Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
মৃত্যু ছুঁয়ে ফিরল শিশু
Death

কাশ্মীরে গুলি-যুদ্ধের মধ্যে নাতিকে বাঁচিয়ে নিহত দাদু

পুলিশ বলেছে, ৬৫ বছরের বশির আহমেদ খান আজ বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের গুলি-বিনিময়ের মধ্যে পড়ে মারা গিয়েছেন।

বশিরের দেহ ঘিরে হাহাকার (বাঁ দিকে)। জঙ্গিদের সঙ্গে বাহিনীর সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত বশির আহমেদের নাতি আয়াদকে আদর পরিজনের (ডান দিকে)। বুধবার শ্রীনগরে। এএফপি

বশিরের দেহ ঘিরে হাহাকার (বাঁ দিকে)। জঙ্গিদের সঙ্গে বাহিনীর সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত বশির আহমেদের নাতি আয়াদকে আদর পরিজনের (ডান দিকে)। বুধবার শ্রীনগরে। এএফপি

নিজস্ব সংবাদদাতা 
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০ ০৩:১৭
Share: Save:

গুলিতে ঝাঁঝরা বৃদ্ধের দেহ পড়ে রয়েছে রাস্তায়। ছোট্ট ছেলেটা তাঁর বুকের উপরে বসে অঝোরে কাঁদছে।

রক্তে মাখামাখি দাদুর দেহ আর তাঁর নাতির কান্নার ছবি আজ দিনভর ইন্টারনেটে ঘুরেছে। ভাইরাল হয়েছে নাতির ভিডিয়ো। কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের আজকের সংঘর্ষের খবরটা তাই আর পাঁচটা দিনের চেয়ে আলাদা হয়ে ঝাঁকিয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে।

পুলিশ বলেছে, ৬৫ বছরের বশির আহমেদ খান আজ বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের গুলি-বিনিময়ের মধ্যে পড়ে মারা গিয়েছেন। ওই সংঘর্ষেই নিহত হয়েছেন সিআরপি-র হেড কনস্টেবল দীপচন্দ বর্মা।

বশিরের নাতির নাম আয়াদ। ছবি ও ভিডিয়ো পোস্ট করে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ তাকে উদ্ধারের খবর জানাতেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। বলেছিলেন, ‘‘রক্তাক্ত কাশ্মীরের প্রতিটি ঘটনাই আজ প্রচারের হাতিয়ার। তিন বছরের শিশুও।’’ বিকেলের মধ্যেই সেই ছবি নিয়ে জাতীয় স্তরে বিতর্ক বাধিয়েছেন বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র। আয়াদ ও তার দাদুর ওই ছবি টুইট করে সম্বিত ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘‘পুলিৎজ়ার-প্রেমীরা??’’ তাঁর তির বিরোধীদের দিকেই। ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পরে অবরুদ্ধ কাশ্মীরের ছবি তুলে তিন চিত্রসাংবাদিক পুলিৎজ়ার পুরস্কার পাওয়ায় তাঁদের অভিনন্দন জানিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। তখনও সম্বিতই বিরোধীদের আক্রমণ করেছিলেন। আজ নাম-না করে তিনি রাহুলদের জবাব তলব করেছেন ঠিকই, কিন্তু অসহায়-আতঙ্কগ্রস্ত শিশুটির ছবি সেই কাজে ব্যবহার করে সমাজমাধ্যমে তীব্র নিন্দার মুখেও পড়েছেন। ‘সমস্ত সীমা পেরিয়ে যাওয়া’ সম্বিতকে বয়কটের ডাক উঠেছে। অভিনেত্রী দিয়া মির্জা বিজেপির এই মুখপাত্রের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়েছেন, ‘‘আপনার মধ্যে কি একবিন্দু মায়াদয়া নেই?’’

আরও পড়ুন: চিনের বিরুদ্ধে ‘আর্থিক ত্রিশূল’ হামলা দিল্লির

আয়াদের মায়ের বাবা, শ্রীনগরের বাসিন্দা বশির ছিলেন নির্মাণ সংস্থার ঠিকাদার। বুধবার সকালে ব্যবসার কাজে গাড়ি চালিয়ে সোপোরে যাচ্ছিলেন। ঘণ্টা দুয়েকের পথ। সঙ্গে নিয়েছিলেন বছর তিনেকের নাতিকে। উত্তর কাশ্মীরের বারামুলা জেলায় ‘আপেলের শহর’ সোপোর। সেখানেই যে আজ সিআরপি-র সঙ্গে জঙ্গিদের ধুন্ধুমার লড়াই বেধেছে, দাদু-নাতি জানবে কী করে!

পুলিশ সূত্রের খবর, সকাল ৮টা নাগাদ সোপোরে সিআরপি-র টহলদার জওয়ানদের লক্ষ্য করে গুলি ছুটে আসে একটি মসজিদের চিলেকোঠা থেকে। লড়াই বেধে যায়। আর সেই লড়াইয়ের মধ্যেই এসে পড়ে বশিরের গাড়ি। প্রথমে গাড়ি ঘোরাতে চেয়েছিলেন বশির। পারেননি। নাতিকে আঁকড়ে গাড়ি থেকে নেমে আড়াল খুঁজছিলেন। তখনই ঠিক কোন দিক থেকে গুলির ঝাঁক ছুটে এসে তাঁর শরীর ফুঁড়ে দিয়েছিল, জানা নেই। মরতে মরতেও আয়াদকে জড়িয়ে রেখেছিলেন বশির। আঁচড় লাগেনি তার গায়ে।

আরও পড়ুন: ‘এলএসি পেরিয়ে বেজিং যাবার ইচ্ছে? গাড়ি ঘোরান!’

ক্রমশ জঙ্গিরা পিছু হটেছে। মসজিদে গিয়ে দেওয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পেলেও কোনও জঙ্গিকে হাতে পায়নি সিআরপি। জখম হয়েছেন তিন জওয়ান ভোয়া রাজেশ, দীপক পাটিল, নীলেশ চৌডে। কিন্তু খবর ছড়িয়ে পড়তেই মাথাচাড়া দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ। গত সপ্তাহেও অনন্তনাগে সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষে ছ’বছরের একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। আজ বশিরের ছেলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন, তাঁর বাবাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে গুলি করেছে নিরাপত্তা বাহিনীই। যার পাল্টা বিবৃতি দিয়ে সিআরপি-র এডিজি জুলফিকার হাসান বলেছেন, ‘‘ওই ব্যক্তিকে জঙ্গিরা মেরেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমান্তের ও-পার থেকে এ সব কথা ছড়ানো হচ্ছে। কেউ ভাবেনি জঙ্গিরা ধর্মস্থানেও ঘাঁটি গাড়বে।’’

সিআরপি-র দাবি, গুলির লড়াইয়ের মধ্যেই কয়েক জন জওয়ান আয়াদকে উদ্ধার করেন। সহকর্মীরা তখন গুলি চালিয়ে ‘কভার’ দেন তাঁদের। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আয়াদকে কোলে নিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছেন এক জওয়ান। অন্য একটি ভিডিয়োয়, গাড়ির মধ্যে পুলিশকর্মীরা চকলেট আর বিস্কুট দিয়ে ভোলাচ্ছেন তাকে। কেঁদেই চলেছে আয়াদ। চোখ মুছছে আর একটাই কথা বলছে — ‘‘বে গাচে গারে।’’ আমি বাড়ি ফিরতে চাই।

অন্য বিষয়গুলি:

Death Kashmir Militant Security Forces
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy