রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ধৃতদের নিয়ে আসা হচ্ছে মথুরার এক আদালতে। রয়েছেন সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানও (বাঁ দিকে)। বুধবার। পিটিআই
হাথরসের পথে ধৃত সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান ও তাঁর তিন সঙ্গীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে মামলা করল যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ। সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনে ওই চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, হাথরসে জাতপাতের লড়াই বাধানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। এ জন্য বেআইনি পথে টাকাপয়সা সংগ্রহ করেছিলেন। সেই অর্থ এসেছে বিদেশ থেকেও। দেশের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর জন্য একটি ওয়েবসাইটকে ধৃতেরা ব্যবহার করেছেন বলেও আজ দাবি করেছে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ।
হাথরসে গণধর্ষিতা তরুণীর বাড়ি যাওয়ার পথে গত সোমবার মথুরায় সিদ্দিক ও তাঁর তিন সঙ্গীকে গ্রেফতার করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। গত কাল পুলিশ জানায়, তাদের কাছে খবর এসেছিল, দিল্লি থেকে ‘সন্দেহভাজন কয়েকজন’ হাথরসে আসছেন। সেই খবর পেয়েই ওই চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মথুরা (গ্রামীণ)–এর এসপি শ্রীরিশ চাঁদ জানিয়েছেন, ধৃতদের আজ আদালতে তোলা হয়েছে। তাঁদের ১৪ দিনের জন্য বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে কোর্ট।
সিদ্দিক কেরলের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত, দিল্লিতে কর্মরত। তিনি ছাড়াও মুজফ্ফরনগরের আতিক-উর রহমান, বাহরাইচের মাসুদ আলম ও রামপুরের বাসিন্দা আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুলিশের দাবি, এঁরা উগ্রপন্থী সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া (পিএফআই) এবং তার শাখা সংগঠন ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া-র সঙ্গে যুক্ত। জেরার মুখে ধৃতরা সে কথা স্বীকার করেছে বলেও দাবি করেছে আদিত্যনাথের পুলিশ। সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে পিএফআইয়ের ভূমিকার কথা সামনে এনে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে চেয়েছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার। আটক করার সময়েই সংবাদিক ও তাঁর সঙ্গীদের মোবাইল, ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়। আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে, এমন কিছু কাগজপত্র তাঁদের কাছে পাওয়া গিয়েছে বলেই দাবি করেছিল পুলিশ।
আরও পড়ুন: ‘ব্যর্থতা’ ঢাকতেই কি বিশ-প্রচার প্রধানমন্ত্রী মোদীর
এর পরেই ধৃতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ইউএপিএ আইনে মামলা করা হয়েছে। এফআইআরে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা হাথরসে জাতপাতের সংঘর্ষ বাধানোর চেষ্টায় ছিলেন। এর জন্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। যে টাকাপয়সা জোগাড় করা হয়েছে, তা এসেছে অবৈধ উপায়ে। গোষ্ঠী সংঘর্ষ বাধাতে বিদেশ থেকেও অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এঁদের কাছ থেকে ‘অ্যাম আই নট ইন্ডিয়াস ডটার’ শীর্ষক প্রচার পুস্তিকা মিলেছে। এই মামলায় অভিযোগকারী পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর প্রবল প্রতাপ সিংহের দাবি, বেআইনি কাজের মধ্যে দিয়ে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন ধৃতেরা। ইউএপিএ ও ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি আইনে সিদ্দিক ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কল রেকর্ড ঘিরে নয়া দাবি, হাথরসে মেয়াদ বৃদ্ধি সিটের
সাংবাদিকের গ্রেফতারির পরেই ‘কেরালা ইউনিয়ন অব ওয়ার্কিং জার্নালিস্টস’ জানায়, সিদ্দিক তাদের সংগঠনের পদাধিকারী। তিনি সংবাদ সংগ্রহ করতে হাথরসে গিয়েছিলেন। ফলে তাঁকে দ্রুত মুক্তি দেওয়া হোক। যোগীকে চিঠিও দেওয়া হয়। এমনকি, ওই সাংবাদিকের মুক্তির আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হেবিয়াস কর্পাস মামলাও করেছে কেরলের সাংবাদিকদের সংগঠন। প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়াও সিদ্দিকের মুক্তির দাবি তুলেছে। আদিত্যনাথের পুলিশ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার কড়া আইন প্রয়োগ করতে পারে— গত কালই প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার তরফে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। আজ সাংবাদিকদের সংগঠন দ্য প্রেস অ্যাসোসিয়েশন এবং ইন্ডিয়ান উইমেন প্রেস ক্রপস্ সিদ্দিকের দ্রুত মুক্তির দাবি তুলেছে। ওই সাংবাদিক সংগঠনগুলির বক্তব্য, সাংবাদিকেরা যাতে হাথরসে যেতে না পারেন, দু’দিন ধরে সেই চেষ্টা হয়েছিল। সংবিধানের মতপ্রকাশের অধিকার সেই সময়েই খর্ব করেছিল যোগী সরকার। আর সিদ্দিকের গ্রেফতারির মধ্যে দিয়ে সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy