Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

‘রোটি’ ও ‘রাষ্ট্রবাদ’-এর লড়াইয়ে দেশভক্তির জিগির তুলেও ঢাকা পড়েনি পেটের খিদে

দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফিরে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে জম্মু-কাশ্মীরে বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করেছিলেন। আর সেই জাতীয়তাবাদে ভর করেই বিধানসভা ভোটের লড়াইয়ে নেমেছিল বিজেপি।

নরেন্দ্র মোদী।—ছবি পিটিআই।

নরেন্দ্র মোদী।—ছবি পিটিআই।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৪৩
Share: Save:

লড়াইটা ছিল ‘রোটি’ ও ‘রাষ্ট্রবাদ’-এর মধ্যে। মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার ফলাফল বোঝাল, দেশভক্তির জিগির তুলে রুটিরুজির দুশ্চিন্তা পুরোপুরি ঢাকা যায়নি। অর্থনীতির সমস্যাকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করা যায়নি রাজনীতির লড়াই থেকে।

দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফিরে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে জম্মু-কাশ্মীরে বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করেছিলেন। আর সেই জাতীয়তাবাদে ভর করেই বিধানসভা ভোটের লড়াইয়ে নেমেছিল বিজেপি। কিন্তু চ্যালেঞ্জ ছিল অর্থনীতির ঝিমুনি, গাড়ি শিল্পের মন্দা, লক্ষ লক্ষ মানুষের চাকরি হারানো নিয়ে শিল্পোদ্যোগী, ব্যবসায়ী, শ্রমিক-চাষিদের ক্ষোভ। মহারাষ্ট্র-হরিয়ানা, দু’টিই শিল্পপ্রধান রাজ্য। হরিয়ানার গুড়গাঁও-মানেসরে গাড়ি ও অনুসারী শিল্পে বহু শ্রমিক কাজ হারান।

আজ ভোটের ফল অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় ফিরছে বিজেপি। হরিয়ানাতেও বিজেপি সরকার ফের গড়তে পারবে বলে আশাবাদী। কিন্তু দুই রাজ্যেই বিজেপির প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল হয়নি। বিজেপির আসন বা ভোটের ভাগ লোকসভা বা পাঁচ বছর আগের বিধানসভার ভোটের তুলনায় কমেছে। অর্থনীতির সঙ্কট যে তাতে ছাপ ফেলেছে, তার ইঙ্গিত— শহরের তুলনায় বিজেপি গ্রামে খারাপ ফল করেছে। দুই রাজ্যেই শহর ও গ্রামে বিজেপির ফলাফলের মধ্যে ফারাক স্পষ্ট। হরিয়ানার ফল বলছে, গ্রামে বিজেপির ভোটে ভাগ বসিয়েছে দুষ্মন্ত চৌটালার জননায়ক জনতা পার্টি। মহারাষ্ট্রে বিজেপির ফল তুলনায় ভাল হলেও গ্রাম ও শহরের ফারাক চিন্তায় ফেলেছে বিজেপি নেতাদের।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণি এখনও ‘মোদী-ম্যাজিক’-এ বিশ্বাসী। কিন্তু গ্রামে আর্থিক সঙ্কট বড় হয়ে উঠেছে। গ্রামের মানুষের যে আয় কমেছে, তা বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া থেকেই স্পষ্ট ছিল। তার পরে শহর থেকে ঠিকা শ্রমিকেরা কাজ হারিয়ে খালি হাতে গ্রামে ফিরছেন। ১০০ দিনের কাজ-ই একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে। মহারাষ্ট্রে বিজেপি সরকারের আমলে গত চার বছরে দিনে গড়ে ৮ জন চাষি আত্মহত্যা করেন।

বন্যা-খরা, দুই ধাক্কাই সামলাতে হয়েছিল মহারাষ্ট্রের গ্রামের মানুষকে। আর হরিয়ানায় বিজেপি জমানায় বেকারত্বের হার দেশে সর্বোচ্চ, ২০ শতাংশ ছাপিয়ে গিয়েছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এই ফলাফলের ভাল দিক— মোদী সরকার অর্থনীতির হাল শোধরানোয় আরও বেশি নজর দিতে পারে।

মোদী সরকার বা বিজেপি নেতৃত্ব একে প্রকাশ্যে ধাক্কা বলে স্বীকার করেননি। কিন্তু মোদী সরকারের মন্ত্রী, এনডিএ-র শরিক দলের নেতা, মহারাষ্ট্রের রামদাস আটওয়ালে বলেন, ‘‘অর্থনীতিতে মন্দা, চাকরির অভাবের সমস্যার জন্য এনডিএ-র ফল যতটা ভাল হওয়ার কথা ছিল, ততটা হয়নি।’’ কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার দাবি, ‘‘এটা বিজেপির নৈতিক পরাজয়। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ সহ বিজেপি নেতৃত্ব বাস্তব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।’’

মহারাষ্ট্রের মুম্বই ২৬/১১-র মতো সন্ত্রাসবাদী হামলার সাক্ষী। হরিয়ানায় ঘরে ঘরে ফৌজি। ভোটগ্রহণের ঠিক আগের দিন পাক হামলার জবাবে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি শিবির লক্ষ্য করে ভারতীয় সেনা কামান দেগেছিল। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ ৩৭০ রদ, পাক-মদতে পুষ্ট সন্ত্রাস কড়া হাতে দমনের কথা প্রচার করেছিলেন। তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল মহারাষ্ট্র-হরিয়ানাতেও এনআরসি কার্যকর করা, সাভরকরকে ভারতরত্ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি।

কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, এ সব আর্থিক সঙ্কট থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা। ভোটের ফল বলছে, সে চেষ্টা হয়ে থাকলেও সফল হয়নি। স্বরাজ ইন্ডিয়া-র নেতা যোগেন্দ্র যাদবও ভোটের আগে আফশোস করেছিলেন, বিজেপি অর্থনীতিকে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে সমর্থ হয়েছে। কিন্তু আজ অন্তত ভোটের ফলে ইঙ্গিত অন্য। যা বুঝেই বোধহয় প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম আজ বলেছেন, ‘‘নিঃশব্দ দেশপ্রেম পেশিশক্তির জাতীয়তাবাদকে পরাজিত করবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Assembly Election 2019 Maharashtra Haryana BJP Nationalism Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy