খসড়া তালিকায় নাম রয়েছে কি না, জানতে এনআরসি সেন্টারের সামনে তখন অপেক্ষা। শনিবার অসমের নগাঁওয়ে। ছবি: রয়টার্স।
অসমের চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়ল ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের নাম! এর বিরুদ্ধে প্রথমে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে, তার পর হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো যাবে। কিন্তু এ সবই দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া। আজ, এই মুহূর্তে এনআরসি-ছুট মানুষগুলির কার্যত কোনও ‘দেশ’ নেই।
এনআরসি কর্তৃপক্ষ আজ জানান, তালিকায় নাম তোলার জন্য আবেদন করেছিলেন ৩,৩০,২৭,৬৬১ জন। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম খসড়া এবং গত বছর ৩০ জুলাই চূড়ান্ত খসড়া মিলিয়ে মোট ২,৮৯,৮৩,৬৭৭ জনের নাম ওঠে। আজ চূড়ান্ত তালিকায় আরও ২১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩২৭ জনের নাম যুক্ত হয়েছে। ফলে অসমে এখন ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা ৩ কোটি ১১ লক্ষ ২১ হাজার ৪ জন। এনআরসি-ছুটরা ১২০ দিনের মধ্যে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু পুরো ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়ার দাবি জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, ফরেনার্স ট্রাইবুনালের পক্ষপাতদুষ্টতার বহু উদাহরণ আছে।
এনআরসি প্রকাশ উপলক্ষে অসম জুড়ে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গুয়াহাটি-সহ স্পর্শকাতর এলাকায় আধা-সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। নজরদারি চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও রাত পর্যন্ত কোনও অশান্তির খবর মেলেনি। শুধু শোণিতপুরের দোলাবাড়ি গ্রামে শায়েরা বেগম নামে এক মহিলা তালিকা প্রকাশের আগেই আত্মঘাতী হয়েছেন বলে খবর। স্বামী ও সন্তানের নাম খসড়ায় না-থাকায় তিনি চিন্তিত ছিলেন। পরিবারের দাবি, আজ গ্রামের কেউ তাঁকে বলেন, তালিকায় নাম না থাকলেই পুলিশ ধরবে। এর পরেই তিনি কুয়োয় ঝাঁপ দেন। তবে জেলার পুলিশ সুপারের দাবি, মহিলা বহু দিনই মানসিক ভারসাম্যহীন। এর সঙ্গে এনআরসির যোগ নেই।
‘নাগরিক’-নামা
• মোট আবেদন: ৩,৩০,২৭,৬৬১
• প্রথম ও চূড়ান্ত খসড়া মিলিয়ে নাম ওঠে: ২,৮৯,৮৩,৬৭৭
• খসড়া-ছুট: ৪০,৪৩,৯৮৪
• ৩১ অগস্ট নাম উঠল: ২১,৩৭,৩২৭
• চূড়ান্ত এনআরসিভুক্ত: ৩,১১,২১,০০৪
• এনআরসি-ছুট: ১৯,০৬,৬৫৭
কার্যত কংগ্রেস আমলেই অসমে এনআরসি তৈরির কাজ শুরু হয়। তাই গোড়ায় এনআরসির কৃতিত্ব দাবি করেছিল কংগ্রেস। ২০১৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিজেপি দাবি করে, এনআরসির কাজ শেষ করার কৃতিত্ব তাদেরই। কিন্তু বহু লক্ষ নাম বাদ পড়া নিশ্চিত হতেই দু’দলই গোটা বিষয়টি থেকে নিজেদের দূরত্ব বাড়িয়ে এনআরসি কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলার দিকে আঙুল তোলে। আজকের তালিকা নিয়ে রাজ্যের প্রায় কোনও দল-সংগঠনই খুশি নয়।
বিজেপির মতে, হাজেলার খেয়ালখুশিতে তৈরি তালিকা ভুল। অন্তত দু’লক্ষ ভূমিপুত্র অসমিয়াও বাদ পড়েছেন। অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার অভিযোগ, ১৯৭১ সালের আগে যাঁরা পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভিটেমাটি খুইয়ে এসেছিলেন, তাঁদের অনেকের নাম তালিকায় নেই। কারণ, এনআরসি কর্তৃপক্ষ উদ্বাস্তুর শংসাপত্রকে যোগ্য নথি বলে স্বীকার করেননি। পাশাপাশি,
অনেক বিদেশি ভুয়ো ‘লেগাসি ডেটা’ জোগাড় করে নাম তুলেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘অসমকে বিদেশি-মুক্ত করার অন্য পদ্ধতি দিল্লি ও দিসপুর বার করছে। যাঁরা শিব-কালী-দুর্গার পুজো করেন, তাঁদের চিন্তার কারণ নেই। নাগরিকত্ব মিলবেই।’’ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের কথায়, ‘‘এনআরসি ত্রুটিপূর্ণ। বিজেপি হিন্দু-মুসলিম বিভাজনে ব্যস্ত।’’ কিন্তু অল অসম মুসলিম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের উপদেষ্টা আজিজুর রহমান এটাকেই চূড়ান্ত হিসেবে দেখতে চাইছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা বলছেন, বাদ পড়ার সংখ্যা কম, তাঁরা আসলে সমস্যা জিইয়ে রাখতে চাইছেন।’’ আসু জানিয়েছে, তারা ফের সুপ্রিম কোর্টে যাবে।
এনআরসি নিয়ে মূল মামলাকারী অসম পাবলিক ওয়ার্কস (এপিডব্লিউ)-এর প্রধান অভিজিৎ শর্মার দাবি, তালিকা অসম্পূর্ণ। মাত্র ২৫-৩৮ শতাংশ তথ্য যাচাই করেই এত নাম বাদ গেল, ১০০ শতাংশ যাচাই করলে অনেক বেশি বাদ পড়ত। তবে এপিডব্লিউয়ের হয়ে যিনি মামলা দায়ের করেছিলেন সেই প্রদীপ ভুঁইয়া বলেন, ‘‘অসমকে বিদেশিমুক্ত করতে চেয়েছিলাম। মানুষকে বিপদে ফেলতে চাইনি। এক শতাংশ ভুলেও কোনও ভারতীয় বিপদে পড়তে পারেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy