চন্দ্রযান-২। ছবি- ইসরোর ওয়েবসাইট।
সেটা ছিল ২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর। সেই প্রথম চাঁদের পাড়ায় 'পা' দিয়েছিল ইসরোর মহাকাশযান। চাঁদ-মুলুকে সোমবার ঠিক দশ বছর পূর্ণ হল 'চন্দ্রযান-১'-এর।
একটি রোভার আর একটি ল্যান্ডার নিয়ে এই বছরেই চাঁদ-মুলুকে পাড়ি জমানোর কথা ছিল 'চন্দ্রযান-২'-এর। হয়নি। আগামী জানুয়ারিতেই রওনা হবে 'চন্দ্রযান-২'।
উতক্ষেপণের ১৭ দিন পরে চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে 'চন্দ্রযান-১' কিন্তু প্রথম বছরেই চমকে দিয়েছিল। ২০০৯ সালে ইসরোর পাঠানো ওই মহাকাশযানই প্রথম চাঁদে জলের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে পেরেছিল। গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার পর অবশ্য ওই বছরের অগস্টেই চাঁদের পাড়ায় 'নিরুদ্দেশ' হয়ে গিয়েছিল 'চন্দ্রযান-১'। অনেক দিন পর তাকে খুঁজে বের করেছে নাসা।
চাঁদের পাড়ায় 'চন্দ্রযান-১'-এর 'পা' রাখার এতগুলি বছর পর এ বার যে প্রশ্নটা উঠছে, তা হল, চাঁদ-মুলুকে দ্বিতীয় মহাকাশযানটিকে পাঠাতে কেন দশ বছরেরও বেশি সময় লেগে গেল ইসরোর?
আর বড়জোর দশ বছর আয়ু আছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের। তার পরেই ২০২৮/'২৯ সাল নাগাদ তার কাজ শেষ হয়ে গেলে মহাকাশ স্টেশনকে নামিয়ে এনে ফেলে দেওয়া হবে প্রশান্ত মহাসাগরে। অথচ, এখনও কেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এক জন ভারতীয়কেও পাঠাতে পারল না ৫০ বছর পেরিয়ে যাওয়া ইসরো?
আরও পড়ুন- চিন গড়ল বিশ্বের দীর্ঘতম সমু্দ্র সেতু, এর সম্পর্কে তথ্যগুলি জানতেন?
আরও পড়ুন- বিদ্যুত খরচ কমাতে কৃত্রিম চাঁদ বানাচ্ছে চিন!
এগুলি শুধুই সমালোচনার জন্য সমালোচনা নয়। ইসরোর তুলনায় অনেক অনেক পর আক্ষরিক অর্থে, মহাকাশে নজর দিয়েছে চিনের মহাকাশ সংস্থা। অথচ, এই ক'বছরেই মহাকাশে মানুষ পাঠিয়ে দিতে পেরেছে চিন। যা ভারত এখনও পারেনি। এ বার লাল কেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন, আর চার বছর পর, ২০২২-এ মহাকাশে মানুষ পাঠাবে ভারত। তার পর তড়িঘড়ি কমিটি গড়েছে ইসরো। শুরু হয়েছে তোড়জোড়-প্রস্তুতি। ঘোষণা করেছে, তিন জন ভারতীয়কে পাঠানো হবে মহাকাশে। তাদের মধ্যে থাকবেন এক বা দু'জন মহিলা। হালে ভারত সফরে এসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মহাকাশ গবেষণায় দিল্লিকে সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে চুক্তিও করেছেন। ঘোষণা করে গিয়েছেন, ভারত চাইলে রুশ রকেটের পিঠে চেপে রুশ উতক্ষেপণ স্থল থেকেই মহাকাশে ভারতীয় নভশ্চর পাঠানো যাবে।
প্রশ্ন উঠছে, কেন 'মঙ্গলযান' পাঠানো ও 'মঙ্গলযান-২' পাঠানোর প্রস্তুতি শুরুর পরেও এই ভাবে বিদেশি সাহায্য নিয়ে এগোনোর প্রস্তাবকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না?
কেউ কেউ বলছেন, টাকার অভাব। কিন্তু ইসরোর অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীদের অনেকেই বলছেন, টাকা নয়, আসল অভাবটা প্রযুক্তির। এ দেশের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা গোঁ ধরে বসেছিলেন, তাঁরাই প্রযুক্তির উদ্ভাবন করবেন। সেই প্রযুক্তিই বিশ্ব-সেরা হবে বলে তাঁদের ধারণা। তাই তাঁরা আউটসোর্সিং-এর ভাবনাটাকে বরাবরই দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছেন।
ইসরোর শ্রীহরিকোটা লঞ্চ স্টেশনের প্রাক্তন অধিকর্তা এমওয়াইএস প্রসাদের কথায়, "চিন বছরে এখন ৩০/৪০টি উপগ্রহ পাঠায় মহাকাশে। আর ভারত সেখানে পাঠায় মাত্র তিনটি বা চারটি। চিন মহাকাশে মানুষ পাঠিয়েছে আগেই। আর ভারতের তা পাঠাতে সময় লাগবে আরও চারটি বছর! তা ছাড়াও, মহাকাশে দু'টি মহাকাশযানের জোড়া লাগানোর (যাকে অরবিটাল ডকিং বলা হয়) প্রযুক্তি এখনও ভারতের হাতে আসেনি। আসেনি মহাকাশযানে নতুন ভাবে জ্বালানি ভরার প্রযুক্তি (যাকে অরবিটাল রি-ফুয়েলিং)-ও।"
ফলে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণার দৌড়ে এখনও ইসরো কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে বলেই মনে করছেন ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীদের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy