লোকসভা মহাযুদ্ধের শেষ লগ্নে এসে লড়তে হচ্ছে রাজীব গাঁধীকেও। মৃত্যুর আঠাশ বছর পরেও!
দুর্নীতিতে ‘নম্বর ওয়ান’ হিসেবে রাজীব গাঁধীর জীবনকাল সমাপ্ত হয়েছে— এক জনসভায় এমন কথা বলে ভোটের মোড় সুকৌশলে ঘোরাতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জবাবে রাহুল গাঁধী ‘বিশাল আলিঙ্গন’ আর ‘ভালবাসা’ই ফেরত দিয়েছিলেন। কিন্তু মোদী তা নিলে তো! গত কাল ফের তিনি রাহুলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। বলেন, শেষ দু’দফার ভোটে রাজীবের মানসম্মান নিয়ে লড়বার ‘খেলা’ খেলতে চান তিনি।
অথচ এই মোদীকেই রাফাল নিয়ে বিতর্কে বসতে বলে গত দেড় বছরে কয়েকশো বার চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন রাহুল। মোদী সে সব কানেও তোলেননি। আজ তিনি রাহুলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ছেন দেখে কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, মোদী হাজার চেষ্টা করলেও বেকারি, কৃষি সমস্যার মতো মৌলিক বিষয় থেকে দৃষ্টি ঘোরাবে না কংগ্রেস। দল বুঝতে পারছে, এটি মোদীর চাল। কিন্তু তার পরেও রাজীব নিয়ে গাঁধী পরিবার-সহ গোটা কংগ্রেসের যে আবেগ আছে, মোদীর কথার পরে সেখান থেকে মুখ ফেরাতেও পারছে না তারা। মোদী-অমিত শাহরাও এই বিতর্কে ইতি টানতে নারাজ। অতএব?
যুদ্ধ চলছে।
হরিয়ানার সভায় আজ প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা নাম না করে মোদীকে ‘দুর্যোধন’-এর সঙ্গে তুলনা করে বললেন, ‘‘এই দেশ কখনও অহঙ্কার মাফ করেনি। মহাভারত সাক্ষী, এমন অহঙ্কার দুর্যোধনেরও ছিল। তাঁকে সত্য বোঝাতে শ্রীকৃষ্ণ গেলে তাঁকেও বন্দি করার চেষ্টা করেন।’’ রাহুল গাঁধী এক সাক্ষাৎকারে বললেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী আমাকে ঘৃণা করেন না। কংগ্রেসেকে, জওহরলাল নেহরু বা রাজীব গাঁধীকেও নয়। নরেন্দ্র মোদীজি ঘৃণা করেন নরেন্দ্র মোদীকে। আমি তাঁর হৃদয়ে ভালবাসা ভরে দেব। আমার ভালবাসা থেকে বাঁচতে পারবেন না নরেন্দ্র মোদী।’’
শুধু রাহুল-প্রিয়ঙ্কা নন, পুরুলিয়ার বড়জোড়ার সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘রাজীব গাঁধী মারা গিয়েছেন। তাঁকে বলছে ‘করাপ্ট নম্বর ওয়ান’! যে লোকটা দেশের জন্য জীবনদান করেছে, তুমি মানো না মানো, পছন্দ করতে পারো, না করতে পারো, এত অশ্রদ্ধা, এত ঘৃণা কিসের?’’ সীতারাম ইয়েচুরি খড়্গপুরের সভায় কটাক্ষ করলেন, ‘‘মহাভারতে কৌরব বংশে আমরা দুই ভাইকে চিনতাম। দুর্যোধন ও দুঃশাসন। এখন বিজেপিতে দু’জনকে চিনি। একজন নরেন্দ্র মোদী, অন্যজন অমিত শাহ।’’
শুধু রাজনীতির সঙ্গে যুক্তরাই নন, এ দিন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুশো শিক্ষক রাজীব গাঁধী সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছেন। কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেব সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। অমেঠীর এক যুবক মোদীর মন্তব্যের নিন্দা করে নির্বাচন কমিশনকে রক্ত দিয়ে চিঠি লিখেছেন।
বসে নেই বিজেপিও। বঙ্গে প্রচারে গিয়ে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাজীব গাঁধীর সময়ে বফর্স হয়েছে। তিনি কী ভুল বলেছেন? রাহুল-বাবা বলুন, রাজীব গাঁধীর সময়ে বফর্স হয়নি, ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা হয়নি? রাহুল গাঁধী বলছেন, তাঁর বাবাকে অপমান করা হয়েছে। সত্যি কথা বলা অপমান? প্রিয়ঙ্কা বঢরাও আজ নরেন্দ্র মোদীকে ‘দুর্যোধন’ বলেছেন। তখন অপমানের কথা মনে রাখেন না? ২৩ মে প্রমাণ হয়ে যাবে, কে দুর্যোধন, কে অর্জুন।’’
বিজেপির পাশাপাশি আসরে আরএসএসও। তারা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ’খানেক শিক্ষকের পাল্টা চিঠি হাজির করেছে। শিখ দাঙ্গার শিকার ৮৪ জনের চিঠি সামনে এনে রাজীব গাঁধীর নিন্দা করা হয়েছে। বিজেপির শরিক অকালি নেতারাও রাজীবের সমালোচনায় নেমেছেন।
কেন রাজীব গাঁধীকে মৃত্যুর ২৮ বছর পরে এ ভাবে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে চাইলেন মোদী?
বিজেপির অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, এই এক অস্ত্রে আসলে তিন পাখি মারতে চেয়েছেন মোদী। এক, গোটা প্রচার জুড়ে মোদীকে ‘চোর’ বলেছেন রাহুল। তার মোকাবিলায় মোদী বলতে চাইলেন, তাঁর বাবাকে ‘চোর’ বলা হত। বফর্স নিয়ে আদালত থেকে নিষ্কৃতি পেলেও সেটি মৃত্যুর পর। ফলে মোদী ভুল কিছু বলেননি। দুই, ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার পরে অ্যান্ডারসনকে পালানোর সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল রাজীবের বিরুদ্ধে। এটি আসলে নীরব মোদী থেকে বিজয় মাল্যদের পাল্টা দেওয়ার চেষ্টা।
তৃতীয় বড় কারণটি হল শিখ ভোট। যে দু’দফার ভোট বাকি আছে, সেখানে পঞ্জাব, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্য মিলিয়ে প্রায় ৩০টি আসনে শিখেদের ভোট প্রাসঙ্গিক। রাজীবের কথা তুলে মোদী সেই স্মৃতি ফের উস্কে ভোটে ফায়দা তুলতে চাইছেন। কংগ্রেসও সেটি বুঝছে। কিন্তু রাজীব আবেগের কথা মাথায় রেখে মোদীর এই ‘ফাঁদে’ পা না দিয়েও থাকতে পারছে না।
কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ বলেন, ‘‘আসল বিষয়গুলি ছেড়ে মোদী প্রতি ধাপে নতুন নতুন বিষয় তুলছেন। যাতে মৌলিক সমস্যাগুলি ঢাকা পড়ে। সে কারণেই তিনি কখনও সেনা নিয়ে ভোট চান, কখনও বিরোধী জোটকে ‘ভেজাল’ বলেন, কখনও রাজীব গাঁধীর নামে ভোটে লড়বার কথা বলেন। কিন্তু মানুষ সব বোঝেন। তাঁরা জবাবও দেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy