Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪

প্রিয়ঙ্কার নামে চাঙ্গা লখনউ

লখনউ এখন প্রিয়ঙ্কাময়। রাত পোহালেই রাহুল গাঁধীর সঙ্গে আসছেন তিনি। সঙ্গে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। বিমানবন্দর থেকে আলমবাগ, চারবাগ, হুসেনগঞ্জ, লালবাগ, হজরতগঞ্জ, মায়াবতীর ‘শুঁড় তোলা’ হাতির মূর্তির পার্ক ঘেঁষে রোড-শো যাবে কংগ্রেস দফতর নেহরু ভবনে।

সাজো-সাজো: আসছেন প্রিয়ঙ্কা। লখনউয়ে দলের সদর দফতরে চলছে তারই তোড়জোড়। নিজস্ব চিত্র

সাজো-সাজো: আসছেন প্রিয়ঙ্কা। লখনউয়ে দলের সদর দফতরে চলছে তারই তোড়জোড়। নিজস্ব চিত্র

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
লখনউ শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৮
Share: Save:

টিংটিঙে চেহারার এক বৃদ্ধ তিড়িং-বিড়িং করে নেচে বেড়াচ্ছেন নেহরু ভবনে। একটু থামাতেই ভেউ ভেউ কান্না— “ভাইয়াজি আসছে। এত দিন কেউ কথা শোনেনি। ভাইয়াজি শুনবে।”

কিন্তু ‘ভাইয়াজি’র সঙ্গে তো প্রিয়ঙ্কাও আসছেন? কান্না থামিয়ে অবাক চোখে বৃদ্ধ! কটমট করে তাকিয়ে বললেন, “প্রিয়ঙ্কাকেই তো ভাইয়াজি ডাকি। রাহুল তো ভাইয়া।” অমেঠী-রায়বরেলীর অলিতে-গলিতে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকে যাঁরা ছোট থেকে দেখে এসেছেন, তাঁদের আদরের ডাক এটাই— ‘ভাইয়াজি’। কেউ বলেন, ছোট থেকেই ইন্দিরার ছাপ প্রিয়ঙ্কার মুখে। তাঁর মতোই চুলের ছাঁট। তখন থেকেই ‘ভাইয়াজি’ নাম। কেউ আবার বলেন, তেমন কিছু নয়, নিছক ঘরের আদরের নাম।

লখনউ এখন প্রিয়ঙ্কাময়। রাত পোহালেই রাহুল গাঁধীর সঙ্গে আসছেন তিনি। সঙ্গে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। বিমানবন্দর থেকে আলমবাগ, চারবাগ, হুসেনগঞ্জ, লালবাগ, হজরতগঞ্জ, মায়াবতীর ‘শুঁড় তোলা’ হাতির মূর্তির পার্ক ঘেঁষে রোড-শো যাবে কংগ্রেস দফতর নেহরু ভবনে। রাস্তা জুড়ে রাহুল-প্রিয়ঙ্কাদের পেল্লায় পোস্টার। রাজ্যের রাজধানীতে কংগ্রেসের উৎসব। গোলাপি জামা পরে ঘুরছে ‘প্রিয়ঙ্কা সেনা’। একে অন্যকে দেখে প্রশ্ন করছে, ‘হাউ ইজ় দ্য জোশ?’ ছোটখাটো নেতারাও গাড়িতে হুটার বাজিয়ে শহর দাপাচ্ছেন। কে বলবে, নরেন্দ্র মোদী নিষিদ্ধ করেছেন লালবাতি সংস্কৃতি! ‘পুলিশ’ লেখা গাড়িতেও পতপত করে উড়ছে কংগ্রেসের পতাকা! যোগীরাজ্যে।

আরও পডু়ন: কাজ নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে, সততা প্রশ্নাতীত

যে নেহরু ভবন দিয়ে প্রিয়ঙ্কা নিজের রাজনৈতিক জীবন শুরু করছেন, সেই ভবন উদ্বোধন করেছিলেন ইন্দিরাই। ১৯৭৯ সালে। ভবনের দোতলায় নিজের ঘরটি প্রিয়ঙ্কার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন প্রদেশ সভাপতি রাজ বব্বর। সাজগোজ হচ্ছে সেখানে। কাল রোড-শো শেষে দিল্লি ফিরবেন রাহুল। প্রিয়ঙ্কা থাকবেন আরও তিন দিন। সকাল থেকে মাঝরাত— দিনে ১২ ঘণ্টারও বেশি কাটাবেন দফতরেই। ঘরের পাশেই কনফারেন্স রুমে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের কর্মীদের কথা শুনবেন। যে কাজটিই এত দিন কংগ্রেসের অনেকে তেমন করেননি। রাজ্যের আশিটি আসনের মধ্যে ৪২টির ভার প্রিয়ঙ্কার কাঁধে। হাওয়া মেপেই জেলাওয়াড়ি ঝড় তুলতে নামবেন ১৮ তারিখ থেকে।

মানুষের মন বুঝে এক অডিয়ো বার্তা প্রকাশ করেছেন প্রিয়ঙ্কা। তাতে বলেছেন, “কাল আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে লখনউ আসছি। আমার আশা, সকলে মিলে একটি নতুন রাজনীতি শুরু করব। এমন রাজনীতি, যাতে আপনারা সবাই অংশীদার হবেন। আমার যুবক বন্ধু, আমার বোন আর সব থেকে দুর্বল যে মানুষটি— সবার আওয়াজ শোনা হবে। আসুন আমার সঙ্গে মিলে এই নতুন ভবিষ্যৎ ও নতুন রাজনীতি নির্মাণ করি।” নিজের প্রথম রাজনৈতিক বিবৃতিতে প্রিয়ঙ্কা আজ বিজেপি সরকারকে সরাসরি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ আর উত্তরাখণ্ডে বেআইনি মদে ৯৭ জনের মৃত্যুর জন্য। দোষীদের শাস্তি, মৃতদের পরিজনদের সরকারি চাকরির দাবি তুলেছেন।

রাজ বব্বর বললেন, “রাহুল গাঁধী নামক তরোয়ালের ধার দেখেছেন, এ বার প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর আবেগ মেশানো ঝড় দেখুন। বিজেপি এখন থেকেই কাঁপছে। কাল ইতিহাস রচনা হবে। তা দেখে বিজেপির কী হাল হবে, ভাবছি!” নরেন্দ্র মোদী আর যোগী আদিত্যনাথের গড় পূর্ব উত্তরপ্রদেশেই। যেখানকার দায়িত্ব দিয়ে প্রিয়ঙ্কাকে দলের সাধারণ সম্পাদক করেছেন রাহুল।

দিনভর লখনউয়ে চোখ বুলিয়ে মনে হল, ‘ভাইয়াজি’-র আগমনবার্তায় উত্তরপ্রদেশে যেন নতুন করে প্রাণসঞ্চার হয়েছে কংগ্রেসে। ভোটের আগে যোগীরাজ্যে ঝিমুনি কাটিয়ে রাস্তায় নেমে দাপট দেখানোর এই জোশ-টাই আসলে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ছিল কংগ্রেস শিবিরে!

ইতিহাসের শহর এখন কালকের ঝাঁঝের অপেক্ষায়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE