বরুণ গাঁধী। —ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদী কেমন? এক নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদীর ভূয়সী প্রশংসা করতে গিয়ে নিজের পরিবারের পূর্বতন প্রধানমন্ত্রীদের কাজ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন গাঁধী পরিবারেরই ছেলে বরুণ গাঁধী। সরাসরি নাম না করলেও তাঁর বাবার দাদু জওহরলাল নেহরু, ঠাকুরমা ইন্দিরা গাঁধী এবং জেঠু রাজীব গাঁধীর দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন নিয়েও সমালোচনা করলেন বরুণ। এই নিয়ে কংগ্রেস এখনও কোনও মন্তব্য করেনি।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সঞ্জয় গাঁধী এবং মানেকা গাঁধীর ছেলে বরুণ উত্তরপ্রদেশের পিলিভিট লোকসভা আসনে লড়ছেন। রবিবার নির্বাচনী প্রচারে তিনি পিলিভিটে জনসভা করেন। সেই জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘ভীষণ সততার সঙ্গে বলছি, আমার পরিবারেরও কয়েকজন দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু আজ যে সম্মান নরেন্দ্র মোদী দেশকে এনে দিয়েছেন, আর কেউ দেশের জন্য তা করতে পারেননি। এই মানুষটি দেশের জন্য বাঁচেন এবং দেশের জন্য মৃত্যুকে বরণ করে নেবেন। তিনি শুধুমাত্র দেশের জন্যই ভাবেন।’’
জনগণের সামনে নরেন্দ্র মোদীর সততার প্রশংসা করেন বরুণ। নরেন্দ্র মোদীকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘বাজপেয়ীজি খুব সাধারণ পরিবারের ছেলে ছিলেন, মোদীজীও অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল পরিবার থেকে উঠে এসেছেন... এই পাঁচ বছরে তাঁর উপর একটাও দুর্নীতির দাগ লাগেনি। যেখানে তাঁর পরিবারে কেউ নেই, তিনি কার জন্য দুর্নীতি করবেন?’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এখনও পর্যন্ত বরুণ গাঁধীর পরিবারের তিনজন দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গাঁধী এবং রাজীব গাঁধী। বরুণের কথা থেকেই পরিষ্কার ‘আমার পরিবারেও কয়েকজন দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন’ বলতে তিনি এঁদেরই বুঝিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি এই তিনজনের দায়িত্ববোধেরই সমালোচনা করেছেন।
আরও পড়ুন: জাতীয়তাবাদ আর সুশাসনের মন্ত্র শোনালেন মোদী, বিজেপির ইস্তাহারে ফের রামমন্দির
বিমান দুর্ঘটনায় বরুণের বাবা সঞ্জয় গাঁধীর মৃত্যু হয় ১৯৮০ সালে। স্বামীর মৃত্যুর পর পরই মানেকা গাঁধী শিশু বরুণকে নিয়ে গাঁধী পরিবার থেকে বেরিয়ে যান। মা মানেকা গাঁধী এবং ছেলে বরুণ গাঁধী দু’জনেই বর্তমানে বিজেপির সাংসদ। ২০০৪ সালে বিজেপিতে যোগ দেন বরুণ গাঁধী। এতদিন উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুরের সাংসদ ছিলেন বরুণ এবং মানেকা পিলিভিটের সাংসদ। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মানেকা গাঁধী ছেলের লোকসভা কেন্দ্র সুলতানপুর থেকে লড়ছেন এবং ছেলে বরুণ মায়ের লোকসভা কেন্দ্র পিলিভিট থেকে লড়ছেন।
নরেন্দ্র মোদীর নামে এখন প্রচুর প্রশংসা করলেও এই বরুণই এক সময় বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে বিজেপির অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছিলেন। সিবিআই সঙ্কটে যখন জেরবার হয়ে পড়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী, ঠিক তখনই পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরব হন বরুণ গাঁধী। ভারতে কেন এই মূল্যবৃদ্ধির হার বেশি এবং কেন তার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন, এই নিয়ে প্রবন্ধ লিখে দলকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলে দেন মানেকা-তনয়। এমনকি, সোশ্যাল মিডিয়ায় বরুণ এও অভিযোগ করেছিলেন, সাংসদদের বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন বলে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে তাঁর কাছে নাকি ফোন আসে। বলা হয়— কেন এ সব কথা বলছেন? এ সব বিভিন্ন কারণে, দলকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্য দলে বরুণের বিশ্বাসযোগ্যতাও কমে গিয়েছিল অনেকটা। পাশাপাশি তাঁর লোকসভা কেন্দ্র সুলতানপুরে সমর্থনও হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি। এমনকি, বিজেপি সূত্রে এটাও শোনা গিয়েছিল, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বরুণ বিজেপির টিকিট নাও পেতে পারেন।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বরুণকে জেতানোর জন্যই মা মানেকা নিজের নিরাপদ আসনটা তাঁর জন্য ছেড়ে দিলেন। নিজে লড়ছেন ছেলের সুলতানপুর আসনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy