Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

নোট-কয়েনের প্রণামী চলবে না এ মন্দিরে

যতই পুণ্যার্থী হোন না কেন, মা অম্বার চরণে কড়কড়ে নোট অর্পণ করতে গেলে বকুনি খাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। করতে হবে পেটিএম! এমনই সব নির্দেশ বড় বড় করে লেখা রয়েছে জনবিকাশ মন্দিরে অথবা সংলগ্ন জিএনএফসি টাউনশিপের প্রতিটি দোকানে। এমনকী এ-ও বলা রয়েছে যে, মন্দিরে প্রণামী দিতে হবে পেটিএম করে!

নতুনত্ব: ডিজিটাল মেশিন হাতে পুরোহিত। জিএনএফসি টাউনশিপের মন্দিরে। —নিজস্ব চিত্র।

নতুনত্ব: ডিজিটাল মেশিন হাতে পুরোহিত। জিএনএফসি টাউনশিপের মন্দিরে। —নিজস্ব চিত্র।

অগ্নি রায়
ভরুচ শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৪৯
Share: Save:

পকেট থেকে কড়ি ফেললেই মাখার তেল কিনতে পারবেন না এই বাজারে। থাকতে হবে কার্ড!

যতই পুণ্যার্থী হোন না কেন, মা অম্বার চরণে কড়কড়ে নোট অর্পণ করতে গেলে বকুনি খাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। করতে হবে পেটিএম!

এমনই সব নির্দেশ বড় বড় করে লেখা রয়েছে জনবিকাশ মন্দিরে অথবা সংলগ্ন জিএনএফসি টাউনশিপের প্রতিটি দোকানে। এমনকী এ-ও বলা রয়েছে যে, মন্দিরে প্রণামী দিতে হবে পেটিএম করে!

আরও পড়ুন: রামমন্দির নিয়ে চাপ বাড়াচ্ছে ভিএইচপি

জিএনএফসি অর্থাৎ ভরুচ জেলার ‘গুজরাত নর্মদা ফার্টিলাইজার কর্পোরেশনের টাউনশিপ’। নরেন্দ্র মোদীর ক্যাশলেস ভারতের এক বড় বিজ্ঞাপন এই ‘জিএনএফসি’। নোট-কয়েনের ব্যবহার কার্যত নিষিদ্ধ এখানে। ভারতের প্রথম সম্পূর্ণ ডিজিট্যাল এই টাউনশিপটি সামলাচ্ছে রাজ্য সরকার।

আগামিকাল নিজের জন্মদিনে নর্মদা মহোৎসবের মঞ্চকে উপলক্ষ্য করে এই রাজ্যে নির্বাচনের ঢাকে কাঠি দিতে চলেছেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। প্রস্তুতি তুঙ্গে। সর্দার সরোবর বাঁধে মোদীর এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীদেরও।

ওই অনুষ্ঠানের পরে বডোদরার দাভোলে জনসভা মোদীর। যার পাশের জেলাতেই এই ক্যাশলেস মডেল টাউন। এখানকার সরকারি কর্তারা ঘরোয়াভাবে বলছেন, যে উন্নয়নের মডেলকে বিপণন করে বিজেপি নেতৃত্ব ভোটে ঝাঁপাতে চলেছে, তার একপ্রান্তে যদি থাকে নর্মদা বাঁধের সুজলা-সুফলা স্বপ্ন, অন্য প্রান্তে রয়েছে এই ডিজিট্যাল ভবিষ্যতের আহ্বান।

মন্দির প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে পেটিএম মেশিন হাতে পুরোহিত মহেশ জোশী বলছেন, “প্রথম প্রথম যাঁরা আসতেন তাঁরা বুঝতে পারতেন না। ক্যাশ টাকা দিতে চাইতেন। কিন্তু বারবার বলার পরে এখন আর কোনও সমস্যা হয় না। প্রতিদিন অন্তত ৩০০ মানুষ আসেন। অনলাইনে প্রণামী দেন।” জিএনএফসি এই আইন চালু করার পর পানের দোকানের বিরজু দু’টাকার মশলাও খুচরোতে বেচেন না! সগর্বে জানালেন, “সাফ বলে দিই, এখানে খুচরো পয়সা চলবে না। আপনাকে অনলাইনে দিতে হবে।”

কিন্তু ভারত তথা গুজরাতে কোথাও তো সরকারি নোটকে বেআইনি বলে ফিরিয়ে দেওয়া চলে না। তবে আপনারা ফেরত দিচ্ছেন কী ভাবে? উত্তরে পাশের মনিহারি দোকানের বিনোদ যাদব বলছেন, “আমরা তো খারাপ ব্যবহার করি না। বুঝিয়ে বলি যে, মোদীজি একটা নতুন চেষ্টা শুরু করেছেন। আমরা সবাই তার সঙ্গী। আপনারাও সহযোগিতা করুন।” ক্যাশে দিলে পুরো টাকাটাই দোকানদারের। কিন্তু অনলাইন-এ টাকা দিলে কিছু শতাংশ কেটে নিচ্ছে মাঝখানের ব্যাঙ্ক অথবা অন্যান্য সংস্থা। এটা তো লোকসানই। এই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য রা কাড়ছেন না দোকানিরা।

পুরোটাই কি তবে উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া চিত্রনাট্য? সেটা যথেষ্ট স্পষ্ট না হলেও গুজরাতে এই উন্নয়ন মডেলকে বিক্রি করতে এ বার যে বাড়তি পরিশ্রম করতে হবে বিজেপিকে তা কিন্তু কিছুটা স্পষ্ট। মোদীর প্রচার শুরুর আগের দিনই খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের একটি রিপোর্ট কিছুটা বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছে রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বকে। কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের রিপোর্টে বলা হচ্ছে, গত পনেরো বছরে ভূমিহীন অথবা প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যা এই রাজ্যে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। বড় চাষিরা জমি বিক্রি করে শহরের পথে। পাশাপাশি, গত এক বছরে কমেছে কৃষিজমির মোট পরিমাণও।

উন্নয়নের দাম দিতে গিয়ে কোথাও জলমগ্ন হচ্ছে গ্রাম, কোথাও কংক্রিট খেয়ে নিচ্ছে আখের খেত। কিন্তু এহ বাহ্য। উন্নয়নের তলার অন্ধকারকে ঢেকে রেখেই আগামিকাল প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনকে জয়যুক্ত করার জন্য মরিয়া রাজ্য প্রশাসন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE