ভাবে সূর্যের করোনার বিভিন্ন স্তরের তরঙ্গগুলির ধর্মও আলাদা আলাদা হয়। এদের পোশাকি নাম- ‘ম্যাগনেটোহাইড্রোডায়নামিক ওয়েভ্‌স’। এরা নানা ধর্মের হয়। তাদেরই অন্যতম- ‘ট্রান্সভার্স ম্যাগনেটোহাইড্রোডায়নামিক ওয়েভ’। বা ‘ট্রান্সভার্স এমএইচডি’। আমরা এই ট্রান্সভার্স এমএইচডি নিয়েই কাজ করেছি।’’

এ এক অভূতপূর্ব ফলাফল: অধ্যাপক দীপঙ্কর বন্দোপাধ্যায়

নৈনিতালের ‘আর্যভট্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব অবজারভেশনাল সায়েন্সেস (এরিস)’-এর অধিকর্তা দীপঙ্কর বন্দোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘করোনাগ্রাফ দিয়ে গবেষকরা প্রথমে বর্ণালী বিশ্লেষণ করে এই ট্রান্সভার্স এমএইচডি-গুলিরই ঘনত্ব মেপেছিলেন। তার পর তাঁরা চৌম্বক ক্ষেত্রের ভিতরের চৌম্বক রেখাগুলির উপর সেই তরঙ্গের বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যবহার করেছিলেন চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি বুঝতে। এই সবের মাধ্যমেই গবেষকরা এই মানচিত্রটি বানিয়েছেন। এটা অভূতপূর্ব ফলাফল।’’

সূর্যকে বোঝার নতুন পথ দেখাল এই গবেষণা: অধ্যাপক দিব্যেন্দু নন্দী

‘‘এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটা কাজ’’, বলছেন মোহনপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার কলকাতা)’-এর অধ্যাপক বিশিষ্ট সৌরপদার্থবিজ্ঞানী দিব্যেন্দু নন্দীও। তাঁর কথায়, ‘‘সূর্যের বায়ুমণ্ডলের বাইরের দিকটায় (‘আউটার অ্যাটমস্ফিয়ার’) থাকা অত্যন্ত ক্ষীণ চৌম্বক ক্ষেত্রগুলিকে বোঝার একটা নতুন পথ দেখাল এই গবেষণা। সূর্যের করোনার এর চেয়ে বেশি গ্লোবাল মানচিত্র বানানো মুশকিল। কারণ, পৃথিবী থেকে করোনাগ্রাফ দিয়ে সূর্যের করোনার শুধু প্রান্তটিকে দেখা যায়। তাই এটাকে আমি আক্ষরিক অর্থে সূর্যের করোনার চৌম্বক ক্ষেত্রের গ্লোবাল মানচিত্র বলে মেনে নিতে রাজি নই। তবে এটা খুবই আনন্দের, এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে দুই বাঙালি বিজ্ঞানীর।’’

সূর্যের বর্ণপরিচয়েও বাঙালিরই নাম!

ক্ষেতের ফসলের কথা ভেবে যাঁদের বছরভর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, সেই কৃষক পরিবারেরই দুই সন্তানের বড় ভূমিকা থেকে গেল অনেক আগেভাগে সূর্যের গোপন ‘অভিসন্ধি’গুলি জেনে ফেলার উপায় বাতলানোয়। যা আগামী দিনে বড়সড় বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে পারে সভ্যতাকে।

সূর্য-পরিচয়ের সেই নতুন ‘বর্ণপরিচয়’-এও লেখা থাকল বাঙালিরই নাম। বিদ্যাবিনয় ও তন্ময়ের।

ছবি ও ভিডিয়ো সৌজন্যে: নাসা।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ ও তিয়াসা দাস।

অন্য বিষয়গুলি:

global mapping of solar coronal magnetic field science journal tanmoy samanta bidya binoy karak dipankar bannerjee solar coronal magnetic field transverse magnetohydrodynamic waves transverse MHD
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy