Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Science News

তিন ‘মহারাক্ষসে’র মধ্যে ধুন্ধুমার লড়াই ব্রহ্মাণ্ডে, এই প্রথম দেখল নাসা

তিনটি মহারাক্ষসই একে অন্যের খাবারদাবার কেড়ে নিচ্ছে। গিলে খাচ্ছে। খাবারদাবারের বখরা, বাঁটায়োরা নিয়েই সেই ধুন্ধুমার লড়াই। যা নিয়ে আপাতত  তোলপাড় হচ্ছে ব্রহ্মাণ্ড।

— ফাইল চিত্র

— ফাইল চিত্র

সুজয় চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৪:১০
Share: Save:

তিনটি ‘মহারাক্ষস’-এর মধ্যে ধুন্ধুমার লড়াই বেঁধেছে ব্রহ্মাণ্ডে। খাবারদাবার নিয়ে চলছে কাড়াকাড়ি, কামড়াকামড়ি! তুমুল লড়াই।

সেই লড়াইটা হয়ে উঠেছে আক্ষরিক অর্থেই, ত্রিপাক্ষিক। একটা মহারাক্ষস গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারছে আর একটা মহারাক্ষসের গায়ে। আর সেটা গিয়ে ধাক্কা মারছে আরও দু’টি মহারাক্ষসকে। তিনটি মহারাক্ষসই একে অন্যের খাবারদাবার কেড়ে নিচ্ছে। গিলে খাচ্ছে। খাবারদাবারের বখরা, বাঁটায়োরা নিয়েই সেই ধুন্ধুমার লড়াই। যা নিয়ে আপাতত তোলপাড় হচ্ছে ব্রহ্মাণ্ড।

পৃথিবী থেকে ১০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে এই অবাক করা ঘটনা দেখল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র স্লোয়ান ডিজিটাল স্কাই সার্ভে (এসডিএসএস) টেলিস্কোপ। গবেষণাপত্রটি বেরিয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’-এ।

সেই তিনটি মহারাক্ষস আদতে তিনটি দানবাকৃতি ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। যাদের কারও ব্যাসার্ধই ২২ কোটি কিলোমিটারের কম নয়। অনেক বেশি হওয়ারও জোরালো সম্ভাবনা।

গবেষকদলে রয়েছেন অনাবাসী ভারতীয়

গবেষকদলের অন্যতম সদস্য, ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্সে জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অনাবাসী ভারতীয় সবিতা সত্যপাল ‘আনন্দবাজার’কে জানিয়েছেন, ব্রহ্মাণ্ডের যে মুলুকে তিন মহারাক্ষসের মধ্যে ধুন্ধুমার লড়াই চলতে দেখা গিয়েছে, সেই ‘সিস্টেম’ বা এলাকার নাম- ‘এসডিএসএস জে০৮৪৯০৫+১১১৪৭.২’। সংক্ষেপে, সেই সিস্টেমটিকে বলা হয়, ‘এসডিএসএস জে০৮৪৯+১১১৪’।

কী ভাবে মহারাক্ষসদের লড়াই চলে ব্রহ্মাণ্ডে? দেখুন নাসার ভিডিয়ো

সবিতা বলেছেন, ‘‘দু’টি বা তিনটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি, লড়াই চট করে দেখা সম্ভব হয় না। কারণ, ওই ব্ল্যাক হোলগুলি থাকে বিশাল কোনও গ্যালাক্সির কেন্দ্রস্থলে। দু’টি গ্যালাস্কির মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হলেই একমাত্র দু’টি দানবাকৃতি ব্ল্যাক হোলের ধাকাধাক্কি দেখা যায়। আর তিনটি গ্যালাক্সির মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা তো আরও বিরল। তাই তিনটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের ধাক্কাধাক্কি এর আগে দেখা আর সম্ভব হয়নি।’’

মহারাক্ষসরা থাকে কোথায়? খায় কী?

ব্রহ্মাণ্ডে আমাদের ঠিকানা ‘মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি’র মতো ছোট, বড়, মাঝারি সব গ্যালাক্সিরই কেন্দ্রস্থলে থাকে একটি দানবাকৃতি ব্ল্যাক হোল। যাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়, ‘সুপারম্যাসিভ’ বা ‘জায়ান্ট’ ব্ল্যাক হোল। আমাদের গ্যালাক্সির সেই দানবাকৃতি ব্ল্যাক হোলটির নাম ‘স্যাজিটেরিয়াস-এ*’। যা রয়েছে আমাদের থেকে প্রায় ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। আর তার ব্যাসার্ধটা খুব কম নয়। ২২ কোটি কিলোমিটার।

লড়াইটা যে ভাবে ধরা পড়েছে নাসার টেলিস্কোপের চোখে। নীচে, লড়ছে দু’টি মহারাক্ষস, উপরে আরও একটি!

আমরা জানি, কোনও গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা সেই দানবাকৃতি ব্ল্যাক হোলটি তার কাছে চলে আসা গ্যাস, ধুলোবালির মেঘ, তারা, গ্রহ, উপগ্রহ সব কিছুই গপগপ করে গিলে খায়।

কার খাবার? খাবেটা কে?

সবিতা জানিয়েছেন, এই নিয়েই ধুন্ধুমার লড়াই চলছে তিনটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ওই তিনটি মহারাক্ষস বা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের মধ্যে।

সবিতার কথায়, ‘‘আমরা এও দেখেছি, দু’টি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির চেয়েও তিনটি ব্ল্যাক হোলের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনার গতি অনেকটাই বেশি। তা অনেক দ্রুত হয়। বলতে পারেন, খাবারদাবার নিয়ে কামড়াকামড়িটা একবারে রণক্ষেত্র বাঁধিয়ে দেয় ব্রহ্মাণ্ডে।’’

ছবি: নাসা

ভিডিয়ো: গর্ডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার, নাসা

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy