কল্যাণ সিংহ
স্মৃতি ইরানি নন। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে মায়াবতীর মোকাবিলায় বিজেপি আবার ৮৩ বছরের কল্যাণ সিংহকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ওবিসি নেতা কল্যাণের মাধ্যমে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার জুয়া খেলতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ। রাজস্থানের রাজ্যপাল পদ থেকে কল্যাণকে ইস্তফা দিইয়ে তাঁকে উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনী প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান করতে চান তাঁরা। এই রাজ্যে ২০.৫% তফসিলি
জাতি-উপজাতির ভোট রয়েছে। অন্যান্য নিম্নবর্গের উপরেও এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রভাব অটুট বলে বিজেপির ধারণা।
তবে কল্যাণকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণা করা হবে না। সেটা হলে আশি-ঊর্ধ্ব অবসরের যে নির্দেশাবলী মোদী তৈরি করেছেন, তার অন্যথা হবে। অরুণ জেটলির প্রস্তাব, রাজ্যপাল পদে ইস্তফা দিয়ে কল্যাণ বিবৃতি দিয়ে বলবেন, ‘আমি মুখ্যমন্ত্রী হতে চাই না। এই আমার শেষ প্রচার। উত্তরপ্রদেশের প্রতিটি জেলাকে জানাতে চাই, মোদীর নেতৃত্বে যেন মানুষ আস্থা রাখেন এবং বিজেপিকে একক গরিষ্ঠতা দেন।’ বিজেপি কল্যাণকে জানিয়েছে, ভোটের পর তিনি রাজ্যপাল পদ ফিরে পাবেন। দ্বিতীয়ত তাঁর পুত্র, বর্তমান বিধায়ক রাজবীর সিংহকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে।
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সামনে আলোচনার সময় জেটলির এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন অমিত শাহ। প্রধানমন্ত্রী এখন কথা বলবেন কল্যাণের সঙ্গে। ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে মোদীর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা জানিয়ে কল্যাণ বিজেপিতে ফিরে আসেন। উত্তরপ্রদেশে প্রচারেও সামিল হন। সেপ্টেম্বরে তিনি রাজ্যপাল হন। প্রধানমন্ত্রী রাজস্থানের পাশাপাশি হিমাচল প্রদেশের রাজ্যপালের অতিরিক্ত দায়িত্বও দিয়েছেন তাঁকে।
১৯৯৮ সালের লোকসভা ভোটে বসপা নেত্রী মায়াবতী শুধু দলিত নয়, ব্রাহ্মণ প্রার্থী দিয়েও বিজেপির উচ্চবর্ণের ভোটে থাবা বসান। তাঁর স্লোগান ছিল ‘সর্বজন সমাজ’। ২০০২ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও ২৭৫টি আসনের মধ্যে ১২৬ জন ওবিসি আর ৯১ জন উচ্চবর্ণের প্রার্থী দেন মায়া। ব্রাহ্মণ নেতা সতীশ মিশ্রকে রাজ্যসভা সাংসদও করেছেন। তাঁকে এ বার উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে। অন্য দিকে রোহিত ভেমুলা এবং জেএনইউয়ের ঘটনার পরে বিজেপি দলিত ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে আশঙ্কায়। তাই প্রধানমন্ত্রী এক দিকে অম্বেডকরের জয়ন্তীকে গুরুত্ব দিয়েছেন। অন্য দিকে অমিত শাহ উজ্জয়িনীর কুম্ভে গিয়ে দলিতদের সঙ্গে স্নান করেছেন। উত্তরপ্রদেশে লক্ষ্মীকান্ত বাজপেয়ীর মতো ব্রাহ্মণ নেতাকে রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে কেশব মৌর্যকে আনা হয়েছে।
বাবরি ধ্বংসের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কল্যাণ। বাবরি ভাঙার সব দায়িত্ব বিবৃতি দিয়ে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। সে হেতু বর্ণহিন্দু ভোটব্যাঙ্কের অনেকটাও তাঁর পিছনে বলে দাবি দলের। রাজ্যে কলরাজ মিশ্র-সহ ব্রাহ্মণ নেতাও অনেকেই আছেন। ভারসাম্যের অভাব হবে না। যদিও কলরাজ নিজে এবং রাজনাথ সিংহ-বিনয় কাটিয়াররা কল্যাণের পক্ষে নন।
আশার কথা, জগদম্বিকা পালের মতো পরে দলে আসা নেতারা কল্যাণকে নেওয়ার পক্ষে। রাজ্য সভাপতি কেশব মৌর্যও জানিয়েছেন, কল্যাণ প্রচারে এলে স্বাগত জানাবেন। বরং স্মৃতি ইরানিকে আনলে সমস্যা বেশি। কারণ স্মৃতির বাবা পঞ্জাবি, মা বাঙালি। বিয়ে করেছেন পার্সিকে। তিনি রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জনপ্রিয়তা কুড়োলেও উত্তরপ্রদেশের নেতারা তাঁকে মানতে রাজি নন। ঠিক যেমন তাঁদের আপত্তি উমা ভারতীকে নিয়েও। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি ফের কল্যাণ সিংহের দরজায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy