মুম্বই জঙ্গিহানায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমাণ তুলে দিলেও তা নিয়ে পদক্ষেপ করতে পাক সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে সন্দিহান ভারত। —ফাইল চিত্র।
২৬/১১-এর মুম্বই জঙ্গিহানার ১২তম বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে ওই মামলায় দোষীদের শাস্তি দিতে পাকিস্তানের কাছে ন্যায়বিচারের দাবি জানাল ভারত। ইসলামাবাদের সদ্যপ্রকাশিত ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি-তালিকায় মুম্বই হামলার জড়িত একাধিক জঙ্গির নাম রাখা হলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিদেশ মন্ত্রক। ভারতের অভিযোগ, এ বিষয়ে বিভ্রান্তিকর নীতি নিয়ে গোটা পর্বটি বিলম্বিত করার কৌশল নিয়েছে পাক সরকার।
সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ রুখতে সম্প্রতি দেশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ এবং হাই-প্রোফাইল জঙ্গিদের একটি নয়া তালিকা প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। ৯২১ পাতার ওই তালিকায় মুম্বই হামলায় জড়িত জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-এ-তৈবার কয়েক জন জঙ্গির নাম রয়েছে। ২০০৮ সালে ওই হামলার আগে যে নৌকোয় চড়ে জঙ্গিরা এ দেশে ঢুকেছিল, তার কর্মীদের নামও ওই তালিকায় যোগ করা হয়েছে। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তালিকায় রাখা হয়নি মুম্বই হামলার মূল চক্রী লস্কর প্রধান হাফিজ সইদ এবং জাকিউর রহমান লকভির নাম। উল্লেখ নেই দাউদ ইব্রাহিম অথবা জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারের। ফলে মুম্বই হামলায় দোষীদের শাস্তি নিয়ে পাকিস্তানের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ভারত। এ নিয়ে বার বার বলা সত্ত্বেও সন্ত্রাসদমনে পাকিস্তান নিজের দায়িত্ব এড়াচ্ছে বলে দাবি ভারতের।
বৃহস্পতিবার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “মুম্বই জঙ্গিহানা মামলায় আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা পালনে বিভ্রান্তিকর এবং বিলম্বে চলার কৌশল ছেড়ে দেওয়ার জন্য পাক সরকারকে বার বার আহ্বান জানিয়েছে ভারত।” তবে বার বার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও এই মামলায় পাকিস্তানের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে দাবি বিদেশ মন্ত্রকের। পাকিস্তানকে এ কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ওই হামলায় শুধুমাত্র ভারতীয়রাই নন, নিহত হয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরাও।
আরও পড়ুন: বাংলায় আলকায়দার নিশানায় একাধিক রাজনীতিক, বিধানসভা নির্বাচনের আগে সতর্ক করলেন গোয়েন্দারা
মুম্বই জঙ্গিহানায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পাক সরকারের কাছে সমস্ত প্রমাণ তুলে দিলেও তা নিয়ে পদক্ষেপ করতে কতটা আন্তরিক, তা-ও উল্লেখ করেছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র। অনুরাগ বলেন, “বিশ্বের অন্যান্য দেশও পাকিস্তানের কাছে ওই জঙ্গিহানায় দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে। তবে গুরুতর উদ্বেগের বিষয় যে প্রকাশ্যে স্বীকার করলেও এবং এ নিয়ে সমস্ত প্রয়োজনীয় প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও হামলার শিকার বিশ্বের ১৫টি দেশের ১৬৬ জন নিহতের ন্যায়বিচারের জন্য পাকিস্তান এখনও আন্তরিকতা দেখায়নি।”
আরও পড়ুন: অবসর নেব বলিনি, ভোট মিটতেই উল্টো সুর নীতীশের
সন্ত্রাসবাদীদের তালিকায় বরাবরই মুম্বই হামলায় জড়িত ১৯ জন জঙ্গির নাম ছিল। তালিকায় নতুন সংযোজন করায় এই মুহূর্তে তাতে রয়েছে ১,২০১ জনের নাম। পাকিস্তানের ফেডেরাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ), ইসলামাবাদ ক্যাপিটাল টেরিটরি (আইসিটি)-সহ পাক পঞ্জাব, সিন্ধু, খাইবার পাখতুনখোয়া, বালুচিস্তান, গিলগিট-বাল্টিস্তান প্রদেশের গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া জঙ্গির নামও তাতে রয়েছে। জাতীয় সুরক্ষার জন্যই সন্ত্রাসদমনে দেশের সরকারের আন্তরিকতার উল্লেখ করলেও তালিকায় হাফিজ সইদ বা মাসুদ আজহারের নামোল্লেখ করা হয়নি। হাফিজ এই মুহূর্তে পাক জেলে বন্দি। মাসুদের গতিবিধি স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে, হামলার আর এক চক্রী দাউদের পাক ঠিকানার কথা জানা গেলেও তা স্বীকার করে না পাকিস্তান। এ নিয়ে অনুরাগ বলেন, “তালিকায় লস্করের হাতেগোনা কয়েক জন জঙ্গির নাম রয়েছে। এমনকি, ২৬/১১-র হামলার আগে যে বোট ব্যবহার করা হয়েছিল, তার কর্মীদেরও নাম রাখা হয়েছে, তবে এই ঘৃণ্য অপরাধের মূল চক্রীদের নাম স্পষ্ট ভাবে বাদ রাখা হয়েছে। এটা তো ঘটনা যে ওই হামলার পরিকল্পনা বা তা সংগঠিত করা হয়েছিল পাকিস্তানের মাটি থেকেই। এই তালিকা থেকে পরিষ্কার যে ওই চক্রী এবং তাদের মদতদাতাদের সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যপ্রমাণ পাকিস্তানের কাছে রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy