Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Science News

ফসল চাঁদের মাটিতে? রহস্যের জট খোলেনি, বলছেন নাসার বিজ্ঞানী

গৌতম চট্টোপাধ্যায় (লেখক পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী। ‘ইউরোপা মিশন’-এর টিম লিডার।)চাঁদের হাড়জমানো তাপমাত্রায় (শূন্যের ১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) সেই তুলোর বীজ পরে মরেও গিয়েছে। শুধুই হাড়জমানো নয়, গা ঝলসানো তাপমাত্রাও রয়েছে (১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) চাঁদে।

চাঁদের মাটিতে নামা চিনা ল্যান্ডারে বীজ ফেটে বেরনো রাশি রাশি তুলো।

চাঁদের মাটিতে নামা চিনা ল্যান্ডারে বীজ ফেটে বেরনো রাশি রাশি তুলো।

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ১৩:৩২
Share: Save:

সত্যি-সত্যিই কি ফসল ফলানো যাবে চাঁদে? জবাবটা এখনও মেলেনি। হ্যাঁ, চিনা ল্যান্ডারে বীজ ফেটে রাশি রাশি তুলো বেরিয়ে আসার পরেও।

গোটা বিশ্বের মতো খবরটা আমাকেও চমকে দিয়েছে। তবে চাঁদে ফসল ফলানো সম্ভব হবে কি না, সেই রহস্যের জট কিন্তু এখনও খোলেনি। কারণ, তা চাঁদের মাটিতে হয়নি। হয়েছে চাঁদের মাটিতে নামা চিনা ল্যান্ডারের মধ্যে থাকা একটি বিশেষ ধরনের ক্যাপসুলে। প্রাণের বিকাশের জন্য যে ক্যাপসুল ‘গবেষণাগারে’ কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা আছে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা, পরিবেশ। আর সেটা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পৃথিবী থেকে।

চাঁদের হাড়জমানো তাপমাত্রায় (শূন্যের ১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) সেই তুলোর বীজ পরে মরেও গিয়েছে। শুধুই হাড়জমানো নয়, গা ঝলসানো তাপমাত্রাও রয়েছে (১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) চাঁদে। রয়েছে বিষাক্ত বিকিরণের লাগাতার ঝাপটা। প্রায় শূন্য অভিকর্ষ বল। তা ছাড়াও রয়েছে মহাকাশযান ও ল্যান্ডারের অবিরত ভাইব্রেশন বা কম্পন। তার ফলে, চাঁদে ফসল ফলানোর স্বপ্ন সফল করতে গেলে আরও পথ হাঁটতে হবে আমাদের। চিনকেও।

চাঁদের মাটিতে নামা চিনা ল্যান্ডার ‘চাঙ্গে-৪’। যার নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইউতু-২’। ছবি ‘শিনহুয়া’র সৌজন্যে।

৫০ বছর আগে, ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই চাঁদের মাটিতে দাঁড়িয়ে মার্কিন ‘অ্যাপোলো-১১’ অভিযানের মহাকাশচারী নিল আর্মস্ট্রংকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘দ্যাটস ওয়ান স্মল স্টেপ ফর ম্যান, ওয়ান জায়ান্ট লিপ ফর ম্যানকাইন্ড। (এক জনের ছোট্ট একটা পদক্ষেপ, সভ্যতার একটা বড় উল্লফন।)’’

চাঁদের ‘আঁধার দুনিয়া’ বলে কিছু হয় না...

আমি নিজে বৃহস্পতির চাঁদ ‘ইউরোপা’ নিয়ে কাজ করলেও এই সৌরমণ্ডলের যে কোনও গ্রহের চাঁদের খবরাখবরই রাখার চেষ্টা করি। সেই প্রেক্ষিতেই বলছি, আমাদের চাঁদের ‘ডার্ক সাইড’ বা ‘আঁধার দুনিয়া’ বলে কিছু হয় না। তার সব দিকেই সূর্যের আলো পড়ে। তবে চাঁদের উত্তর দিকটাকে আমরা দেখতে পাই, কারণ পৃথিবী তার জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে চাঁদের ওই দিকটাকেই তার সঙ্গে বেঁধে রেখেছে। তাই ওই দিকটা সব সময় আমাদের দিকে থাকে। আর তার দক্ষিণ দিকটাকে দেখতে পাই না, কারণ, সেই দিকটা কখনওই আমাদের দেখা দেয় না। সেই অর্থে, চাঁদের দক্ষিণ দিকটাকে আমরা ‘ডার্ক সাইড’ বলি। চাঁদের সঙ্গে পৃথিবী ‘টাইডালি লক্‌ড’ বলেই এটা হয়।

কী ভাবে বীজ ফেটে বেরিয়ে এল তুলো, দেখুন ভিডিয়ো

‘ট্রাপিস্ট’-এর ৭টি গ্রহের সঙ্গে অমিল যেখানে চাঁদের

এটা যে শুধুই আমাদের চাঁদের বৈশিষ্ট্য, তা নয়। এখনও পর্যন্ত যত ভিন গ্রহের হদিশ মিলেছে, তার বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেনি। আমাদের থেকে মাত্র ৪০ আলোকবর্ষ দূরে থাকা ‘ট্রাপিস্ট-১’ নক্ষত্রমণ্ডলের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। ওই নক্ষত্রমণ্ডলের তারাটি আমাদের সূর্যের মতো নয়। সেটা আদতে একটা বামন নক্ষত্র বা ডোয়ার্ফ স্টার। চেহারায় যা আমাদের সূর্যের ১০ ভাগ। আমাদের সূর্যের চেয়ে অনেক ঠান্ডাও। অন্তত আড়াই ভাগ। তাই তাকে বলে ‘আলট্রা-কুল’।

আরও পড়ুন- ফসল ফলানো যাবে চাঁদে! বীজ ফেটে বেরিয়ে এল একরাশ তুলো​

আরও পড়ুন- চাঁদের ‘আঁধার দুনিয়া’য় পা ফেলল চিনের যান​

ওই নক্ষত্রমণ্ডলে রয়েছে প্রায় আমাদের পৃথিবীর মতো সাতটি গ্রহ। যার কাছেরটি ট্রাপিস্ট-১ নক্ষত্রটিকে প্রদক্ষিণ করে দেড় দিনে, আর সবচেয়ে দূরেরটির তা করতে সময় লাগে ২০ দিন। ওই সাতটি ভিন গ্রহই তার নক্ষত্রটির সঙ্গে রয়েছে টাইডালি লক্ড হয়ে। কিন্তু তারা কেউই আমাদের চাঁদের মতো টাইডালি লক্‌ড নয়। তাদের প্রত্যেকেরই একটা দিকে ট্রাপিস্ট-১ নক্ষত্রের আলো পড়ে। অন্য দিকে তা একেবারেই পড়ে না। ফলে, যে দিকে আলো পড়ে, সেখানে জলের তরল অবস্থায় থাকার সম্ভাবনা জোরালো হয়ে ওঠে। আর যে দিকটা রয়েছে অন্ধকারে, সেই দিকে তরল জলের হদিশ মেলার সম্ভাবনা একেবারেই থাকে না। কারণ, সেই দিকে সূর্যের আলোই পড়ে না।

চাঁদের না-দেখতে পাওয়া দিকে অভিযান হয়নি কেন এত দিন?

না হওয়ার কারণ, ওই দিকে কোনও মহাকাশযান (ল্যান্ডার বা রোভার) পাঠানো হলে তার সঙ্গে পৃথিবীর গ্রাউন্ড কন্ট্রোল রুম থেকে যোগাযোগ রাখা বা রেখে চলাটা একেবারেই সহজ কাজ নয়। যে হেতু সেই দিকটাকে পৃথিবী থেকে দেখা যাচ্ছে না। ফলে, পৃথিবী থেকে সরাসরি চাঁদের না-দেখা দিকে নামা ল্যান্ডার/রোভারকে কম্যান্ড পাঠানো যায় না। তাদের পাঠানো তথ্য, সিগন্যালও সরাসরি পাওয়া সম্ভব নয় গ্রাউন্ড কন্ট্রোলে।

চিন তার জন্য চাঁদের কক্ষপথে একটা উপগ্রহ পাঠিয়েছে। যেটা সব সময় নজর রাখছে চাঁদের মাটিতে নামা ল্যান্ডার ‘চাঙ্গে-৪’-এর উপর। তাদের মধ্যে কম্যান্ড ও সিগন্যাল চালাচালি হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। সেই উপগ্রহের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে গ্রাউন্ড কন্ট্রোল, যে হেতু তাকে দেখা যাচ্ছে।

নাসাও এটাই করেছে মঙ্গলে

‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলে ঠিক এই কাজটাই করেছে নাসা। যে হেতু মঙ্গলের পিঠটাকে পৃথিবী থেকে সরাসরি দেখা যায় না। কক্ষপথে প্রদক্ষিণের সময় মঙ্গলের মাটিতে নামা ল্যান্ডার, রোভারের সঙ্গে সেই উপগ্রহগুলির চোখাচোখি হয়ে গেলে কম্যান্ড ও সিগন্যাল চালাচালি হয়।

(লেখকের নিজস্ব মতামত, নাসার নয়)

ছবি ও ভিডিয়ো ‘শিনহুয়া’র সৌজন্যে

অন্য বিষয়গুলি:

Moon ISRO Chang’e-4 চাঙ্গে-৪
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy