Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
India Lockdown

সীমানা পেরোতে পরিযায়ীদের ভরসা ‘গাইড’

কথাবার্তা-হালচাল দেখে স্থানীয় ভেবে সন্দেহও করছে না ঝাড়খণ্ড পুলিশ, দাবি শ্রমিকদের।

মরিয়া: বরাকর নদ পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডের পথে আসানসোলে আটকে থাকা এক দল পরিযায়ী শ্রমিক। বুধবার। ছবি: পাপন চৌধুরী

মরিয়া: বরাকর নদ পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডের পথে আসানসোলে আটকে থাকা এক দল পরিযায়ী শ্রমিক। বুধবার। ছবি: পাপন চৌধুরী

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫২
Share: Save:

সাইকেল কাঁধে গোড়ালি ভেজানো বরাকর নদ পেরোলেই কেল্লা ফতে হওয়ার আশা! ও পারে ঝাড়খণ্ডের কিছু ‘নির্দিষ্ট জায়গা’য় দাঁড়িয়ে থাকছেন ‘ওঁরা’। চলতি লব্জে ‘গাইড’। হাতে চাহিদামতো টাকা গুঁজে দিলেই ওঁদের পথ-নির্দেশ মতো জঙ্গলের পাকদণ্ডী ধরে পাঁচ-ছ’শো মিটার এগোলে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে পৌঁছে যাচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। তার পরে সঙ্গের সাইকেলে বাড়ির পথ ধরছেন।

কথাবার্তা-হালচাল দেখে স্থানীয় ভেবে সন্দেহও করছে না ঝাড়খণ্ড পুলিশ, দাবি শ্রমিকদের। জঙ্গল-পথের ‘গাইড’ ওই ‘দালালে’রা পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানায় ধানবাদ জেলার নিরসার আট-দশ জন যুবক, এমনই দাবি পুলিশ সূত্রের। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের দাবি, ‘দালালদের’ বিষয়টি ঝাড়খণ্ড পুলিশকে জানানো হয়েছে।

এসডিপিও (নিরসা) বিজয়কুমার কুশওয়া বলেন, ‘‘বরাকরের পাড়ে আমাদের পুলিশকর্মীরা টহল দিচ্ছেন৷ কিন্তু এই বিষয়টি জানা ছিল না। টহল জোরদার করার ব্যবস্থা হবে।’’

পশ্চিম বর্ধমানের ডুবুরডিহি সীমানা লাগোয়া কল্যাণেশ্বরী রোডের বাঁ দিকে জঙ্গলের পথ ধরে অন্তত ২৫ জন পরিযায়ী শ্রমিকের একটি দল নদ পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে পৌঁছয় মঙ্গলবার। সেখানে দেখা গেল, আগেভাগে মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে দুই যুবক। শ্রমিকেরা জানান, মাথা পিছু ৫০ টাকা দিতে হচ্ছে ওই ‘গাইড’দের। টাকা হাতবদল হলে ধীর গতিতে ঝাড়খণ্ডের দিকের জঙ্গলে মিলিয়ে যেতে থাকল মোটরবাইক। পিছু নিলেন শ্রমিকেরাও। দিনের কোন সময়ে, কোথায় ওই দালালদের দেখা মিলবে, তা শ্রমিকদের মধ্যে মুখেমুখে ইতিমধ্যেই প্রচারিত।

আরও পড়ুন: চণ্ডীগড়ে করোনা রোগীদের উপর ‘সেপসিভ্যাক’ প্রয়োগ শুরু

পরিযায়ী শ্রমিকেরা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, আসানসোলের বিভিন্ন কারখানার ঠিকাকর্মী। বিহারের চম্পারণ, সমস্তিপুর, বারাউনি, ঝাড়খণ্ডের বোকারো, চাষ এলাকার বাসিন্দা ওই শ্রমিকেরা জানান, লকডাউনের পরে, তাঁদের বেশির ভাগেরই কাজ চলে গিয়েছে। এখানে রাহা-খরচ, ত্রাণ পাওয়া তাঁদের পক্ষে দুষ্কর। লোটাকম্বল গুটিয়ে তাই পাড়ি দেওয়া ‘দেশের বাড়ি’র দিকে।

বাঁকুড়ার এক স্পঞ্জ আয়রন কারখানার শ্রমিক বিহারের বাসিন্দা পাপ্পু বিশ্বকর্মা (নাম পরিবর্তিত) বলেন, ‘‘এখানে পড়ে থাকলে না খেতে পেয়ে মরব। দালালদের ভরসায় জল-জঙ্গল ডিঙিয়ে ঘরে ফিরছি।’’ জামুড়িয়ার ইস্পাত কারখানার ঠিকাকর্মী রাম পাসোয়ান (নাম পরিবর্তিত) বলেন, ‘‘সমস্তিপুরের বাড়িতে স্ত্রী, সন্তানেরা কষ্টে আছে। ঠিকাদার হাতে কয়েকটা টাকা দিয়ে চলে যেতে বলেছে। দালাল ছাড়া, আমাদের কে পৌঁছে দেবে?’’

আরও পড়ুন: ঘরে ফেরায় কেন্দ্রের সায়, দায় রাজ্যের

পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের সীমানা ‘সিল’ করেছে পুলিশ। তাই ‘ঘুরপথ’। এই ‘সুযোগে’ নিরসার নয়াবস্তি, বড়জোড়, আমকুড়া, ছ’নম্বর প্রভৃতি এলাকার কিছু যুবক জঙ্গল- পথের ‘গাইড’ তথা দালালের ভূমিকা নিচ্ছেন বলে দাবি পুলিশ সূত্রের। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বদলে যাচ্ছেন দালালেরাও। ‘‘পালিতে (শিফট) কাজ করছি আমরা’’, বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেশায় পশুপালক এক ‘দালাল’। জানান, পেশার কারণে এবং স্থানীয় হওয়ায় জঙ্গলের আনাচকানাচ চেনেন। লকডাউনের সুযোগে বাড়তি রোজগারের আশায় এই কাজ করছেন।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

India Lockdown Migrant Labourer Jharkhand Asansol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE