Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

গবেষণার জন্য আন্টার্কটিকা পাড়ি প্রেসিডেন্সির শিক্ষকের

গবেষণার ‘ফিল্ড’ হিসেবে আন্টার্কটিকাই কেন? সুপ্রিয় বলছেন, ‘‘লক্ষ লক্ষ বছর আগে ওখানে জঙ্গল ছিল। কিন্তু এখন সেখানে শুধুই শ্যাওলা-ব্যাক্টিরিয়া। গবেষকেরা দেখেছেন, গত ৫০ বছরে সেখানে আস্তে আস্তে জন্মাচ্ছে শ্যাওলা, যা আগে ছিল না। তাই জলবায়ুর পরিবর্তনে আন্টার্কটিকার বাস্তুতন্ত্রের কোনও পরিবর্তন হচ্ছে কি না, তা জানতেই এই গবেষণা।’’

প্রশিক্ষণে সুপ্রিয় দাস।

প্রশিক্ষণে সুপ্রিয় দাস।

স্বাতী মল্লিক
শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ০১:২২
Share: Save:

আন্টার্কটিকার প্রতিকূল আবহাওয়ায় লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বেঁচে থাকা উদ্ভিদ-প্রাণীর উপরে কি কোনও প্রভাব ফেলছে বিশ্ব উষ্ণায়ন? আবহাওয়ার পরিবর্তনে আন্টার্কটিকা ভবিষ্যতে আরও উষ্ণ হয়ে উঠলে কী ভাবে টিকে থাকবে এই বাস্তুতস্ত্র? এই প্রশ্নের উত্তর পেতেই চলতি মাসের শেষে পেঙ্গুইনের দেশে পা রাখতে চলেছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিদ্যার শিক্ষক সুপ্রিয় দাস। এই প্রথম গবেষণা করতে প্রেসিডেন্সি থেকে কোনও শিক্ষক পাড়ি দিচ্ছেন ওখানে। আন্টার্কটিকায় ভারতের ৩৮তম বৈজ্ঞানিক অভিযানের অংশ হিসেবে সেখানকার আণুবীক্ষণিক জীবের (লিচেন-ব্যাক্টিরিয়া-অ্যালগির) উপরে আবহাওয়ার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করবেন তিনি। তাঁর এই তিন মাসের সফরের যাবতীয় খরচ বহন করবে ভূবিজ্ঞান মন্ত্রক।

গবেষণার ‘ফিল্ড’ হিসেবে আন্টার্কটিকাই কেন? সুপ্রিয় বলছেন, ‘‘লক্ষ লক্ষ বছর আগে ওখানে জঙ্গল ছিল। কিন্তু এখন সেখানে শুধুই শ্যাওলা-ব্যাক্টিরিয়া। গবেষকেরা দেখেছেন, গত ৫০ বছরে সেখানে আস্তে আস্তে জন্মাচ্ছে শ্যাওলা, যা আগে ছিল না। তাই জলবায়ুর পরিবর্তনে আন্টার্কটিকার বাস্তুতন্ত্রের কোনও পরিবর্তন হচ্ছে কি না, তা জানতেই এই গবেষণা।’’

সুপ্রিয় জানাচ্ছেন, আগামী ২৭ নভেম্বর কলকাতা থেকে গোয়া যাবেন তিনি। সেখান থেকে প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন, এর পরে রাশিয়ার মালবাহী উড়ানে সোজা আন্টার্কটিকা। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পূর্ব আন্টার্কটিকায় লার্সম্যান পাহাড়ের কাছে ভারতের তৃতীয় গবেষণাকেন্দ্র ‘ভারতী’ হবে তাঁর ঠিকানা। সেখানেই আশপাশের স্বাদু জলের হ্রদগুলি (যার কোনও কোনওটির গভীরতা ৩০ মিটার পর্যন্ত) থেকে পলিস্তর এবং অ্যালগি-মস-লিচেনের নমুনা সংগ্রহ করবেন বছর চল্লিশের সুপ্রিয়। তিনি বলছেন, ‘‘আন্টার্কটিকায় পরিচিতদের সংগ্রহ করা নমুনা থেকে এর আগে যে পরীক্ষা করেছিলাম, তাতে ফার্নের মলিকিউলের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। ও দেশে যার উপস্থিতি প্রায় অসম্ভব। ধন্দ কাটাতে এ বার তাই ভারতী থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের হ্রদ থেকেও নমুনা সংগ্রহের চেষ্টা করব।’’

বেলেঘাটা থেকে আন্টার্কটিকা যাওয়ার এই পথটা অবশ্য খুব সহজ ছিল না সুপ্রিয়ের। ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের অধীনে ন্যাশনাল সেন্টার ফর পোলার অ্যান্ড ওশান রিসার্চ (এনসিপিওআর)-এর কাছে দু’বারের চেষ্টায় গবেষণার প্রস্তাব পাশ হয়েছিল তাঁর। এর পরে প্রশিক্ষণের পালা। দিল্লির এইমস-এ ডাক্তারি পরীক্ষার পরে গত অগস্টে উত্তরাখণ্ডের আউলি ও বদ্রীনাথে শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা দিতে হয় সুপ্রিয়কে। রক ক্লাইম্বিং, ট্রেকিং, ক্রিভাসে পড়ে গেলে আত্মরক্ষা এবং অন্যকে উদ্ধারের কায়দা— আইটিবিপি-র থেকে ওই দু’সপ্তাহে শিখতে হয়েছে সব কিছুই। তবে পেঙ্গুইনের দেশে সব কিছুই যে অনিশ্চিত, তা ভাল ভাবেই জানেন সুপ্রিয়। বলছেন, ‘‘আবহাওয়া সঙ্গে না থাকলে গবেষণা করাই অসম্ভব। ওখানে বৈজ্ঞানিক কাজের তুলনায় বেঁচে থাকাটাই অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের।’’

তবে ‘ফিল্ডে’ গিয়ে কোনও বাধাই আসলে বাধা নয়, জানাচ্ছেন ১৯৮৩ সালে আন্টার্কটিকায় ভারতের তৃতীয় বৈজ্ঞানিক অভিযানে যাওয়া গবেষক সুদীপ্তা সেনগুপ্ত। সুপ্রিয়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিদ্যার প্রাক্তন অধ্যাপক সুদীপ্তা বলছেন, ‘‘আমাদের সময়ে ওখানে থাকার জায়গাটুকুও ছিল না। সে তুলনায় ভারতী অনেক উন্নত। তাই অন্য কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সুপ্রিয় এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করবেন বলে আশা করছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher Research Presidency University Antarctica
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy