কর্জত উপজেলা হাসপাতাল। —নিজস্ব চিত্র
সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার, বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের আকাল মেটাতে বিদেশে থাকা চিকিৎসকদের আহ্বান জানানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলে গত মঙ্গলবার নবান্নের বৈঠকে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্য দফতর কিন্তু একই রকম সঙ্কটের সমাধান ইতিমধ্যে বার করেছে। সেখানে ক্ষমতায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার।
মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলার নবীন ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর বিজয় সুরবংশীর মাথায় পরিকল্পনাটি প্রথম আসে। ‘বেড়াতে এসে চিকিৎসা’-র সেই প্রকল্প লুফে নিয়েছে সে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। রায়গড়ের ছোট্ট তহশিল কর্জত-কে বেছে নেওয়া হয়েছে পাইলট প্রকল্পের জায়গা হিসাবে। পর্যটনকে আশ্রয় করেই কর্জত উপজেলা হাসপাতালে মুম্বই, পুণের মতো শহর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এনে আউটডোর এবং অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম দফায় বেসরকারি হাসপাতালের ২০ জন বিশেষজ্ঞ সাড়া দিয়েছেন। তাঁদেরই অন্যতম ইউরোগাইনোকোলজিস্ট অপর্ণা হেগড়ে ফোনে বললেন, ‘‘দারুণ ভাবনা। আমি যাচ্ছি। আমার অনেক চিকিৎসক বন্ধুরাও যাচ্ছেন।’’
পাহাড়ের কোলে সবুজ ঢেউখেলানো উপত্যকা। তাই সপ্তাহান্তে পর্যটকের ঢল নামে কর্জতে। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা ভাল নেই। প্রায় ২ লক্ষ মানুষ এখানে থাকেন, তার মধ্যে ৬৫ হাজার বিভিন্ন জনজাতির। তাঁদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে একটি উপজেলা হাসপাতাল ও কয়েকটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। উপজেলা হাসপাতালে এক জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ছাড়া গোটা তহশিলে আর কোনও বিশেষজ্ঞ নেই।
বিজয়ের কথায়, ‘‘শহরের হাসপাতালে যাওয়ার পয়সা নেই। শহরে যেতে-যেতেই অনেকের মৃত্যু হত। অথচ প্রতি সপ্তাহে যত পর্যটক কর্জতে আসেন, তাঁদের অনেকেই শহরের নামী হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তাঁদের কাজে লাগালে কেমন হয়!’’
যেমন ভাবা তেমন কাজ। ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরের প্রস্তাব গেল স্বাস্থ্য দফতরে। তা দ্রুত সবুজসঙ্কেতও পেল।
বিজয় বলেন, ‘‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা সপরিবারে সপ্তাহান্তে কর্জত বেড়াতে আসবেন। ভাল হোটেলে তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করবে প্রশাসন। বিনিময়ে সকালের দিকে তাঁরা উপজেলা হাসপাতালে কয়েক ঘণ্টা আউটডোরে রোগী দেখবেন, অস্ত্রোপচারও করবেন। সমাজসেবাও হল, ঘোরাও হল। সরকারি হাসপাতালও বিশেষজ্ঞ পেল।’’ তিনি জানালেন, কর্জতের বড়-বড় হোটেলগুলির সঙ্গে প্রশাসনের আলোচনা হয়েছে। তারা পালা করে নিখরচায় চিকিৎসকদের সপরিবারে অতিথি করতে রাজি হয়েছে।
রায়গড়ের সিভিল সার্জন (জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা) অজিত গাওয়ালি টেলিফোনে বললেন, ‘কর্জতের গ্রামাঞ্চলে প্রতি ১০টি বাড়ি-পিছু আমরা ‘আরোগ্য দূত’ নামে একজন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করছি। তাঁরা কোন বাড়িতে কোন রোগী আছে, তার তালিকা করবেন। ,কর্জত হাসপাতালে যে দিন যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শহর থেকে এসে রোগী দেখবেন, সেখানে রোগীদের নিয়ে আসবেন। পরবর্তীকালে রোগীর ফলোআপ করা বা কোনও সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করার কাজও সেই আরোগ্য দূত করবেন।’’
পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলেও কিন্তু প্রকৃতি অকৃপণ। আর সপ্তাহান্তে বেড়ানোর অভ্যাসও প্রবল.....।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy