প্রতীকী ছবি।
এক বিপদ আটকাতে গিয়ে বাড়ছে অন্য বিপদের আশঙ্কা।
করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের। অতিমারি পর্বের একেবারে গোড়া থেকে ওই প্রচার চলায় সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে দেশের প্রবীণ সমাজের একটি বড় অংশ গত মার্চ থেকে এখনও কার্যত ঘরে বন্দি। বন্ধ সামাজিক মেলামেশাও। চার দেওয়ালের এই বন্দি জীবনের ফলে এক দিকে যেমন একাকিত্ব গ্রাস করছে বয়স্কদের, তেমনই বাড়ছে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের সম্ভাবনা। এই রোগে প্রথমে স্মৃতি হারানো, চিন্তাভাবনা করার শক্তি হারিয়ে ফেলা এবং শেষ পর্যায়ে দৈনন্দিন অভ্যাসের যে সব কাজ, যেমন স্নান, খাওয়া, ঘুমের মতো বিষয়গুলিও ভুলে যান আক্রান্তেরা। অর্থাৎ এগুলি করার পরেও তাঁদের মনে থাকবে না, তাঁরা কাজগুলি আদৌ করছেন! চিকিৎসকদের মতে, লকডাউন ও অতিমারির কারণে কার্যত একলা হয়ে পড়া বয়স্কদের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশের সম্ভাবনা প্রায় কুড়ি শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির কারণে গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে বয়স্ক ব্যক্তিদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। যাঁদের একটি বড় অংশ এই রোগের শিকার। গোড়ার দিকে অনেকেই বুঝতে পারেন না যে, তিনি স্মৃতিভ্রংশের শিকার হয়েছেন। সেই অর্থে এই রোগের চিকিৎসা না থাকায় আগামী দিনে এই রোগ উল্টে অতিমারির রূপ নিতে পারে বলেই আশঙ্কা চিকিৎসকদের একাংশের। এমসের জেরিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক প্রসূন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “বয়স্ক, যাঁরা একা থাকেন, তাঁদের মধ্যে অবসাদ, দুশ্চিন্তা, ঘুম কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়। কিন্তু ছ’মাস বা তার বেশি সময় ধরে কেউ যদি একটা ঘরের মধ্যে বন্ধ থাকেন, তা হলে সেই বয়স্ক ব্যক্তির মস্তিষ্ক দ্রুত বুড়িয়ে যাবে ও স্মৃতিভ্রংশের সমস্যাকে আরও তীব্র করে তুলবে। লকডাউনে এই ভুলে যাওয়ার প্রভাব বাড়তে দেখা গিয়েছে। করোনার কারণে এই রোগ দ্রুত বাড়ছে প্রবীণদের মধ্যে। যা যথেষ্ট চিন্তার।“
আরও পড়ুন: আরএসএস দফতরে ফাইল হাতে প্রাক্তন ডিজি, সাক্ষাৎ ভাগবতের সঙ্গে
আরও পড়ুন: রাজ্যে ক্ষমতায় এলে ৭৫ লক্ষ চাকরি, প্রতিশ্রুতি বিজেপির, ‘ভাঁওতা’ বলছে তৃণমূল-বাম-কং
প্রতি বছর গোটা পৃথিবীতে প্রায় এক কোটির বেশি মানুষ স্মৃতিভ্রংশের শিকার হন। ২০৩০-এর মধ্যে প্রায় ৯ থেকে ১০ কোটি মানুষ বিশ্বে এই রোগের শিকার হবেন। যার মধ্যে ভারতেই আক্রান্ত হবেন প্রায় ৭৫ লক্ষ থেকে ১ কোটি মানুষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কাজ কমে যায়। ফলে এই রোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। এই সমস্যায় আক্রান্তদের কেউ স্নায়ু, কেউ হার্টের সমস্যায় ভুগে থাকেন। লকডাউনের ফলে এই রোগীদের একটি বড় অংশ মানসিক ও স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাবেও ভুগছেন। চিকিৎসকদের মতে, অতিমারি সময়ে স্মৃতিভ্রংশের শিকার ওই ব্যক্তিদের করোনার মৃত্যুভয় সমস্যাকে আরও ঘোরালো করে তুলেছে। জার্নাল অব অ্যালঝাইমার্স ডিজ়িজ়-এ করোনা কালে বয়স্কদের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশ বেড়ে যাওয়ার সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ করে যে ভাবে বয়স্করা গত আট মাস ধরে ঘরে বন্দি রয়েছেন, তা আগামী দিনে পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করে তুলতে চলেছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। প্রসূনবাবুর মতে, “বয়স্ক মানুষেরা এক দিকে ঘরে বন্দি। পাছে করোনা সংক্রমণ হয়, সেই ভয়ে ইচ্ছে থাকলেও বেরোতে পারছেন না। ফলে মানসিক সমস্যার শিকার হচ্ছেন তাঁরা।’’
বয়স্কদের এই সমস্যা থেকে বাঁচাতে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসার উপরে জোর দিয়েছেন প্রসূনবাবু। তিনি বলেন, “নবীন ও প্রবীণ প্রজন্মের মধ্যে যোগসূত্র গড়ার উপরে জোর দেওয়া প্রয়োজন। এতে উভয় পক্ষেরই লাভ।’’ একই সঙ্গে প্রবীণ প্রজন্মকে নতুন কিছু শেখার উপরে জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের পরামর্শ, প্রয়োজনে ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করা শিখুন প্রবীণেরা। এতে পরিবারের নতুন প্রজন্মের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়বে। একাকিত্ব কাটবে। একই সঙ্গে সুস্থ জীবনযাত্রা, দ্রুত ওই রোগ নির্ণয়ের উপরেই জোর দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এই রোগের কোনও চিকিৎসা না থাকলেও দ্রুত রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া হলে অন্তত রোগের দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়া আটকানো সম্ভব হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy