সর্বদল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
সরকার ঘুমিয়ে না থাকলে কি লাদাখের ঘটনা ঘটতে পারত? প্রশ্ন তুলছে বিরোধী শিবির। সেই আবহেই শুক্রবার সর্বদল বৈঠকে বসলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গলওয়ান উপত্যকায় ঠিক কী ঘটেছিল, এখন কী পরিস্থিতি সীমান্তের, এর পরে কী করতে চাইছে সরকার— এই সব বিষয়ই দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্বকে আজকের বৈঠকে জানানোর কথা প্রধানমন্ত্রীর। তবে বৈঠক শুরুর আগেই দেশের বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতা রাহুল গাঁধীর তোপ— সরকারের অসতর্কতার মূল্য জীবন দিয়ে চোকাতে হল জওয়ানদের। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী কী বলবেন? সাফাই দেবেন, নাকি ত্রুটি স্বীকার করবেন? নাকি একেবারেই এড়িয়ে যাবেন বিরোধীদের প্রশ্নগুলো? রাজনৈতিক শিবির তাকিয়ে সে দিকেই।
বিকেল ৫টায় সর্বদল বৈঠক শুরু হয়েছে। ভিডিয়ো কনফারেন্সেই হচ্ছে বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বৈঠকে রয়েছেন সরকারের তরফ থেকে। বিজেপির তরফ থেকে যোগ দিয়েছেন সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা। কংগ্রেসের তরফে থাকবেন সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী।
প্রতিনিধি না পাঠিয়ে সব দলের শীর্ষ পদাধিকারীরাই যেন যোগ দেন বৈঠকে, এমনই অনুরোধ করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে। সে অনুরোধে সাড়া দিয়ে তৃণমূলের তরফেও বৈঠকে যোগ দিয়েছেন দলের চেয়ারপার্সন তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। এ ছাড়া বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেডি সভাপতি নবীন পট্টনায়ক, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী তথা শিবসেনা সুপ্রিমো উদ্ধব ঠাকরে, এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার, সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব, বহুজন সমাজ পার্টির সুপ্রিমো মায়াবতী, ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিনও এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। আমন্ত্রণ পেয়েছেন সিপিআই-এর ডি রাজা, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিও।
আরও পড়ুন: পাঠানো হল যুদ্ধবিমান, চূড়ান্ত সতর্কবার্তা বায়ুসেনাকে
বিতর্ক তৈরি হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীবাল আমন্ত্রণ না পাওয়ায়। আমন্ত্রণ পায়নি লালুপ্রসাদের আরজেডি, আসাদউদ্দিন ওয়াইসির এআইএমআইএম-ও। দেশের সীমান্তে যখন বিপজ্জনক সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি, তখন প্রধানমন্ত্রীর সর্বদল বৈঠকে এই দলগুলিকে কেন ডাকা হল না? এখানেও কি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চাওয়া হল? এমন প্রশ্ন তোলা শুরু হয়েছে ওই দলগুলির তরফে। কিন্তু সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, যে মাপকাঠির ভিত্তিতে সর্বদল বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিভিন্ন দলকে, আরজেডি, আপ বা এআইএমআইএম সেই মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে পারছে না।
কী মাপকাঠি নির্ধারণ করেছে কেন্দ্র? যে সব দল জাতীয় দল হিসেবে স্বীকৃত অথবা লোকসভায় যে সব দলের অন্তত ৫ জন সাংসদ রয়েছেন অথবা যে সব দল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রয়েছে, তাদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সর্বদল বৈঠকে। উত্তর-পূর্ব ভারতের ক্ষেত্রে অবশ্য সে নিয়মে ব্যতিক্রম রয়েছে। যে হেতু উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি ছোট ছোট এবং সংসদে ওই রাজ্যগুলির অধিকাংশেরই আসনসংখ্যা কম, সে হেতু তাদের জন্য জাতীয় দলের তকমা বা লোকসভায় ৫ আসনের মাপকাঠি রাখা হয়নি। উত্তর-পূর্বের সব গুরুত্বপূর্ণ দলকেই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: সীমান্তে শুরু ‘এয়ার ডমিন্যান্স’? সকাল থেকে লাদাখে উড়ছে অ্যাপাশে-চিনুক
বিকেল ৫টায় শুরু হয়েছে বৈঠক। সব মিলিয়ে ২০টি দল বৈঠকে যোগ দিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। লাদাখের পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রী নিজেই ব্যাখ্যা করতে পারেন দলগুলির সামনে। সরকার এই পরিস্থিতিতে কী করতে চাইছে, তা-ও জানাতে পারেন তিনি। তার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতও জানতে চাইতে পারেন। গোটা দেশের নজর আজ এই বৈঠকের দিকে।
তবে বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রীর উপরে চাপও কিন্তু তৈরি হয়েছে যথেষ্টই। ২০ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে সীমান্তে। তার প্রেক্ষিতে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে। আর বৈঠকের কিছুটা আগে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা ওয়েনাডের সাংসদ রাহুল গাঁধী আরও তীক্ষ্ণ আক্রমণে গিয়ে টুইট করেছেন, ‘‘এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, ১) আগে থেকে পরিকল্পনা করেই গলওয়ানে হামলা চালিয়েছে চিন, ২) ভারত সরকার ঘুমোচ্ছিল এবং সমস্যার মানতেই চায়নি, ৩) জীবন দিয়ে তার মূল্য চোকাতে হয়েছে জওয়ানদের।’’
অতএব এ দিনের বৈঠকে এই প্রশ্নগুলোর মুখে প্রধানমন্ত্রীকে পড়তে হতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। গলওয়ান উপত্যকায় ঠিক কী ঘটল, সে কথা বিশদে তো জানাতেই হবে। কেন ভারতীয় বাহিনীর ২০ জনকে শহিদ হতে হল, তার জবাবও দিতে হতে পারে। বিদেশ মন্ত্রক এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রক স্পষ্ট করে জানিয়েছে, চিন সুপরিকল্পিত ভাবেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রশ্নও তৈরি হয়েছে সেখান থেকেই। হামলা যদি সুপরিকল্পিতই হয়ে থাকে, তা হলে ভারত সরকার কী করছিল? চিন যে এই রকম পরিকল্পনা করেছে, তা আগে থেকে আঁচ করা গেল না কেন? তা হলে কি গোয়েন্দা ব্যর্থতা? নাকি যথেষ্ট সতর্কতার অভাব? এই সব প্রশ্নের মোকাবিলা প্রধানমন্ত্রী তথা সরকার কী ভাবে করেন, সে দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ।
সীমান্তে গত কয়েক দিন ধরে সামরিক প্রস্তুতি দ্রুত বাড়িয়েছে ভারত। কিন্তু কী পদক্ষেপ করা হতে পারে, তা স্পষ্ট নয়। এ দিনের বৈঠকের পরে সরকারের সিদ্ধান্ত অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে বলেও রাজনৈতিক শিবিরের মত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy