Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
National News

৭০ বছরে ৩৭০ ধারাকে কেন স্থায়ী করেননি? সাহস পাননি কেন? লালকেল্লা থেকে বিরোধীদের তোপ মোদীর

৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং জম্মু-কাশ্মীরের পুনর্গঠনের ফলে যে নতুন বন্দোবস্ত হয়েছে, তাতে দলমত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা এবং কাশ্মীরের উন্নয়নে একজোট হয়ে কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ। ছবি: এএফপি

স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ। ছবি: এএফপি

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৯ ১৫:৪৪
Share: Save:

স্বাধীনতা দিবসের ভাষণেও রাজনীতির ছোঁয়াচ এড়ালেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজেদের সাফল্য, অন্যদের ব্যর্থতা— এই মন্ত্রেই লালকেল্লা থেকে কাশ্মীরের সমস্যা জিইয়ে রাখার জন্য বিরোধীদের কাঠগড়ায় তুললেন।

বৃহস্পতিবার কাশ্মীর নিয়ে রাজনীতি, পরিবারতন্ত্র, স্বজনপোষণ, সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদের তিরে মোদী বিদ্ধ করলেন বিরোধীদের। নতুন ভারতের স্বপ্ন দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘‘৭০ বছরে যা হয়নি, ৭০ দিনেই সেই কাজ করেছে দ্বিতীয় মোদী সরকার।’’ বাস্তবে পরিণত হয়েছে ‘এক দেশ, এক সংবিধান’— এই মন্ত্র। কাশ্মীরের পাশাপাশি, তিন তালাক রদের কৃতিত্ব নিতে ছাড়েননি যেমন মোদী, বন্যা দুর্গতদের সঙ্গে সমব্যথী হওয়ার বার্তাও দিয়েছেন তিনি এ দিন। উঠে এসেছে ৫০০ লক্ষ কোটির অর্থনীতির কথাও।

কয়েক দিন আগেই ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কাশ্মীরের সামগ্রিক উন্নয়ন, স্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা দিয়ে উপত্যকার মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ দিন তার সঙ্গে যোগ হল বিরোধীদের দীর্ঘসূত্রিতা এবং সমস্যা জিইয়ে রাখার অভিযোগ। এ দিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘৭০ বছরে যে কাজ হয়নি, দ্বিতীয় বার সরকারে আসার পরই ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং ৩৫এ ধারা বিলোপের বিল ভারতীয় সংসদের উভয় কক্ষেই দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাশ হয়েছে। এর অর্থ, সবার মনেই এটা ছিল, সবাই চাইছিলেন। কিন্তু শুরু কে করবে, সেটাই ঠিক হয়নি। জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিলও আমরা পাশ করেছি।’’

মোদী এ দিন বলেন, ‘‘৭০ বছরে প্রায় সব সরকার কিছু না কিছু চেষ্টা কেরেছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত পরিণাম আসেনি। যখন পরিণাম আসে না, তখন নতুন করে ভাবতে হয়। জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখের নাগরিকদের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ হোক, এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে যত বাধা এসেছে, আমরা সেগুলি দূর করার চেষ্টা করেছি।’’

আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসে বড় চমক মোদীর, তৈরি হল চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ

আরও পড়ুন: পাকিস্তানের পাশেই চিন! কাশ্মীর নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে গোপন বৈঠকের আবেদন

এর পরেই বিরোধীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর তোপ, ‘‘গত ৭০ বছরের প্রচেষ্টা শুধু বিচ্ছিন্নতাবাদকে শক্তি জুগিয়েছে, সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিয়েছে, পরিবারতন্ত্রকে পুষেছে আর দুর্নীতি-স্বজনপোষণকে আরও শক্তিশালী করেছে। যার ফলে কাশ্মীরের মহিলাদের অধিকার মিলত না, দলিত ভাই-বোনদের অধিকার মিলত না। জনজাতিদের ছিল না রাজনৈতিক অধিকার। ওঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পিষে মারা হয়েছে।’’ অর্থাৎ স্বাধীনতার পর থেকে জম্মু-কাশ্মীরের সমস্যা যে সব সরকারই জিইয়ে রাখতে চেয়েছে, সেই তিরই বিরোধীদের দিকে ছুড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বিরোধীদের দূষলেও কারও নাম এ দিন করেননি প্রধানমন্ত্রী। প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘ভোটের মাপকাঠিতে সব কিছু বিচার করা কিছু লোক, যাঁরা ৩৭০ কার্যকরী রাখার পক্ষে বলছেন, তাঁরা এত বিপুল জনসমর্থন নিয়েও কেন তাকে স্থায়ী বন্দোবস্ত করেছেন? কেন অস্থায়ী করে রেখেছেন? এত নিশ্চিত ছিলেন, তা হলে স্থায়ী করতে এগিয়ে আসতেন, স্থায়ী করে দিতেন। এর অর্থ, আপনারাও জানতেন, যেটা হয়েছে, সেটা ঠিক হয়নি। কিন্তু সংশোধনের সাহস আপনাদের ছিল না। রাজনৈতিক ভবিষ্যতের উপর প্রশ্ন উঠে যেত। কিন্তু আমার কাছে দেশ আগে, রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই।’’

৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং জম্মু-কাশ্মীরের পুনর্গঠনের ফলে যে নতুন বন্দোবস্ত হয়েছে, তাতে দলমত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা এবং কাশ্মীরের উন্নয়নে একজোট হয়ে কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মন্তব্য, আজ সব দেশবাসী বলতে পারছে, ‘‘এক দেশ, এক সংবিধান।’’

কিছু দিন আগেই সংসদে পাশ হয়েছে তিন তালাক বিল। লালকেল্লা থেকে এ দিন সেই আইনের পক্ষে সওয়াল করে মোদী জানান, তাঁরা সমস্যার মূলে পৌঁছে সেগুলি সমাধান করার চেষ্টা করছেন। তাঁর মতে, মুসলিম মা-বোনেদের মাথার উপর ছিল তিন তালাকের খাঁড়া। ভয়-ভীতির জীবন কাটাতেন। তিন তালাক শিকার হয়তো হননি, কিন্তু যে কোনও সময় স্বামী তালাক বলে দিতে পারেন, এই ভয়েই কাঁটা হয়ে থাকতেন। এমন মন্তব্য করেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘বহু মুসলিম দেশও এই প্রথা রদ করেছে। আমাদের দেশে সতীদাহ রদ করতে পারে, বাল্যবিবাহ রদ করতে পারে, পণপ্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে, তা হলে তিন তালাকের বিরুদ্ধে কেন নয়? সেই তিন তালাক প্রথা রদ হওয়ায় আমাদের মুসলিম মা-বোনেরা সুরক্ষিত হয়েছেন।’’

কেরল, কর্নাটক, গুজরাত, মহারাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ এলাকা বানভাসি। সেই সব এলাকায় দুর্গতদের পাশে সরকার যে সব সময় রয়েছে, সেই বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘‘আজ আমরা যখন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছি, তখন আমাদের দেশেরই বহু নাগরিক বন্যার কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা তাঁদের পাশে সব সময় আছি। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে তাঁদের সব রকম সাহায্য করা হবে।’’

এর বাইরেও এক দেশে এক নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করেছেন মোদী। দেশের অর্থনীতিকে ৫০০ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছে দেওয়ার বার্তাও দিয়েছেন। সে জন্য বিনিয়োগ, পরিকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা-সহ সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের জোয়ার আনার স্বপ্নও ছিল বক্তৃতায়। আর সেই লক্ষে পৌঁছতে যে কোনও বিকল্পই ছাড়বে না তাঁর সরকার, সেটাও স্পষ্ট করতে চেয়েছেন স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE