Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

সেনার পাশে দাঁড়ান, সংসদকে বার্তা প্রধানমন্ত্রীর

সাংসদদের সেনার পিছনে দাঁড়িয়ে তাদের মনোবল বাড়ানোর উপরে জোর দেওয়া উচিত বলেই মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:১৬
Share: Save:

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা দ্রুত না কমলে আসন্ন শীতে যে ভারতীয় সেনা লাদাখ সীমান্তে থাকবে, তা আজ ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘কিছু দিন পরেই ওই এলাকায় তুষারপাত শুরু হয়ে যাবে। আমি আশা করছি গোটা দেশের মানুষ যে ওই সেনাদের পিছনে রয়েছেন সেই বার্তা সংসদের সব সদস্যের মাধ্যমে দেশের জওয়ানদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে।’’

বিজেপি নেতৃত্ব খুব ভাল করেই জানেন আজ থেকে শুরু হওয়া বাদল অধিবেশনে লাদাখের সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে সরকারকে। তাই আজ প্রধানমন্ত্রী গোড়াতেই সীমান্ত সমস্যা নিয়ে ঐক্যের বার্তা দিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের ধার ও ভার কমানোর কৌশল নিলেন বলে মনে করছেন রাজনীতিকেরা। সূত্রের মতে, সব ঠিক থাকলে আগামিকাল লাদাখের পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিতে পারেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

গত এপ্রিল-মে মাস থেকে উত্তপ্ত রয়েছে লাদাখ সীমান্ত। গত ছ’মাসে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার উপরে বেশ কিছু স্থানের দখল নিয়ে একাধিক বার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে দু’দেশ। সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন দু’দেশের সেনারা। ৪৫ বছর পরে গুলি চলেছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায়। পরিস্থিতি যে এখনও যথেষ্ট উত্তেজনাময় তা মেনে নিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। ভারত গোড়া থেকেই সীমান্ত পেরিয়ে চিন যে অনুপ্রবেশ করেছে সে কথা অস্বীকার করলেও, বিরোধীদের বক্তব্য লাদাখের একটি বিস্তীর্ণ অংশ গত ছ’মাসে চিনের দখলে চলে গিয়েছে। জমি দখল ঘিরে নরেন্দ্র মোদী বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করায় কূটনীতিক ও প্রতিরক্ষা স্তরে দর কষাকষির প্রশ্নে ভারতের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে বলেই মনে করেন রাহুল গাঁধী। লাদাখ প্রশ্নে সরকারের অবস্থান জানার জন্য আজ অধিবেশনের শুরু থেকেই একাধিক বার স্পিকার ওম বিড়লার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সরব হন কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী। জবাবে ওম বিড়লা এক সময়ে জানান, আগামিকাল বিষয় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেখানেই চিন নিয়ে লোকসভায় আলোচনার দিন ঠিক হবে। লোকসভায় উপস্থিত প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহও বলেন, ‘‘সরকার বিরোধীদের দাবি মেনে লাদাখ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।’’

সূত্রের মতে, সম্ভবত আগামিকালই এ নিয়ে বিবৃতি দিতে পারেন রাজনাথ। শাসক শিবির যে বিষয়টি নিয়ে কিছু লুকোতে চাইছে না সেই বার্তা দিতে সংসদের শুরুর সপ্তাহেই এ নিয়ে মুখ খোলার পক্ষপাতী বিজেপি নেতৃত্ব।

আরও পড়ুন: চিনা রেডারে মোদী-সনিয়া, মমতারাও?

তবে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের কাটাছেঁড়ার পরিবর্তে সাংসদদের সেনার পিছনে দাঁড়িয়ে তাদের মনোবল বাড়ানোর উপরে জোর দেওয়া উচিত বলেই মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘বর্তমান সময়ে সাংসদদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। বীর জওয়ানেরা সীমান্তে সমস্ত প্রতিকূলতা সহ্য করে সাহস দেখিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আর কিছু দিন পরেই সেখানে তুষারপাত শুরু হবে। মাতৃভূমি রক্ষার প্রশ্নে জওয়ানেরা বিশ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি আশা করব সংসদের সব সদস্য এক সুরে, এক ভাবে, এক ভাবনায় ও এক সঙ্কল্পে সেনাদের পাশে দাঁড়াবে। গোটা দেশ যে সেনা জওয়ানদের পিছনে রয়েছে সেই বার্তাই সংসদের সদস্যেরা দেবেন বলে আশা করছি।’’ রাজনীতির অনেকের মতে, লাদাখে সেনা মৃত্যু, চিনের আগ্রাসন নীতির কারণে জমি হাতছাড়া হওয়া, সীমান্তে চিনের ধারাবাহিক ভাবে পরিকাঠামো গড়ে তোলার মতো একাধিক বিষয় নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের সম্মুখীন হতে হবে শাসক শিবিরকে। তাই গোড়াতেই লাদাখ প্রশ্নে সেনার পিছনে দল নির্বিশেষে দাঁড়ানোর কথা বলে আসলে বিরোধীদের আক্রমণ ভোঁতা করে দেওয়ার কৌশল নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, এই মুহূর্তে লাদাখ নিয়ে শাসক-বিরোধীদের মধ্যে পারস্পরিক বিবাদের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন এক সুরে সেনাদের পাশে দাঁড়ানো। যাতে সেনাদের মনোবল অটুট থাকে। কারণ গোটা দেশ যে সেনাদের পিছনে রয়েছে সেই বার্তা তখনই দেওয়া সম্ভব যখন গোটা সংসদ এ নিয়ে সরকারের পাশে এককাট্টা হয়ে দাঁড়াবে।

প্রতিরক্ষা সূত্রের মতে, লাদাখে উত্তেজনা থাকলেও, আজও পরিস্থিতি মোটের উপরে শান্ত ছিল। তবে দু’পক্ষ গত কয়েক দিনে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনার সংখ্যা বাড়িয়েছে। সূত্রের মতে, সীমান্তে পরিকাঠামোগত উন্নতির কাজ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চালিয়ে যাচ্ছে চিন। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় মোতায়েন সেনা ও ফরোয়ার্ড অবস্থানে থাকা সেনা চৌকির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল বসানোর কাজ শুরু করেছে চিন সেনা। মূলত প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তে ওই সংক্রান্ত নির্মাণ কাজ চোখে পড়েছে ভারতীয় সেনার।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi India Army Ladakh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy