সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর সঙ্গে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। ফাইল চিত্র।
জল্পনা সত্যি করে দল ছাড়লেন কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। মঙ্গলবারই তিনি ইস্তফাপত্র দেন দলের অন্তর্বর্তী সভাপতি সনিয়া গাঁধীর কাছে। চিঠিতে জ্যোতিরাদিত্য লেখেন, “গত ১৮ বছর ধরে কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে ছিলাম। এখন সময় এসেছে এগিয়ে যাওয়ার। দল থেকে ইস্তফা দিচ্ছি।” পরে তিনি বলেন, “রাজ্যে এবং দেশের মানুষের সেবা করব। শুরু থেকেই এই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়েছি। তা বজায় রেখেই চলব।” দলের মধ্যে থেকে এ কাজ করা সম্ভব হত না বলেও জানিয়েছেন জ্যোতিরাদিত্য।
পাল্টা কংগ্রেসের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, দলবিরোধী কাজের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে। দলের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল এ প্রসঙ্গে বলেন, “জ্যোতিরাদিত্যকে দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন সনিয়া গাঁধী।”
ইস্তফা প্রসঙ্গে কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, “জ্যোতিরাদিত্যকে অনেক সম্মান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজ এটা স্পষ্ট যে উনি স্বার্থপর।” তাঁর মতে, কংগ্রেসে ইনি রাজার সম্মান পেলেও বিজেপিতে প্রজার মতোই থাকতে হবে। তবে জ্যোতিরাদিত্যর মতো এক জন নেতাকে হারানো দলের পক্ষে যথেষ্ট ক্ষতিকর বলেও মন্তব্য করেন অধীর। অন্য এক কংগ্রেস নেতা কুলদীপ বিষ্ণোই বলেন, “দলের স্তম্ভ ছিলেন জ্যোতিরাদিত্য। দলীয় নেতৃত্বের উচিত ছিল তাঁকে বুঝিয়ে দলে টিকিয়ে রাখা। জ্যোতিরাদিত্যর মতো আরও অনেক নেতা আছেন যাঁরা দলের নেতৃত্বের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ এবং অসন্তুষ্ট।”
আরও পড়ুন: অমিতের চালেই জ্যোতিরাদিত্য বিজেপিতে! জল্পনা রাজনৈতিক মহলে
আরও পড়ুন: ১০ জনপথের বিরুদ্ধে সিন্ধিয়া বিদ্রোহ, পড়ছে কমলনাথ সরকার
বিদ্রোহের পটভূমিটা তৈরি হয়েছিল ২০১৮-য় মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দাবিদার ছিলেন জ্যোতিরাদিত্য। কিন্তু সেই পদ যায় কমল নাথের হাতে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদও অধরা থেকে যায়। বিধানসভা নির্বাচনের সময় জ্যোতিরাদিত্যের কাঁধে ভর দিয়ে বৈতরণী পার করে কংগ্রেস। মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতায় আসে। তাঁর প্রতি দলের এই ‘বঞ্চনা’ মেনে নিতে পারেননি জ্যোতিরাদিত্য। তার পর থেকেই ১০ জনপথে থেকে দূরত্ব বাড়তে থাকে তাঁর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দল থেকে ইস্তফা দিয়ে সেই ‘বঞ্চনা’রই এ বার জবাব দিলেন এই তরুণ কংগ্রেস নেতা। তবে, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্যোতিরাদিত্যের এই বিদ্রোহ কমল নাথের বিরুদ্ধে নয়। ১০ জনপথের বিরুদ্ধে।
রাহুল গাঁধী সভাপতি থাকাকালীন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সচিন পায়লটদের মতো নবীনদের প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেখানেও সমস্যা তৈরি হয়। দলের প্রবীণ নেতাদের অনেকেই বিষয়টা মেনে নিতে পারছিলেন না। ফলে দলের ভিতরে নবীন বনাম প্রবীণের একটা দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সনিয়া গাঁধী অন্তর্বর্তী সভাপতি হওয়ার পরই ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতারা। যার শিকার হন তরুণ নেতারা। তাঁদের মধ্যে প্রথম বিস্ফোরণ ঘটালেন জ্যোতিরাদিত্য। যথারীতি প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ১০ জনপথের বিরুদ্ধে এর পর কার বিদ্রোহ ঘোষণা করার পালা?
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জ্যোতিরাদিত্য হিমশৈলের চূড়া মাত্র। দলে এমন অনেক নেতা আছেন যাঁরা ১০ জনপথের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ, অসন্তুষ্ট। নাম উঠে আসছে সচিন পায়লটরেও। তিনিও কি জ্যোতিরাদিত্যের পথে হাঁটবেন, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করেন, রাহুল গাঁধী সভাপতির পদ থেকে সরে গেলেও দলের ভরকেন্দ্র ১০ জনপথ থেকে সরে যাক কখনওই চায়নি কংগ্রেস। এ নিয়ে কেউ কেউ মনে করাচ্ছেন, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা নির্বাচনের কথা। সে সময় শশী তারুরের মতো হাই প্রোফাইল নেতার পরিবর্তে নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীকে বেছে নেওয়ার পিছনেও সেই অঙ্কই কাজ করেছে বলে তাঁদের ধারণা। দলের একাংশ মনে করেন, ১০ জনপথের বাইরে কোনও শক্তিকেন্দ্র গড়ে উঠতে দেওয়া হয়নি। তারই বিরুদ্ধে মাথাচাড়া দিচ্ছে বিদ্রোহ। মধ্যপ্রদেশের ঘটনা তারই উদাহরণ।
গত কয়েক দিন ধরেই রাজনৈতিক ডামাডোল চলছিল মধ্যপ্রদেশে। সোমবার থেকে একের পর এক নাটকীয় মোড় নেয় রাজ্যের রাজনৈতিক ছবিটা। জ্যোতিরাদিত্য-ঘনিষ্ঠ ১৭ জন বিধায়ক ‘উধাও’ হয়ে যান। কংগ্রেসের তরফে জ্যোতিরাদিত্যর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনও উত্তর মেলেনি। তার পর থেকেই কংগ্রেস শিবিরে আশঙ্কার মেঘ ঘনাতে শুরু করে। জোর চর্চা চলতে থাকে তা হলে কি সত্যিই বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন জ্যোতিরাদিত্য? সেই জল্পনা বাড়িয়ে মঙ্গলবার সকালেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তার পরই ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন দলের অন্তর্বতী সভাপতি সনিয়া গাঁধীর কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy