২১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে খেলার আয়োজন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমাবেশে অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র।
চতুর্থ পর্বের আনলক প্রক্রিয়ায় রাজ্যের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করল কেন্দ্র। আজ এক নির্দেশিকায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, আগামী দিনে কন্টেনমেন্ট জ়োনের বাইরে লকডাউন ঘোষণা করতে হলে কেন্দ্রের অনুমতি নিতে হবে রাজ্যকে। ফলে অনেকেই মনে করছেন, লকডাউনকে কেন্দ্র করে নতুন করে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে।
প্রসঙ্গত, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে আনলক-৪ পর্ব। এই পর্বে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ধাপে ধাপে মেট্রো পরিষেবা চালু করতে পারবে রাজ্যগুলি। দিল্লি মেট্রো ধাপে ধাপে ওই তারিখ থেকেই চলাচল শুরু করবে। তবে লোকাল ট্রেন চালানোর প্রশ্নে নীরব কেন্দ্র। এই পর্বেও বন্ধ থাকছে যাবতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যদিও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি ও উচ্চতর শ্রেণির পড়ুয়া, যাঁদের গবেষণাগারে কাজের প্রয়োজন হয়, তাঁদের জন্য ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনুমতিসাপেক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে পড়ুয়ার বাসস্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এলাকা কন্টেনমেন্ট জ়োনের বাইরে হতে হবে। কারণ, কন্টেনমেন্ট জ়োনে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লকডাউন বহাল থাকবে।
এ যাবৎ গোটা রাজ্য বা রাজ্যের কোনও একটি অংশে যে কোনও দিন লকডাউন ঘোষণা করার ক্ষমতা ছিল সংশ্লিষ্ট রাজ্যের। কিন্তু আজকের নির্দেশিকায় কেন্দ্র স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে তাদের সঙ্গে আলোচনা না-করে কন্টেনমেন্ট জ়োনের বাইরে কোনও এলাকায় (রাজ্য/জেলা/সাবডিভিশন/শহর পর্যায়ে) লকডাউনের এতকরফা ঘোষণা করতে পারবে না সংশ্লিষ্ট রাজ্য। ইতিমধ্যেই সেপ্টেম্বর মাসে কোন দিনগুলিতে লকডাউন হবে, তা ঘোষণা করে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযের প্রশাসন। কিন্তু আজকের পরে রাজ্যে লকডাউন কার্যকর করতে গেলে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে নবান্নের। ফলে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের আবহ তৈরি হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ শান্তুনু সেন বলেন, “প্রত্যেক রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি আলাদা। তাই এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাজ্যের হাতেই থাকা উচিত ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অগ্রাহ্য করে নির্দেশিকার নামে কেন্দ্রের নির্দেশ ফের রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হল।’’
পশ্চিমবঙ্গের মতো পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশার মতো রাজ্যগুলিও করোনা পরিস্থিতি বুঝে এত দিন নিজেরাই রাজ্যে আংশিক বা সম্পূর্ণ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছে। আজকের নির্দেশিকায় সমস্যায় পড়তে চলেছে তারাও।
আরও পড়ুন: এক ভোটার তালিকায় সব ভোট চায় কেন্দ্র
নতুন আনলক-পর্বে একমাত্র ‘ওপেন থিয়েটার’ খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বন্ধ থাকবে অন্যান্য সিনেমা হল, সুইমিং পুল, প্রমোদ উদ্যান, থিয়েটার। তবে ২১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে খেলার আয়োজন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমাবেশে অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। জমায়েতে উপস্থিতি বেঁধে দেওয়া হয়েছে একশোতে। বিরোধীদের অভিযোগ, বিহার নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এ ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে মোদী সরকার।
আনলকের চতুর্থ দফা
• দফায় দফায় ৭ সেপ্টেম্বর থেকে চালু মেট্রো পরিষেবা
• ২১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় কাজকর্ম, পড়াশোনা, খেলাধুলো, বিনোদনের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ জনের জমায়েত করা যাবে।
• ২১ সেপ্টেম্বর থেকে খোলা জায়গায় থিয়েটার (ওপেন এয়ার) চালু করা যাবে।
• ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে (ক) ৫০ শতাংশ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের অনলাইন ক্লাসের সময়ে স্কুলে আসার অনুমতি দিতে
পারে রাজ্য।(খ) কন্টেনমেন্ট জ়োনের বাইরে থাকা স্কুলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা চাইলে স্কুলে এসে শিক্ষকদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারে। অভিভাবকদের লিখিত সম্মতি দিতে হবে।
• সিনেমা হল, সুইমিং পুল, বিনোদন পার্ক বন্ধ। ওপেন এয়ার থিয়েটার ছাড়া অন্য প্রেক্ষাগৃহও বন্ধ।
• সরকারের বিশেষ অনুমতি ছাড়া আন্তর্জাতিক উড়ানও বন্ধ থাকছে।
নতুন ছাড়
• ন্যাশনাল স্কিল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন ও রাজ্যের স্কিল ডেভেলপমেন্ট মিশন বা রাজ্য ও কেন্দ্রের অনুমোদিত দক্ষতা বৃদ্ধির অন্য উদ্যোগের অধীনে প্রশিক্ষণ চালু হবে।
• উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিএইচডি স্কলার, স্নাতকোত্তর স্তরের কারিগরি বা পেশাদারি দক্ষতার কোর্সের পড়ুয়াদের ল্যাবরেটরির কাজে আসার অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
যা অপরিবর্তিত রইল
• ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনও বিয়েবাড়িতে ৫০ জন, অন্ত্যেষ্টিতে ২০ জন পর্যন্ত থাকার অনুমতি দেওয়া হবে। তার পরে ১০০ জন পর্যন্ত থাকার অনুমতি দেওয়া হবে।
• কোনও ব্যক্তি বা যানবাহনের আন্তঃরাজ্য ও অন্তঃরাজ্য চলাচলে আর বাধা নেই।
• ৬৫ বছরের বেশি বয়সি ব্যক্তি, যাঁদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে এবং ১০ বছরের কম বয়সি শিশুদের বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে না বেরোনোরই পরামর্শ দিয়েছে সরকার।
• আরোগ্য সেতু অ্যাপ ব্যবহার করতে উৎসাহ দেওয়া হবে।
অর্থনীতিতে গতি আনতে এ যাবৎ একাধিক গতিবিধি ও কর্মকাণ্ডে ছাড় দিয়েছিল কেন্দ্র। এ দফায় প্রশ্ন ছিল মেট্রো ও লোকাল ট্রেন চলাচলের প্রশ্নে সবুজ সঙ্কেত আসে কি না। দিল্লির অরবিন্দ কেজরীবাল সরকার দীর্ঘ দিন ধরেই রাজধানীতে মেট্রো চালানোর জন্য সরব। একই ভাবে মেট্রো ও লোকাল ট্রেন চালানোর প্রশ্নে নীতিগত ভাবে রাজি পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্রও। কিন্তু দেশে যেখানে ফি দিন ৭০ হাজার ব্যক্তি সংক্রমিত হচ্ছেন তখন মেট্রো ও লোকাল ট্রেন একসঙ্গে খুলে দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ দিকে যাওয়ার আশঙ্কা করেন স্বাস্থ্যকর্তারা। স্বরাষ্ট্র সূত্রের মতে, তাই আংশিক ঝুঁকি নিয়েই ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ধাপে ধাপে মেট্রো চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মেট্রো সম্পর্কিত সুরক্ষাবিধি আগামী সপ্তাহে প্রকাশ করবে কেন্দ্র। পরিস্থিতির উন্নতি হলে লোকাল ট্রেনের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের আশ্বাস
দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করেই আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নির্দেশিকায় জানিয়েছে কেন্দ্র। তবে কন্টেনমেন্ট এলাকার বাইরে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আংশিক খোলার প্রশ্নে কিছু ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, স্কুলগুলি অনলাইন ক্লাস, টেলি কাউন্সেলিং-এর মতো কাজের স্বার্থে গোটা স্কুলের শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের মোট সংখ্যার অর্ধেককে ২১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে ফি দিন প্রয়োজনে ডাকতে পারবে। অভিভাবকেরা অনুমতি দিলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা স্কুলের শিক্ষকদের কাছে পড়া বুঝতে যেতে পারবে। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে গবেষণারত বা স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়ারা অনুমতি নিয়ে গবেষণাগারে কাজ করতে পারবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy