Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
National News

‘শাহ-হীন বাগে’র মঞ্চে প্রতিবাদী মৌনব্রত

২১ রাউন্ড গণনার শেষে আমানাতুল্লার জয় যখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা, তখনই মহারানি বাগের গণনাকেন্দ্রের সামনে কান পাতা দায়।

শাহিন বাগে মৌনী প্রতিবাদ। মঙ্গলবার। ছবি: প্রেম সিংহ

শাহিন বাগে মৌনী প্রতিবাদ। মঙ্গলবার। ছবি: প্রেম সিংহ

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:৫৩
Share: Save:

আম আদমি পার্টির (আপ) জয়ী প্রার্থী আমানাতুল্লা খানের জনপ্রিয়তা নয়। দলে তাঁর ‘বস’ অরবিন্দ কেজরীবালের ক্যারিশমা নয়। ওখলা বিধানসভা কেন্দ্রে গত বারের থেকেও বেশি ব্যবধানে বিজেপির হার নিশ্চিত করার আসল কারিগর নাকি অমিত শাহ!

সেই ওখলা, যার অন্তর্ভুক্ত শাহিন বাগে প্রায় দু’মাস ধরে রাস্তায় বসে সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন মহিলারা। আর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় পুলিশি তাণ্ডবের পরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তাও প্রায় একই সময় বন্ধ একই প্রতিবাদে। অভিযোগ, প্রচারে ধর্মীয় বিভাজন উস্কে দিতে দুই আন্দোলনকেই নাগাড়ে নিশানা করেছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা।

২১ রাউন্ড গণনার শেষে আমানাতুল্লার জয় যখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা, তখনই মহারানি বাগের গণনাকেন্দ্রের সামনে কান পাতা দায়। তার সামনে ঢোল আর ব্যান্ডপার্টির বাজনার সঙ্গে উদ্দাম নাচ সমর্থকদের। এরই মধ্যে গলা চড়িয়ে শোয়েব খান বললেন, ‘‘বিজেপির ভোট বেশি পাওয়ার আশা এই কেন্দ্রে কখনও ছিল না। কিন্তু বিপক্ষে ভোট ভাগাভাগির যে টুকু সম্ভাবনা ছিল, তা রুখে দিয়েছেন অমিত শাহই!’’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লিবাসীকে ডাক দিয়েছিলেন, ‘‘এত জোরে ইভিএমের বোতাম টিপুন, যাতে শাহিন বাগের কারেন্ট লাগে।’’ ওই ভিড়ে শোয়েব-সহ অনেকেরই দাবি, ‘‘আমানাতুল্লা আগাগোড়া জামিয়া মিলিয়া ও শাহিন বাগের পাশে থাকলেও তাঁর দল যে ভাবে গত দু’মাস সিএএ-এনআরসি বিরোধী প্রতিবাদ থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে, তাতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। অনেকে ঝুঁকছিলেন কংগ্রেসের দিকে। অমিতের ওই কথার পরে অনেক ভোট ফিরে এসেছে ঝাঁটায় (আপের নির্বাচনী প্রতীক)।’’ গোটা ভোটপর্বে অমিত শাহের শাহিন বাগ-ময় প্রচারের পরেও আপ-এর বিপুল জয়ের পরে তাই সোশ্যাল মিডিয়া দিল্লিকে ‘শাহ-হীন বাগ’ বলে কটাক্ষ ফিরিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেই।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

তবে এই ‘কৃতিত্ব’ শুধু অমিতকে দিতে নারাজ ওখলা। আবিদ খান, খুররম, ওয়াসিমেরা বলছিলেন, ‘‘কোনও মন্ত্রী আমাদের ‘গদ্দার’ ঠাউরে বুকে গুলি চালানোর স্লোগান দিয়েছেন। কোনও নেতা টেনে এনেছেন বিরিয়ানির কথা! এর পরেও মানুষ রাগ উগরে দেবেন না?’’ যাঁদের বিরুদ্ধে কামান দেগে বিজেপি কেজরীবালের দুর্গ দখলে নেমেছিল, এই ফলের পরে কী বলছেন সেই শাহিন বাগের ‘দাদিরা’?

কিছুটি না! কারণ, শাহিন বাগের মঞ্চে এ দিন সকলের মুখে কুলুপ। অনেকের মুখ কাপড়ে বাঁধা। সামনে গাঁধীজির ছবির পাশে লেখা ‘মৌন ব্রত’। উদ্যোক্তাদের দাবি, গতকাল জামিয়ার পড়ুয়াদের উপরে যে ভাবে পুলিশ ফের হামলা চালিয়েছে, এই নীরব প্রতিবাদ তার বিরুদ্ধেই। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, এ দিনের নির্বাচনী জয়-পরাজয়ের সঙ্গে নিজেদের আন্দোলনকে জড়াতে চান না শাহিন বাগের প্রতিবাদীরা। চান না এই বার্তা দিতেও যে, বিজেপির হারে কিংবা কেজরীবালের জয়ে তাঁরা খুশি। সেই কারণে এই কৌশলী সিদ্ধান্ত।

আরও পড়ুন: বিভাজনকে হারিয়ে জন-প্রিয়তার রাজনীতির জয় দিল্লিতে

তা বলে ওখলা বিধানসভা এলাকার কোথাও কি আর খুশির ঝিলিক নেই? বিলক্ষণ আছে। মহারানি বাগের রাস্তায় দাঁড়িয়ে লেইকুল্লা খান বলছিলেন, ‘‘গণনা শুরুর ঘণ্টা খানেকের মাথায় যখন বিজেপি প্রার্থী অল্প কিছু ভোটে এগিয়ে গিয়েছিলেন, দম যেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যাক, সব ভাল যার শেষ ভাল।’’

এই বিধানসভায় ভোটারদের প্রায় ৪০% মুসলিম। ২০১৫ সালেও জয়ী প্রার্থীর নাম ছিল আমানাতুল্লা। দ্বিতীয় হয়েছিলেন বিজেপির এই ব্রহ্ম সিংহ। ব্যবধান ছিল প্রায় সাড়ে ৬৪ হাজার ভোটের। এ বার সেই ব্যবধান বেড়ে পৌঁছেছে ৭১,৮২৭ ভোটে। দুপুর তিনটে-সাড়ে তিনটে নাগাদও অবশ্য তা ঘোরাফেরা করছিল ৮২-৮৫ হাজারের আশেপাশে।

শাহিন বাগের মঞ্চ এ দিন মৌন। কিন্তু ওই এলাকার বাজার, জামিয়ার সামনের গেট সমেত বিভিন্ন জায়গায় ধরা পড়ল আনন্দ আর স্বস্তির কোলাজ। ধর্মের নামে এই দুই আন্দোলনের বিরোধী প্রচার করে যে ভোটে ফায়দা তুলতে পারেনি বিজেপি, তা স্বস্তি দিয়েছে আন্দোলনকারীদের। কোথাও ‘জিত মুবারক’ বলে পরিচিতকে বুকে জড়িয়ে ধরছেন মধ্যবয়স্ক। কোথাও আলোচনা, ‘উল্টে শাহিন বাগই শক দিয়েছে বিজেপিকে’। রাস্তার মোড়ে কেউ বলছেন, ‘২০০ নেতা-মন্ত্রীকে নামিয়েও জেতা গেল না?’ আবার জয়ের মিষ্টি পান মুখে পুরে প্রবীণ সাক্সেনার দাবি, ‘‘আমরা শিক্ষা-স্বাস্থ্য-জল-বিদ্যুৎ চাই। হিন্দু-মুসলিমে বাঁটোয়ারা নয়।’’

শাহিন বাগের লঙ্গরে এক মহিলা হাতে ধরা মাইকে বার বার বলছিলেন, ‘‘প্রতি প্লেটে দু’টি করে পুরি (লুচি) দিন প্রথমে। চারটি নয়। কোনও খাবার যাতে নষ্ট না-হয়।’’

হাত ত্রিশেক দূরে দাঁড়িয়ে পাশের বৃদ্ধ বললেন, ‘‘ভোটই নষ্ট করিনি, তো খাবার।’’

প্রশ্ন করলাম, ‘‘নাম কি আপনার?’’ উত্তর এল, ‘‘জেনে কী হবে? লিখে নিন, শাহিন বাগের কেজরীবাল!’’

অভিমান ধুয়ে সাফ?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy