Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

‘নারেগা’-যোদ্ধার লড়াই ‘চক্রান্তের’ বিরুদ্ধেও

অভিযোগ, তাঁর নাম করে কে বা কারা প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে হুমকি মেল পাঠাচ্ছে। তাঁর নাম জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নানা অপরাধের মামলায়।

সচেতনতা: প্রচারে সঞ্জয়। ছবি সৌজন্য: এসপিএসএস।

সচেতনতা: প্রচারে সঞ্জয়। ছবি সৌজন্য: এসপিএসএস।

জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩৯
Share: Save:

বিহারে ‘নারেগা-যুদ্ধে’র অন্যতম মুখ তিনি। একশো দিনের কাজ প্রকল্পে দুর্নীতি ধরিয়ে দিয়ে প্রশাসনকে বাধ্য করেছিলেন নড়ে বসতে। তাঁকে নিয়ে লেখালিখি হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। সেই সঞ্জয় সহনী এখন উদ্বেগের প্রহর গুনছেন। অভিযোগ, তাঁর নাম করে কে বা কারা প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে হুমকি মেল পাঠাচ্ছে। তাঁর নাম জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নানা অপরাধের মামলায়।

আগামী ১৪ ডিসেম্বর মুজফ্ফরপুরে জেলাশাসকের অফিসের সামনে এক প্রতিবাদ-ধর্নায় বসবেন সঞ্জয়। সঙ্গে থাকবেন অধ্যাপক জঁ দ্রেজ, তথ্য অধিকার আন্দোলনের কর্মী নিখিল দে-সহ দেশের বহু সমাজকর্মী। সঞ্জয়ের আন্দোলন স্থানীয় প্রশাসন এবং প্রভাবশালীদের স্বার্থে ঘা দিচ্ছে বলেই তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত সাজানো হচ্ছে বলে এঁদের দাবি।

সঞ্জয়ের লড়াইয়ের কাহিনি প্রায় গল্পের মতো। ৩৭ বছরের যুবক নিজেই জানালেন, ‘‘দরিদ্র পরিবারের সন্তান আমি। সপ্তম শ্রেণির পর আর লেখাপড়া চালাতে পারিনি। ইলেকট্রিকের কাজ শিখে নিয়ে চলে গিয়েছিলাম দিল্লি।’’ ২০১১ সালে এ হেন সঞ্জয়ের পরিচয় হল ইন্টারনেট-এর সঙ্গে। এটা সেটা ঘাঁটতে ঘাঁটতেই বেরিয়ে এল কেউটে। সরকারি ওয়েবসাইটে দেখলেন, তাঁর গ্রাম রতনৌলিতে অনেকেই একশো দিনের কাজ করেছেন এবং তার টাকাও পেয়ে গিয়েছেন বলে লেখা আছে। অথচ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ তখনও একশো দিনের কাজের কথা শোনেনইনি। তা হলে টাকাগুলো গেল কোথায়?

সঞ্জয় ‘নারেগা’ ওয়েবসাইট দেখে সংশ্লিষ্ট মহলে ফোন করা শুরু করলেন। একে তাকে বলতে বলতে সঞ্জয়ের বক্তব্য নিখিল দে-র কানে পৌঁছয়। সঞ্জয়ের সংগঠনের-এর ওয়েবসাইট বলছে, নিখিলই তাঁকে বিহারের গ্রামোন্নয়ন দফতরের তৎকালীন মুখ্যসচিব সন্তোষ ম্যাথিউ-এর কাছে নিয়ে যান। সন্তোষ অডিট করাতেই বেরিয়ে পড়ে দুর্নীতির চক্র। জীবনটা পাল্টে যায় সঞ্জয়েরও। গ্রামে গ্রামে ‘নারেগা’ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোই হয়ে ওঠে তাঁর বীজমন্ত্র। কী ভাবে কাজ চাইতে হবে, কী ভাবে টাকা বুঝে নিতে হবে, কোথায় রাস্তা-কোথায় পুকুর দরকার, গণবণ্টন ব্যবস্থা ঠিক মতো কাজ করছে কি না, ঘুরে ঘুরে মানুষকে বোঝানোর জন্য একটা বাহিনী গড়ে তুললেন সঞ্জয়। গ্রাম থেকে ব্লক, ব্লক থেকে মহকুমা, সেখান থেকে মুজফ্ফরপুর জেলা জুড়ে এখন তাঁর কাজ। সঞ্জয়ের ‘সমাজ পরিবর্তন, শক্তি সংগঠন’-এর সদস্য সংখ্যা ১০ হাজার, যার মধ্যে বড় অংশই দলিত মহিলা।

কিন্তু সংগঠনের জোর যত বাড়ছে, সঞ্জয়কে ততই নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। তাঁর যাত্রাপথটি কোনও দিনই মসৃণ ছিল না। এর আগে সঞ্জয়ের এক সহযোগী খুন পর্যন্ত হয়েছেন। এখন স্বয়ং সঞ্জয়ের নামে একটি খুনের মামলা-সহ মোট ৬টি মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দায়ের করা হয়েছে বলে অভিযোগ। গত ৬ সেপ্টেম্বর মনিয়ারি থানায় দায়ের হওয়া ওই ‘ভুয়ো’এফআইআরের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বিহার ডিজিপি-কে চিঠি লিখেছেন দ্রেজ-নিখিল-অরুণা রায়রা। কিন্তু মামলাটি প্রত্যাহৃত হয়নি।

শুধু এ-ই নয়, ১৫ নভেম্বর সঞ্জয়ের মেল হ্যাক করে নীতীশ কুমারের দফতরে নীতীশ এবং নরেন্দ্র মোদীর নামে হুমকি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও অভিযোগ। সেই চিঠি পুলিশের হাতে এসেছে। সঞ্জয়ের বক্তব্য, ‘‘প্রথমত আমার মোবাইল চুরি হয়েছে। সেখান থেকেই হোক বা আমার মেল হ্যাক করেই হোক ভুয়ো চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওটা যে ভুয়ো চিঠি, সে কথা পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু নাগাড়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েই চলেছে।’’ সঞ্জয়ের আশঙ্কা, এর পিছনে রাজনৈতিক মদত রয়েছে। আন্দোলনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাজেন্দ্রন নারায়ণন বললেন, ‘‘সঞ্জয়ের আন্দোলন আমলাতন্ত্র এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ক্ষমতাধারীদের স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। সেটাকে ভাঙতেই ভুয়ো মামলা সাজানো হচ্ছে। এর বিরুদ্ধেই ১৪ই প্রতিবাদে শামিল হচ্ছি আমরা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

sanjay sahni Conspiracy MGNREGA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE