মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে ইস্তফাপত্র হাতে কংগ্রেসের বিদ্রোহী বিধায়করা। ছবি: পিটিআই।
কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপির পথে পা বাড়ানো জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং তাঁর অনুগামী ২২ বিধায়ককে ঘিরে নাটক তুঙ্গে মধ্যপ্রদেশে। গত ২৪ ঘণ্টা ধরে টানাপড়েনের পর বুধবার দুপুরে বিজেপিতে যোগ দিলেন জ্যোতিরাদিত্য। কিন্তু তাঁর অনুগামী বিদ্রোহী বিধায়কদের একাংশ বিজেপিতে যোগ দেোয়ার ব্যাপারে বেঁকে বসেছেন বলে খবর। জ্যোতিরাদিত্যের পদত্যাগপত্র সনিয়ার কাছে পৌঁছনোর পরে তাঁরা ইস্তফা দেন স্পিকারকে। বিজেপিতে যাওয়ার প্রশ্নে তাঁদের অধিকাংশেরই সায় নেই বলে খবর। তাতে নতুন করে মাঠে নেমে পড়েছে কমলনাথ সরকার। বিজেপির কবল থেকে বিদ্রোহী বিধায়কদের উদ্ধার করে আনতে সক্রিয় হয়েছে তারা। সেই সঙ্গে নিজেদের ৯৫ জন বিধায়ককেও জয়পুর সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর সোমবার কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভাপতি সনিয়া গাঁধীর কাছে নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তার পরেই একে একে ইস্তফা পত্র জমা দেন ২২ বিদ্রোহী বিধায়ক, যার মধ্যে শামিল ছিলেন কমলনাথ সরকারের ৬ মন্ত্রীও। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় ঘটনাবলী যে ভাবে এগিয়েছে, তাতে তাঁদের মধ্যে অনেকেই এখন দোলাচলে বলে জানা গিয়েছে। বিদ্রোহী বিধায়কদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে দলে ফেরাতে গতকাল রাতেই বেঙ্গালুরু রওনা দেন কংগ্রেস নেতা সজ্জন সিংহ বর্মা এবং গোবিন্দ সিংহ। তার পর অনেকেরই মন বদলেছে বলে দলীয় সূত্রে দাবি করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, রাজ্যসভায় জ্যোতিরাদিত্যের জায়গা পাকা করা নিয়ে দলের উপর চাপ সৃষ্টি করতেই ওই বিধায়করা ইস্তফা দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, তাঁদের নিয়ে হয়ত নতুন দল গঠন করবেন জ্যোতিরাদিত্য। কিন্তু বিজেপিতে যেতে বলায় তাঁদের মধ্যে ১০-১২ জন বেঁকে বসেছেন।
কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, জ্যোতিরাদিত্যের অনুগত হলেও কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ায় সায় নেই ওই বিধায়কদের। তাই বেঙ্গালুরুর হোটেল থেকেই তাঁদের মধ্যে অনেকে কমলনাথ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেত্রী শোভা ওঝা বলেন, ‘‘চার নির্দল বিধায়ক আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। সিন্ধিয়াজির সঙ্গে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁরাও এখনও আমাদের সঙ্গে। কারণ ওঁরা বুঝে গিয়েছেন, এক জনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য ওঁদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে বসেছে।’’ আগামী ১৬ মার্চ মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় আস্থাভোট। তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পারলে মুখ থুবড়ে পড়বে কমলনাথ সরকার। কিন্তু আস্থাভোটে তাঁরাই জয়ী হবেন বলে আত্মবিশ্বাসী শোভা ওঝা। তাঁর কথায়, ‘‘আস্থাভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে দেব আমরা। ভুল বুঝিয়ে কংগ্রেস বিধায়কদের বেঙ্গালুরু নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এখনও ওঁরা আমাদেরই সঙ্গে। এমনকি বেশ কিছু বিজেপি বিধায়কও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।’’
আরও পড়ুন: বিজেপিতে যোগ দিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া
রাজা-মহারাজাদের দিন শেষ, তাই জ্যোতিরাদিত্য বিজেপিতে গেলেও, দলের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না বলে আত্মবিশ্বাসী মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস বিধায়ক অর্জুন সিংহও। তাঁর কথায়, ‘‘মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস এবং কমলনাথের সরকারই থাকবে। ১৬ মার্চ আস্থাভোট হলেই তা দেখতে পাবেন আপনারা। রাজা-মহারাজাদের দিন শেষ। তাই কারও চলে যাওয়াতে দলের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না।’’ একই সুর ধরা পড়েছে মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বালা বচ্চনের গলায়। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস নিরাপদ জায়গায় রয়েছে। প্রত্যেক বিধায়কের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর যোগাযোগ রয়েছে। খুব শীঘ্র সব ঠিক হয়ে যাবে। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে দেখাব আমরা। ২০২৩ পর্যন্ত রাজ্যে আমাদেরই সরকার থাকবে।’’
আরও পড়ুন: ‘অমিত-নির্মলাকেও ছাপিয়ে যাবেন!’ সিন্ধিয়াকে কটাক্ষে বিঁধলেন দিগ্বিজয়
২৩০ আসনের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় মোট বিধায়ক সংখ্যা ২২৮। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ১১৫ জন বিধায়ক দরকার কোনও দলের। চার নির্দল বিধায়ক, দুই বহুজন সমাজ পার্টি (বসপা)-র বিধায়ক এবং এক জন সমাজবাদী পার্টির (সপা)বিধায়কের সমর্থনে এত দিন সেখানে ১২১টি আসন ছিল কংগ্রেসের দখলে। ২২ জন বিদ্রোহী বিধায়ক ইস্তফা দেওয়ার পর তাদের আসনসংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৯৯-তে। নির্দল, বসপা এবং সপার তরফে সমর্থন তুলে নিলে সে ক্ষেত্রে তাদের আসনসংখ্যা দাঁড়াবে ৯১। সে ক্ষেত্রে বিজেপির বিধানসভার ম্যাজিক সংখ্যা এসে ঠেকবে ১০৪-এ। বিজেপির কাছে যেহেতু ১০৭ জন বিধায়ক রয়েছে, তাই আস্থাভোট হলে তাদের জয়লাভে কোনও বাধা থাকবে না। কিন্তু জ্যোতিরাদিত্য-সহ কংগ্রেসের বিদ্রোহী নেতাদের দলে টানা নিয়ে বিজেপির অন্দরেও অসন্তোষ জমা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy