(বাঁ দিক থেকে) তনভীর হাসান, কানহাইয়া কুমার ও গিরিরাজ সিংহ। —ফাইল চিত্র
শহরের ভাল হোটেলে কোনও ঘর খালি নেই। কানহাইয়া কুমারের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এত লোক এসেছেন যাঁরা আগে বেগুসরাইতো দূরের কথা বিহারেও আসেননি। কেউ সাংবাদিক, কেউ নির্বাচন পর্যবেক্ষক, কেউ বা শুধুই কৌতূহলী! নির্বাচনের মরসুমে জমে উঠেছে বেগুসরাইয়ের ব্যবসাও।
বিহারের জাতিগত সমীকরণের চিত্র বেগুসরাইয়ে স্পষ্ট ভাবেই অনুভব করা যায়। স্বাভাবিক ভাবেই তাই লোকসভা কেন্দ্রে চর্চার অন্যতম বিষয় মুসলমান এবং ভূমিহার ভোট। বেগুসরাইতে প্রায় তিন লক্ষ মুসলমান এবং পাঁচ লক্ষ ভূমিহার ভোটার রয়েছেন। ভূমিহারের পাশপাশি দলিত এবং কুর্মি ভোটারের সংখ্যাও রয়েছে তিন লক্ষের কাছাকাছি।
বেগুসরাইয়ের মুসলমান ভোটারদের একটা বড় অংশ কানহাইয়ার প্রশংসা করছেন। কিন্তু তাঁরা জানাচ্ছেন, ভোট দেবেন আরজেডি প্রার্থী তনভীর হাসানকেই। কেন এমন ভাবছেন তাঁরা? বেগুসরাই শহরের বাসিন্দা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘‘তনভীর ভাই প্রার্থী হিসবে ঠিক। কানহাইয়াও ঠিকঠাক। কিন্তু কানহাইয়া নির্দল লড়লে ভাল করতেন। সিপিআই থেকে লড়ে লাভ হবে না।’’
কেন এমন কথা বললেন মোস্তফা? আসলে বেগুসরাইয়ে ভূমিহার ছাড়া বাকি সম্প্রদায়ের কাছে কানহাইয়ার ছবি উজ্জ্বল। কিন্তু তাঁর দল সিপিআই বেগুসরাইতে ভূমিহারদের দল হিসেবেই পরিচিত। মুসলমানদের কাছে সিপিআইয়ের গ্রহণযোগ্যতা নেই বললেই চলে। কিছু দিন আগে বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব বলেছিলেন, ‘‘সিপিআই বিহারে একটি জেলা এবং একটি জাতির দলে পরিণত হয়েছে।’’ বেগুসরাইয়ের বর্তমান সিপিআই নেতৃত্ব দেখলে তা বোঝা যাচ্ছে বলে দাবি আরজেডি নেতাদের। আর এতেই লাভ হচ্ছে বিজেপি প্রার্থী গিরিরাজ সিংহের।
আরও পড়ুন: পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মায়া, মমতা বা চন্দ্রবাবুকেই পছন্দ, রাহুলের নামই করলেন না শরদ
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক সুবিধার পাওয়ার জন্য নিজের সম্প্রদায়কে ‘ওবিসি’ গোষ্ঠীভুক্ত করেছিলেন মোদী: মায়াবতী
যদিও তেজস্বীর কথা মানতে রাজি নন বেগুসরাইয়ের সিপিএম নেতা ভগবানপ্রসাদ সিনহা। তিনি বলেন, ‘‘তেজস্বীকে যা শেখানো হয়েছে তাই বলছে। এক সময়ে লালুপ্রসাদ স্লোগান দিতেন সিপিআই ভূমিহারদের দল। বামপন্থী দলে জাতের ভিত্তিতে নেতৃত্ব মেলে না। যোগ্যতা অনুযায়ী নেতৃত্ব দেওয়া হয়।’’ বিহারের বাম নেতাদের দাবি, নয়ের দশকে সিপিআইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন জালালুদ্দিন আনসারি। এ ছাড়া সিপিআইয়ের ভাল সময়ে রাজ্য থেকে সাংসদ হয়েছেন রামাবতার যাদব, রামআসরে যাদব, চন্দ্রশেখর যাদব, সুরজপ্রসাদ সিংহ কুশওয়াহারা। বেশ কয়েক জন মুসলমান সম্প্রদায় থেকেও বিধায়ক হয়েছেন। বাম নেতাদের প্রশ্ন, সিপিআই কী করে ভূমিহারের দল হল? ভগবানবাবুর দাবি, ‘‘কানহাইয়া জাতির রাজনীতি করছেন না। করলে সবচেয়ে বেশি ভোট নিজের জাতির থেকেই পেতেন। এখানে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করছে আরজেডি আর বিজেপি।’’
কানহাইয়া এবং তনভীর হাসানের লড়াইয়ে লাভ বেশি হচ্ছে গিরিরাজের। জয় নিয়ে তিনি এতটাই নিশ্চিত যে ভোটপ্রচারে গিয়ে গাড়ি থেকে পর্যন্ত নামছেন না! ভাষণ দেওয়া তো দূরের কথা। গোটা লড়াইটা সোশ্যাল মিডিয়া আর টিভি সাংবাদিকদের মাধ্যমেই সারছেন তিনি। প্রতিদিনই কিছু না কিছু বিতর্কিত কথা বলে মেরুকরণকে আরও চাঙ্গা করছেন। দলের নেতারা বলছেন, ‘‘শরীর মন দুটোই ঠিক যাচ্ছে না দাদার। তাই কিছুটা অভিমান নিয়েই প্রচার সারছেন তিনি।’’ অন্য দিকে, রাতদিন এক করে প্রচার করছেন কানহাইয়া ও তনভীর হাসান। তাঁদের দেখে বেগুসরাই বাজারের রাজু রবিদাসের কথা, ‘‘ভোটকে জমিয়ে দিয়েছেন এই দু’জনই। কিন্তু জিতবে অন্য কেউ!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy