প্রধানমন্ত্রীকে ‘ভাঁওতাবাজ’ বলছেন কাজ-হারানো পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশও। গ্রাফিক তিয়াসা দাস।
বৃহস্পতিবার মহালয়ার সঙ্গে দেশবাসীকে বিশ্বকর্মা পুজোর শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজের টুইটার হ্যান্ডল থেকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে সেখানে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমিকদের ‘বিশ্বকর্মা’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। যা করতে গিয়ে বিরোধী নেতাদের কটাক্ষের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁদের খোঁচা: এই মন্তব্য শ্রমিকদের দূরবস্থার প্রতি উদাসীন প্রধানমন্ত্রীর মুখে কতটা মানানসই? প্রধানমন্ত্রীকে ‘ভাঁওতাবাজ’ বলছেন কাজ-হারানো পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশও।
ওই ভিডিয়ো পোস্টে মোদী লিখেছিলেন, ‘বিশ্বকর্মা জয়ন্তীতে সকল দেশবাসীকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আজকের দিনটি তাঁদের প্রতি সমর্পিত, যাঁদের কাছে কাজই পুজো। যাঁদের সৃষ্টি মানবতাকে সমৃদ্ধ করে চলেছে’। প্রধানমন্ত্রী ব্রিজ তৈরি, ইঞ্জিনিয়ারিং, রাজমিস্ত্রি, ছুতোর, কুমোর, ইলেকট্রিক কর্মী থেকে রাস্তা তৈরির কাজে যুক্ত কর্মীদের বিশ্বকর্মা বলে অভিহিত করেছিলেন।
কিন্তু মোদীর পোস্টে লকডাউনে ঘোর বিপাকে পড়া লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের কোনও উল্লেখ নেই।
विश्वकर्मा जयंती की सभी देशवासियों को बहुत-बहुत शुभकामनाएं। आज का दिन उन लोगों को समर्पित है, जिनके लिए कर्म ही पूजा है, जो अपने सृजन से संपूर्ण मानवता को समृद्ध करते हैं। pic.twitter.com/wO8bQJqRhh
— Narendra Modi (@narendramodi) September 17, 2020
২৪ মার্চ দেশে জারি হয় প্রথম দফার লকডাউন। তখন থেকেই ভিন রাজ্যে কাজ এবং রোজগার হারিয়ে দিশেহারা অবস্থা পরিযায়ী শ্রমিকদের। তাদের সমস্যার সুরাহার জন্য কোনও আশার কথা শোনা যায়নি কেন্দ্রের তরফে। একটা বড় অংশকে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল পায়ে হেঁটে হাজার হাজার কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে। তখন তাঁদের অনেকে প্রাণ হারিয়েছিলেন সড়ক বা রেল দুর্ঘটনায়। ওই শ্রমিকদের প্রতি মোদী সরকারের সামগ্রিক ‘উদাসীনতা’ তখন প্রবল সমালোচিত হয়েছিল। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন মোদীর ভিডিয়ো পোস্টের পর সেই সমালোচনা আবার ফিরে এসেছে।
ঘটনাচক্রে, এ সপ্তাহেই পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যু ও তাঁদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সংসদে উঠেছিল। মোদী সরকার যেখানে জানায়, শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্ন নেই। তারা আরও স্বীকার করে যে, লকডাউনে বাড়ি ফেরার পথে মোট কত শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়েও কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই। অর্থাৎ, রাস্তাঘাটে বেঘোরে মৃত ‘বিশ্বকর্মাদের’ দায় কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলছে মোদী সরকার।
লকডাউনের গুঁতোয় নাজেহাল পরিযায়ী শ্রমিকরা। ছবি—পিটিআই।
সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহুর অভিযোগ, ‘‘যথাযথ পরিকল্পনা না করে নেওয়া প্রধানমন্ত্রীর চটজলদি সিদ্ধান্ত কর্মহীন করেছিল লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে। রোজগারহীন শ্রমিকদের খাওয়া ও বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে হাত গুটিয়ে বসেছিল কেন্দ্র।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘পরিযায়ীদের ব্যাপারে পরিসংখ্যান রাখার সদিচ্ছা নেই কেন্দ্র-রাজ্য কোনও সরকারেরই। লকডাউনে আটকে পড়া প্রায় পাঁচ লক্ষ কাজ হারানো শ্রমিকের তালিকা আমরা তৈরি করেছি। তাদের পুনর্বাসন চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে সিটু-সহ কয়েকটি ট্রেড ইউনিউনের তরফে মামলাও করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরেই সেই মামলার শুনানি রয়েছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘সন্দেহ নেই যে, শ্রমিকরাই দেশের বিশ্বকর্মা। কিন্তু তাহলে তো সরকারের অবহেলার জন্য তাঁদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করা উচিত মোদীর!’’
পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নেত্রী তথা সাংসদ দোলা সেনের কথায়, ‘‘ভারতের মতো ঐতিহ্যবাহী দেশে নরেন্দ্র মোদীর মতো নাটুকে, গিমিকবাজ প্রধানমন্ত্রী এর আগে আসেননি। আসলে উনি কাজে বিশ্বাস করেন না। মনে করেন, নাটুকে ভঙ্গিতে মনভোলানো কথা বললেই সব হয়ে যায়। সে জন্যই শ্রমিকদের দুর্দশা লুকোতে বিশ্বকর্মা সম্বোধন। কিন্তু শ্রমিকরা মোদীর চরিত্র বুঝে গিয়েছেন।’’
‘‘শ্রমিকদের বিশ্বকর্মা বলেছেন, খুব ভাল কথা। কিন্তু তাঁদের অনাহারে রেখেছেন কেন?’’ ফাইল চিত্র।
শ্রমিকদের প্রতি মোদী সরকারের মনোভাবকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন দীর্ঘদিন শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আরএসপি নেতা অশোক ঘোষও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সরকারটাই চলছে একটা মিথ্যাকে বার বার বলে সত্যিতে পরিণত করার কৌশলে। শ্রমিকদের প্রতি বিন্দুমাত্র দায়বদ্ধতা নেই মোদী সরকারের। শ্রমিকদের সত্যিই বিশ্বকর্মা মনে করলে তাঁদের হাতে টাকা দিন, পেটে খাবার দিন, জাতীয় বেতন নীতি চালু করে তাঁদের স্বার্থ সুরক্ষিত করুন।’’ আর কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘‘শ্রমিকদের বিশ্বকর্মা বলেছেন, খুব ভাল কথা। কিন্তু তাঁদের অনাহারে রেখেছেন কেন?’’
লকডাউনে কাজ হারিয়ে বেকার মন্টু, জহির, আলাউদ্দিন, সমীর, বিকাশ, আজিমুদ্দিনদের মন ভোলাতে পারেনি মোদীর ‘বিশ্বকর্মা বার্তা’। জহির বলেছেন, ‘‘শ্রমিকদের ঋণ দেওয়া হবে বলে শুনেছিলাম। কিন্তু আমাদের মতো গরিব শ্রমিকরা কিছুই পায়নি। কাজ নেই। বাড়িতে বসে আছি। ধার দেনা করে দিন চালাচ্ছি।’’ আলাউদ্দিনের অনুযোগ, ‘‘উনি তো অনেক কিছুই বলেন। ফান্ডে প্রচুর টাকা এসেছে শুনেছি। আমাদের কী দিল?’’
আরও পড়ুন: ‘দু’হাজারের নোট ছাপাতে চাননি মোদী’
আরও পড়ুন: মোদীর জন্মদিনে ‘বেকারত্ব দিবস’ পালন তরুণদের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy