অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ
ভরপুর নাটকে টানটান মহারাষ্ট্র। ক্ষণে ক্ষণে পাল্টাচ্ছে রাজনৈতিক চিত্র। দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পওয়ারের সঙ্গে কথা বলেছেন সনিয়া গাঁধী। মুম্বইয়ে যাচ্ছেন কংগ্রেস নেতারা। সেখানে গিয়ে সরাসরি পওয়ারের সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা। এর আগে শিবসেনা-এনসিপি জোটকে সমর্থনের প্রশ্নে দিল্লিতে ১০ জনপথে সনিয়ার বাড়িতে বৈঠকের বসে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। পওয়ারও দলের নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছেন। অন্য দিকে রাজ্য়পাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি সময় বাড়াতে রাজি না হওয়ায় এ বার আইনি পথ খুঁজছে শিবসেনা। কংগ্রেস নীতিগত সমর্থনে রাজি হলেও শেষ পর্যন্ত তা মিলবে কি না, তা নিয়ে চরম উৎকণ্ঠা এনসিপি শিবিরে। উঁকি দিচ্ছে রাষ্ট্রপতি শাসনের সম্ভাবনাও।
কংগ্রেস নীতিগত ভাবে সমর্থনের কথা বলেও সরকারি ভাবে সমর্থনপত্র দিতে এত দেরি হওয়ায় শরদ পওয়ার ক্ষুব্ধ। অসুস্থতার জন্য সোমবারই মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শিবসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত। মঙ্গলবার সকালের দিকেই হাসপাতালে গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন শরদ পওয়ার। আজ কংগ্রেসের সঙ্গে এনসিপির কোনও বৈঠক হচ্ছে কি না— এই প্রশ্ন করতেই পওয়ার বলেন, ‘‘কে বলল বৈঠক আছে? আমি তো জানি না।’’
সাংবিধানিক ভাবে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের চাবি আপাতত এনসিপির হাতে। কারণ তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে তাদেরই ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল। তাঁদেরও ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন তিনি। সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে আজ রাত সাড়ে ৮টায়। কিন্তু এনসিপির অন্দরের খবর, এত স্বল্প সময়ে শিবসেনা-কংগ্রেসকে এক ছাতার তলায় এনে সমর্থনপত্র জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব। দলের একাধিক শীর্ষ নেতা তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিশেষ করে মঙ্গলবার কংগ্রেস যে ভাবে নীতিগত সমর্থনের কথা জানিয়েও শেষ পর্যন্ত আবার আলোচনার কথা বলেছে, তাতে এই সন্দেহ আরও জোরদার হয়েছে।
কেন এমন আশঙ্কা? কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্রে খবর, মতাদর্শগত ভাবে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনার সঙ্গে সহাবস্থানে তাদের কতটা ক্ষতি হতে পারে বা আপাত সমঝোতা হলেও পাঁচ বছ ধরে সরকার চালানোর মতো পরিস্থিতি থাকবে কি না, এই সব প্রশ্নে দ্বিধাগ্রস্ত হাত শিবির। আবার শুধুমাত্র বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার প্রশ্ন তুলেও কংগ্রেসের পক্ষে সমর্থন দেওয়া কঠিন। কারণ, বিজেপি আর সরকার গঠনের দৌড়ে নেই। ফলে সংশয়ে শরদ পওয়ার শিবির।
NCP Chief Sharad Pawar on being asked if there is a meeting scheduled today between Congress and NCP: Who says there is a meeting? I don't know. #MaharashtraGovtFormation pic.twitter.com/orGqwfyBZj
— ANI (@ANI) November 12, 2019
আরও পডু়ন: কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ছেড়েও মিলল না সমর্থনের চিঠি, দ্বিধায় কংগ্রেস, অপেক্ষায় সেনা
অন্য দিকে শিবসেনা ক্ষুব্ধ রাজভবনের ভূমিকায়। দলের নেতাদের অভিযোগ, রাজ্যপাল বিজেপিকে তিন দিন সময় দিয়েছিলেন সরকার গঠনের জন্য। কিন্তু শিবসেনাকে দেওয়া হয়েছিল মাত্র এক দিন— ২৪ ঘণ্টা। এমনকি সময় বাড়ানোর আর্জিতেও কর্ণপাত করেননি রাজ্যপাল। তাই এ বার আইনি পথে হাঁটার রাস্তায় উদ্ধব ঠাকরের দল। দলীয় সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবীদের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেছেন উদ্ধবরা। রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করার মতো আইনি কোনও সংস্থান রয়েছে কি না, চলছে তার খোঁজ।
একই সঙ্গে অবশ্য সরকার গঠনের প্রক্রিয়া থেকেও এখনই সরে আসতে নারাজ সেনা নেতৃত্ব। সোমবার রাজভবন থেকে বেরিয়েও উদ্ধব-পুত্র আদিত্য ঠাকরেও সেই কথাই ঘোষণা করেন। বলেন, ‘‘রাজ্যপালের কাছে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু তিনি তা মঞ্জুর করেননি। তবে মহারাষ্ট্রে স্থায়ী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া থেকে আমরা সরছি না। শরিকদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।’’
আরও পড়ুন: উত্তপ্ত জেএনইউ, ছাত্র-বিক্ষোভে চলল জলকামান
নীতিগত ভাবে সমর্থনে রাজি হওয়ার পরেও সময় নিয়েছে কংগ্রেস। সোমবার সন্ধ্যায় দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেছিলেন, ‘‘মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতি নিয়ে শরদ পওয়ারের সঙ্গে ফের কথা বলবে দল।’’ কিন্তু সেই কথোপকথন কী নিয়ে, সে বিষয়ে আলোকপাত করতে রাজি হননি তিনি। ফলে সেই আলোচনা আজও দিনভর চলবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। সোমবার একটা সময় মনে হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত হয়তো মহারাষ্ট্রের সঙ্কট কাটল। কিন্তু রাত সাড়ে ৮টায় এনসিপিকে সরকার গঠনের জন্য ডাকার পর পরিস্থিতি ফের পাল্টে যায়। আজ মঙ্গলবার সেই সঙ্কট কাটে কি না, সে দিকে নজর থাকবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy