Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Crime

হাসছেন সাইবারাবাদের ‘এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট’

এনকাউন্টারের ঘটনা সাজানো বলে অভিযোগ পেয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাক্তন বিচারপতি ভি এস সিরপুরকারের নেতৃত্বে তদন্ত কমিশনের নির্দেশ দেয়।

সজ্জনারকে নিয়ে তৈরি হয়েছে এই ধরনের মিম। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

সজ্জনারকে নিয়ে তৈরি হয়েছে এই ধরনের মিম। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২০ ০৫:৫৫
Share: Save:

‘ওয়েলকাম টু পিপল-ফ্রেন্ডলি পুলিশ, তেলঙ্গানা পুলিশ’।

মোবাইলে ফোন করলে সেই পরিচিত কলারটিউন বাজতে থাকে।

সারাদিনে বার বার ফোন করে কলারটিউন মুখস্থ হয়ে যাওয়ার পর অবশেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় সাইবারাবাদের পুলিশ কমিশনার ভি সি সজ্জনারকে ফোনে ধরা গেল। ফোন ধরে প্রশ্ন শুনেই হাসি, “সারাদিন এই নিয়েই ফোন আসছে। কিন্তু আমার দিক থেকে, নো কমেন্টস।”

ফোন তো আসবেই। শুক্রবার ভোরে উত্তরপ্রদেশের পুলিশের এনকাউন্টারে কুখ্যাত গ্যাংস্টার বিকাশ দুবে নিহত হওয়ার পরে দেশ জুড়ে, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটাই নাম নিয়ে আলোচনা। আইপিএস অফিসার ভি সি সজ্জনার। এই মুহূর্তে দেশের সবথেকে ‘বিখ্যাত’ বা ‘কুখ্যাত’ এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট। সাইবারাবাদের পুলিশ কমিশনার। কারণ, অনেকেরই গত বছরের ৬ ডিসেম্বরে হায়দরাবাদের এনকাউন্টারের ঘটনা মনে পড়ে গিয়েছে। ঘটনাচক্রে সেদিনও ছিল শুক্রবার।

আরও পড়ুন: ‘সংঘর্ষে’ নিহত উত্তরপ্রদেশের বাহুবলী বিকাশ, হুবহু মিলে গেল ‘ভবিষ্যদ্বাণী’

তেলঙ্গানার শামসাবাদের টোলপ্লাজার কাছে এক চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণ করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। তার পরে তাঁর শরীরে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। কিন্তু ৬ ডিসেম্বর ভোররাতে পুলিশের এনকাউন্টারে চার জনই মারা যায়। সজ্জনার দাবি করেছিলেন, তদন্তের জন্য চার অভিযুক্তকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারা পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ বাধ্য হয়ে গুলি চালায়। বিকাশ দুবের এনকাউন্টারের পর সজ্জনারের ছবি নিয়ে মিম তৈরি হয়েছে, ‘কর ও রাহে হ্যায়, লেকিন তরিকা হমারা হ্যায়’।

বিকাশ দুবের শেষকৃত্যে তার স্ত্রী ও ছেলে। কানপুরের ভৈরব ঘাটে। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

এনকাউন্টারের ঘটনা সাজানো বলে অভিযোগ পেয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাক্তন বিচারপতি ভি এস সিরপুরকারের নেতৃত্বে তদন্ত কমিশনের নির্দেশ দেয়। সেই তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। আপনি কি মনে করেন, উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ঠিক কাজ করেছে? সজ্জনার হাসতে হাসতে বলেন, “আমি এই নিয়ে এখন কিছু বলব না।” সবাই তো বলছে, উত্তরপ্রদেশ পুলিশ তো তেলঙ্গানার এনকাউন্টার দেখেই শিক্ষা নিয়েছে? সজ্জনারের জবাব, “তেলঙ্গানার এনকাউন্টার এখনও আদালতের বিচারাধীন বিষয়। তাই এ নিয়ে আমার মুখ খোলা উচিত হবে না। কমিশনের তদন্ত শেষ হোক। তারপরে যা বলার বলব।”

আরও পড়ুন: বিকাশ দুবের এনকাউন্টার ঘিরে যে আটটি প্রশ্ন উঠছে

সুপ্রিম কোর্টের তদন্ত কমিশন ৩ ফেব্রুয়ারি বসেছিল। সেটাই প্রথম ও শেষবার। মার্চের শেষে ফের কমিশন বসার কথা থাকলেও করোনার জন্য তা পিছিয়ে যায়। কমিশন ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মীদের বয়ান রেকর্ড করেছে। কিন্তু ফের কবে কমিশন বসবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ছয় মাসের মধ্যে কমিশনকে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছিল। সরকারি সূত্রের খবর, প্রয়োজন হলে সুপ্রিম কোর্টে কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি জানানো হবে। বিকাশ দুবের এনকাউন্টারে তদন্ত কমিশন বসলেও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

২০০৮ সালে অন্ধ্রের ওয়ারাঙ্গলে কলেজ ছাত্রীদের উপরে অ্যাসিড হামলার অভিযুক্তদের এনকাউন্টার, ২০১৫-য় নালগোন্ডায় সিমি বিকারুদ্দিন আহমেদের এনকাউন্টার, ২০১৬-য় মাওবাদী নেতা নঈমুদ্দিনের এনকাউন্টার—একাধিক অপারেশনে নেতৃত্ব দিয়েছেন সজ্জনার। কিন্তু হায়দরাবাদ এনকাউন্টারের পরে সজ্জনার ‘সিংঘম’-এর তকমা পেয়েছিলেন। দক্ষিণী ছবির নায়িকারা সজ্জনারের ‘ইনস্ট্যান্ট পানিশমেন্ট’ নীতির জন্য তাঁকে দক্ষিণী সেলুলয়েডের নায়ক বিজয়ের সঙ্গেও তুলনা করেন।

এ সব শুনলে সজ্জনার শুধু হাসেন। আর বলেন, “নো কমেন্টস”।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy