Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

কোমার চিকিৎসায় মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র! ‘গবেষণা’ দিল্লির লোহিয়া হাসপাতালে

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল বলেছিলেন, রামায়ণের রাম-সেতু তৈরি করেন ভারতের ইঞ্জিনিয়ারেরা।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:১৮
Share: Save:

হাসপাতালে ডাক পড়েছে দিল্লির লালবাহাদুর শাস্ত্রী রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত বিদ্যাপীঠের শিক্ষকদের! মস্তিষ্কে আঘাত পেয়ে কোমায় চলে-যাওয়া রোগীদের কানে সাত দিনে সওয়া লক্ষ বার ‘মহামৃত্যুঞ্জয়’ মন্ত্র শোনাতে।

এমনই ‘গবেষণা’ চলছে দিল্লির রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে। নেপথ্যে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের গবেষক অশোক কুমার।

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল বলেছিলেন, রামায়ণের রাম-সেতু তৈরি করেন ভারতের ইঞ্জিনিয়ারেরা। আর অশোকের ‘বিশ্বাস’, রাম-সেতু তৈরির আগে রাম ‘মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র’ পড়েছিলেন। সেই মন্ত্রে আহত সৈনিকেরা সুস্থ হয়ে উঠতেন। তাই এ কালেও কোমায় চলে-যাওয়া রোগীদের কানে ওই মন্ত্র দিলে তিনি সেরে উঠতে পারেন।

বিশ্বাস অনুযায়ী ফল মিলছে কি না, তা দেখতেই লোহিয়া হাসপাতালে চলছে রোগীদের মন্ত্র শোনানো। এই ‘গবেষণা’-র জন্য ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) গত তিন বছর ধরে অশোককে মাসিক ভাতা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন আইসিএমআর-এর কাঁধেই চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণার উন্নতি ও দিশা নির্দেশের ভার।

কাণ্ড শুনে কলকাতার স্নায়ুশল্যবিদ আশিস ভট্টাচার্য জানালেন, এখনকার চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর কোনও মান্যতা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরি-র রোগীদের ক্ষেত্রে মিউজিক থেরাপির একটা ভূমিকা আছে। হেডফোনে পছন্দের সঙ্গীত শুনে রোগী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠছেন, এমন নজির রয়েছে। তবে তার সঙ্গে মহামৃত্যুঞ্জয় স্তোত্রের সম্পর্কের প্রমাণ রয়েছে বলে জানা নেই।’’

ক্ষমতায় এসে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, গণেশের মাথায় হাতির মাথা বসানোর সময়ে এ দেশে নিশ্চয়ই প্লাস্টিক সার্জারির লোক ছিলেন। পোখরিয়াল বলেছিলেন, মাধ্যাকর্ষণ আবিষ্কার হয় ভারতে, এতে নিউটনের ভূমিকাই নেই। বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর দাবি করেন, গোমূত্র খেয়েই তাঁর স্তনের ক্যান্সার সেরেছে। বিরোধীদের কটাক্ষ, যে দেশে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা এ সব দাবি করেন, সে দেশে গবেষণাও তেমন হবে!

নিউরোফার্মাকোলজিস্ট অশোক এর আগে দিল্লির এমসে চাকরি করার সময়ে সেখানকার রোগীদের উপরে গবেষণা করতে চেয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষ ‘অবৈজ্ঞানিক’ বলে তাঁর প্রস্তাব খারিজ করে দেন। পরে লোহিয়ায় চাকরি করতে এসে গবেষণার ছাড়পত্র আদায় করেন তিনি। গত তিন বছরে ৪০ জন রোগীর কানে মন্ত্র পাঠ করিয়েছেন অশোক। তাঁর দাবি, ‘‘নাটকীয় উন্নতি হয়েছে।’’ তবে বিভাগীয় প্রধান অজয় চৌধুরি জানান, প্রাথমিক ভাবে এই মন্ত্রের ‘সুফল’ স্পষ্ট নয়। চূড়ান্ত ফল না-আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। কলকাতায় স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ রবীন সেনগুপ্তের বক্তব্য, ‘‘এ রকম কিছু হতে পারে বলে জানা নেই। তবে গবেষণা অনুমোদন যখন পেয়েছে, তখন নিশ্চয়ই তার কোনও ভিত্তি রয়েছে। সেটা কী, তা জানা জরুরি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy