বাঁ দিকে, সংসদে রাজনাথ সিংহ। ডান দিকে, লোকসভা থেকে ‘ওয়াকআউট’ অধীর চৌধুরীর। পিটিআই
গত মে মাস থেকে চিন লাদাখে একাধিকবার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করার চেষ্টা করলেও, ভারত তার যোগ্য জবাব দিয়েছে বলে আজ সংসদে বিবৃতি দিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। যদিও সেই বিবৃতির ভিত্তিতে বিরোধী দলগুলিকে সংসদে কোনও প্রশ্ন করার সুযোগ দিল না শাসক শিবির।
কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরীর দাবি, লাদাখ নিয়ে আলোচনা হলে প্রশ্নের মুখে পড়তেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীদের মতে, নরেন্দ্র মোদী চিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাবরমতী আশ্রমে দোলনায় দোল খাওয়া, মামাল্লাপুরমে মন্দির চত্বরে ঘুরে বেড়ানোর পরেও চিন কেন এ ভাবে ভারতের জমি দখলে তৎপর, তা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন উঠত। তাই আলোচনা এড়িয়ে যাওয়া হল। তৃণমূলের সৌগত রায়ের কথায়, ‘‘সরকার আসলে পালাচ্ছে।’’
আজ লোকসভায় রাজনাথ বলেন, ‘‘গত এপ্রিল থেকেই লাদাখে সেনা বাড়াতে শুরু করে চিন। পাল্টে যায় তাদের পেট্রোলিং পদ্ধতি। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে একাধিকবার কঙ্গকা লা, গোগরা ও প্যাংগং হ্রদের উত্তর দিকে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করে চিন। তা আটকে দেয় ভারতীয় সেনা।’’ লাদাখের একাধিক স্থান চিন দখল করেছে বলে যে জল্পনা, তা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি রাজনাথ। তবে চিনের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘‘আলোচনার মাঝেই ১৫ জুন গালওয়ানে সংঘর্ষ হয়। একাধিক ভারতীয় সেনা মারা যান। যদিও গোটা পর্বে ভারতীয় সেনারা সংযমের সঙ্গেই শৌর্যের পরিচয় দিয়েছেন।’’
প্রসঙ্গ চিন: কেন্দ্রের বক্তব্য
• চিন লাদাখের প্রায় ৩৮ হাজার বর্গ কিমি এলাকা দখল করে রেখেছে। এ ছাড়া, অরুণাচলের প্রায় ৯০ হাজার বর্গ কিমি এলাকাও দাবি করে বেজিং।
• ১৯৯০-২০০৩ সাল পর্যন্ত ভারত-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা চিহ্নিতকরণের কাজ যৌথ ভাবে করেছিল। তার পর উৎসাহ হারিয়ে ফেলে চিন। ফলে একাধিক স্থান নিজেদের বলে দাবি করে দু’দেশ।
• গত এপ্রিল থেকে পূর্ব লাদাখে সেনা মোতায়েন শুরু করে চিন।
• মে-র মাঝামাঝি প্যাংগং হ্রদের উত্তরে, কঙ্গকা লা, গোগরা এলাকা দখলের চেষ্টা করে চিন।
• ১৫ জুন গালওয়ানে সংঘর্ষ। মারা যান একাধিক ভারতীয় জওয়ান। ফের ২৯ অগস্ট সংঘর্ষের পরিস্থিতি ।
• সেনার সমর্থনে সংসদে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাশের পক্ষে সওয়াল রাজনাথের।
আরও পড়ুন: স্ত্রী করোনা পজিটিভ হয়ে আইডিতে, কোয়রান্টিনে সূর্যকান্ত মিশ্র
রাজনাথ বলেন, ‘‘লাদাখ সীমান্তে প্রচুর চিনা সেনা রয়েছে। রয়েছে বিপুল সমরাস্ত্র। পাল্টা সেনা মোতায়েন করেছে ভারতও।’’ সেনা মোতায়েন স্পর্শকাতর বিষয় বলে এ নিয়ে বিশদে বলতে চাননি রাজনাথ। বক্তব্যের শেষে তিনি একজোট হয়ে সেনাদের পক্ষে প্রস্তাব পাশ করার অনুরোধ করেন। যাতে গোটা দেশ যে তাঁদের সঙ্গে রয়েছে সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায় সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকা সেনাদের।
সেই প্রস্তাবে সম্মতি জানায় সব দল। এ নিয়ে প্রত্যেক দলকে অল্প সময় করে বলার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করেন অধীর, আসাদুদ্দিন ওয়েইসিরা। কিন্তু স্পিকার তা খারিজ করে দেন। তাঁর অনড় মনোভাব দেখে ওয়াক আউট করে কংগ্রেস। বাইরে অধীর, শশী তারুরেরা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন কেউ সীমান্ত পেরিয়ে ঢোকেনি। কেউ কোনও ভারতীয় ছাউনি দখল করেনি। আজ আলোচনা হলে সেই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন উঠত। তাই বিরোধীদের বলতে দেওয়া হয়নি।’’
অধিবেশন কক্ষে তৃণমূল লাদাখ নিয়ে বলতে দেওয়ার দাবি না-তুললেও পরে সৌগত রায় বলেন, ‘‘শুধু লাদাখ কেন, সরকার তো সব প্রশ্ন থেকেই পালাতে চাইছে। আসলে চিন, করোনা, অর্থনীতি সব ক্ষেত্রেই সরকার ব্যর্থ।’’
আরও পড়ুন: ‘ফেসবুকে ভোটের খেলা’, বিস্ফোরক বহিষ্কৃত কর্মী
প্রশ্নের হাত থেকে সরকারকে বাঁচাতে যে ভাবে স্পিকার ওম বিড়লা ঢাল হয়ে দাঁড়ান, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীদের আবেদনে কান না-দিয়ে তিনি হেসে বলেন, ‘‘আপনারা তো বলবেন যে দেশ সেনার পাশে রয়েছে। আমি বরং আপনাদের হয়ে তা বলে দিচ্ছি।’’ কেন রাজনাথের বিবৃতির ভিত্তিতে প্রশ্ন করা যাবে না, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘লোকসভার ৩৭২ নম্বর আইন অনুযায়ী মন্ত্রীর বিবৃতির পরে প্রশ্ন করা যায় না।’’ কিন্তু সৌগত রায়ের পাল্টা যুক্তি, ‘‘সদিচ্ছা থাকলে দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব হিসেবে আলোচনা করা যেত। তা হলেই প্রশ্ন করার সুযোগ পেতেন বিরোধীরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy