গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
তাঁরা যখন ভারতে এসেছেন, তখন অনেক দেশেই ভয়াবহ আকার নিয়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। তার পরেও জেনে বুঝে যোগ দিয়েছিলেন দিল্লির তবলিগ জামাত সম্মেলনে। এ বার ওই সম্মেলনে যোগ দেওয়া ৯৬০ জন বিদেশি প্রতিনিধিকে কালো তালিকাভুক্ত করে দিল ভারত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, ৬৭টি দেশের ওই ৯৬০ জনের ভারতীয় ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এ বার তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে তবলিগ জামাতে অংশগ্রহণ করতে চেয়ে ভিসার আবেদন করলে তাঁদের আর ভিসা দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
মন্ত্রক সূত্রে খবর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইটালি, ফ্রান্স-সহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৩০০ প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন তবলিগ জামাতে। সেই সব প্রতিনিধি এবং তাঁদের সংস্পর্শে আসা মিলিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ৫৫০ জনের কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। আরও অনেকে ভর্তি দিল্লি-সহ দেশের ২৩টি রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে। কোয়রান্টিনে রয়েছেন আরও অনেকে। ফলে এই আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সুস্থ হযে উঠলে তাদের কোযরান্টিন সেন্টার থেকে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হবে।
ভিসা বাতিলের কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অফিসের পক্ষ থেকে টুইটারে বলা হয়েছে, ‘‘ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে তবলিগ জামাতের কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ৯৬০ জন বিদেশি প্রতিনিধির ভিসা বাতিল করা হয়েছে।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রকের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেছেন, ‘‘ভিসা বাতিলের পর এ বার তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবাইকে নিজের নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।’’
আরও পড়ুন: ২৩০০ ছাড়াল দেশের করোনা আক্রান্ত, মৃত্যু বেড়ে ৫৬
কী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ওই আধিকারিকের মতে, ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী ভিসার অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হবে। কারণ, ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে কোনও ধর্মীয় কার্যকলাপে যোগ দেওয়া যায় না। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য রাজ্যগুলিকে নির্দেশ পাঠানো হবে। এ ছাড়া বিপর্যয় মোকাবিলা আইনেও অভিযোগ দায়ের করা হবে কালো তালিকাভুক্তদের বিরুদ্ধে।
ওই আধিকারিক আরও জানিয়েছন, ‘‘আপাতত সবাই কোয়রান্টিন সেন্টারে আছেন। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠার পর রাজ্যগুলির ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হবে। সেখানে রেখেই বাকি আইনি প্রক্রিয়া করা হবে।’’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে খবর, কালো তালিকাভুক্তদের তালিকা সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানোর জন্য এবং ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত তাঁদের জানানোর জন্য বিদেশমন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে। কী ভাবে তাঁদের ফেরত নেবে সংশ্লিষ্ট দেশ, সে বিষয়ে বিদেশমন্ত্রক আলোচনা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন: তবলিগ-সভার তদন্তে গোয়েন্দারা, সক্রিয় বিদেশ মন্ত্রকও
মার্চের শুরু থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত চলেছে ওই তবলিগ জামাতের কার্যকলাপ। কিন্তু তার পরেও প্রায় ১০-১২ দিন ধরে নিজামউদ্দিন মসজিদে ছিলেন প্রায় ২০০০ দেশি-বিদেশি প্রতিনিধি। কিন্তু লকডাউন ঘোষণা এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরেও এক জায়গায় এত লোক থাকায় বিপাকে পড়েছেন তবলিগ জামাত কর্তৃপক্ষও। সাত জন মওলানার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই এফআইআর দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ। ভবিষ্যতেও যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে তার জন্য আরও কড়া পদক্ষেপ করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তবলিগে যোগ দিতে চেয়ে কোনও বিদেশি ভিসার আবেদন করলে তা মঞ্জুর করা হবে না। বিদেশ মন্ত্রককেও সেই মতো পদক্ষেপ করার কথা বলেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
এর মধ্যেই কোয়রান্টিনে থাকা সমস্ত বিদেশি নাগরিকদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য তৃতীয় নির্দেশিকা জারি করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী, যে দেশের নাগরিক, তাঁদেরই বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করতে হবে। শুধুমাত্র যাঁদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নেই, তাঁদেরই সেই বিমানে ফেরত পাঠানো হবে। সামান্য উপসর্গ থাকলেও তাঁদের দেশে ফিরতে দেওয়া হবে না। আসমরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক ও বিদেশমন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ওই বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy