গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
গুজরাতের কোনও মহিলাকে যদি তাঁর স্বামী ছেড়ে চলে যান, সেই মহিলা যদি হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে আর্জি জানান, ‘‘আমার স্বামীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করুন’’— তা হলে রবিশঙ্কর প্রসাদ কি সেটা করবেন?
লোকসভায় তিন তালাক বিল নিয়ে বিতর্কে কংগ্রেসের সুস্মিতা দেব প্রশ্নটা তুললেন। কারও নাম করেননি। রবিশঙ্করও জবাব দেননি। কিন্তু সবাই বুঝে গেলেন, ইঙ্গিত কোন দিকে।
আরও সরাসরি ইঙ্গিত করেছেন আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। তাৎক্ষণিক তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধের তকমা দিয়ে তিন বছর পর্যন্ত শাস্তির নিদান-সহ বিল এনেছে মোদী সরকার। স্ত্রী-দের ত্যাগ করাকেও সেই বিলে অপরাধের তালিকায় ফেলায় দাবি তুলেছেন ওয়েইসি। সঙ্গে যুক্তি, ‘‘সম্মাননীয়া ভাবীজি গুজরাত থেকে দিল্লিতে এসে থাকতে চাইছেন।’’
ওয়েইসি-ও নাম বলেননি। কিন্তু সকলেই বুঝলেন, ইঙ্গিত কোন দিকে!
নরেন্দ্র মোদী আজ লোকসভায় ছিলেন না। যশোদাবেনের সঙ্গে বিয়ের পরেই তিনি গৃহত্যাগ করেছিলেন। তবে ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামায় যশোদাবেনের নাম ‘স্ত্রী’ বলে লিখেছিলেন। মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে যশোদাবেন বলেছিলেন, ডাক পেলে তিনি রেস কোর্স রোডে এসে থাকতে রাজি।
সুস্মিতা-ওয়েইসিদের খোঁচায় কান দেননি আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। লোকসভায় আজ তিন তালাক বিল পাশও হয়ে গিয়েছে। বিজেপির সংখ্যালঘু মুখ মুখতার আব্বাস নকভির সঙ্গে স্মৃতি ইরানি, মীনাক্ষি লেখিরা-রা বিলের সমর্থনে বক্তৃতা দিয়েছেন। ‘ভারত মাতা কি জয়’ ধ্বনি উঠেছে। তবে বিল রাজ্যসভায় পাশ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। লোকসভায় এনডিএ-র আসন সংখ্যা তিনশোর বেশি। বিজেপি ২৭০-এর আশেপাশে। অথচ হুইপ সত্ত্বেও বিলের পক্ষে ভোট পড়ে মাত্র ২৪৫টি।
সুপ্রিম কোর্ট তাৎক্ষণিক তিন তালাক বা তালাক-এ-বিদ্দতকে ‘অসাংবিধানিক’ ও ‘বেআইনি’ বলার পরেই একে ফৌজদারি অপরাধের তকমা দিয়ে বিল এনেছিল মোদী সরকার। লোকসভায় সেই বিল পাশ হলেও রাজ্যসভায় আটকে যায়। কেন্দ্র এর পর অধ্যাদেশ জারি করে।
বিরোধীদের আপত্তি শুনে বেশ কিছু সংশোধন-সহ নতুন বিল এনেছে কেন্দ্র। বিরোধীদের মূল আপত্তি ছিল, ঘরোয়া বিবাদকে কেন ফৌজদারি অপরাধের তকমা দেওয়া হবে? সেই আপত্তি মেনেই, নতুন বিলে অভিযুক্ত মুসলিম পুরুষদের ম্যাজিস্ট্রেটের থেকে জামিন পাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, স্ত্রী চাইলে মামলা তুলে নিতে পারবেন। আইনের অপব্যবহার রুখতে একমাত্র স্ত্রী বা তাঁর রক্তের সম্পর্কের কোনও আত্মীয়ই অভিযোগ জানাতে পারবেন। আগের বিলে জামিনের কোনও ব্যবস্থা ছিল না।
তার পরেও লোকসভায় আজ কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম থেকে সমস্ত বিরোধী দাবি তোলে, বিলটিকে যৌথ সংসদীয় সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক। সরকার তা না-মানায় কংগ্রেস, এডিএমকে, এসপি-সহ বিরোধীরা ওয়াক-আউট করে। বিরোধীরা ঠিক করেছে, রাজ্যসভাতেও একই দাবি তুলে বিল আটকে দেওয়া হবে। সেখানে বিরোধীদের সংখ্যাই বেশি। বস্তুত, আজই সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে রণকৌশল ঠিক করেছেন সনিয়া গাঁধী।
আইনমন্ত্রীর কথায়, ‘‘বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন, মুসলিম পুরুষ জেলে গেলে খোরপোশ কে দেবেন? আমরা বলছি, অপরাধ করার কী দরকার?’’ তাঁর বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও আইনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। কিন্তু ওই রায়ের পরেও তিন তালাক হচ্ছে। গত কালও হয়েছে। খুন-ধর্ষণও বেআইনি। তা বলে কি আইনের দরকার নেই?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy