গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এ বার ৩৫ লক্ষের গণ্ডি অতিক্রম করল। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ভাবে চলতে থাকলে সেপ্টেম্বরের শুরুতেই বিশ্ব তালিকায় ভারত ব্রাজিলকে ছাপিয়ে যাবে বলে মনে করছেন অনেকেই। একই সঙ্গে মৃত্যুর নিরিখে এ দিন মেক্সিকোকে ছাপিয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে ভারত।
রবিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৮ হাজার ৭৬১ জন মানুষ, দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধির নিরিখে যা এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক। গতকালের চেয়ে এ দিন আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ২৮৯ জন বেশি। তাতে সব মিলিয়ে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ লক্ষ ৪২ হাজার ৭৩৩।
তবে ভারতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা যখন ৮০ হাজার ছুঁইছুঁই, ওই একই সময়ে আমেরিকা ও ব্রাজিলের মতো দেশ দৈনিক সংক্রমণ ৫০ হাজারের নীচে বেঁধে রাখতে পেরেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আমেরিকায় নতুন করে কোভিডে সংক্রমিত হয়েছেন ৪৬ হাজার ৭৩৯ জন। ব্রাজিলে নতুন করে করোনা ধরা পড়েছে ৪১ হাজার ৩৫০ জনের শরীরে। গত কয়েক দিন ধরেই এই ধারা অব্যাহত। মোট আক্রান্তের নিরিখে এই মুহূর্তে বিশ্বতালিকায় শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। সেখানে এখনও পর্যন্ত ৫৯ লক্ষ ৬০ হাজার ৬৫২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ব্রাজিলে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮ লক্ষ ৪৬ হাজার ১৫৩। তার পরেই রয়েছে ভারত।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আরও পড়ুন: রাজ্যের ক্ষমতা কমল চতুর্থ পর্বের আনলকে, লকডাউনে নতুন রাশ
অন্য দিকে, একটানা চার দিন হাজারের কোটায় ঘোরাফেরার পর এ দিন দেশে মৃত্যুসংখ্যা সামান্য কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৯৪৮ জন করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। সবমিলিয়ে দেশে এখনও পর্যন্ত ৬৩ হাজার ৪৯৮ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর নিরিখে এ দিন মেক্সিকোকে ছাপিয়ে বিশ্বতালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে ভারত। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। করোনার প্রকোপে এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৮২ হাজার ৭৬০ জন প্রাণ হারিয়েছেন সেখানে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার ২৬২ জন করোনা রোগীর। চতুর্থ স্থানে থাকা মেক্সিকোতে মোট মৃত্যুসংখ্যা ৬৩ হাজার ৮১৯। এখনও পর্যন্ত ৪১ হাজার ৫৮৫ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে ব্রিটেনে। তারা তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে। আমেরিকা ও ব্রাজিলের তুলনায় ভারতে যদিও মৃত্যু অনেকটাই কম। এই মুহূর্তে দেশে মৃত্যুর হার ১.৭৯ শতাংশ।
তবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও, সুস্থতার হার খানিকটা হলেও স্বস্তি জোগাচ্ছে সরকারকে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৬৪ হাজার ৯৩৫ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ২৭ লক্ষ ১৩ হাজার ৯৩৩ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত দেশে যত জন মানুষ নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তার মধ্যে ৭৬ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠতে পেরেছেন। রবিবার সকাল পর্যন্ত দেশে মোট সক্রিয় করোনার রোগীর সংখ্যা ৭ লক্ষ ৬৫ হাজার ৩০২।
প্রতি দিন যত সংখ্যক মানুষের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে এবং তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার বলা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সংক্রমণ হার ৭.৪৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১০ লক্ষ ৫৫ হাজার ২৭ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে, যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
সংক্রমণের নিরিখে শুরু থেকেই শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। সেখানে এখনও পর্যন্ত ৭ লক্ষ ৬৪ হাজার ২৮১ জন মানুষ কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে ৫ লক্ষ ৫৪ হাজার ৭১১ জন করোনা রোগী সুস্থও হয়ে উঠেছেন সেখানে। নোভেল করোনার প্রকোপে এখনও পর্যন্ত ২৪ হাজার ১০৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন সেখানে।
এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তামিলনাড়ু। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লক্ষ ১৫ হাজার ৫৯০। এর মধ্যে ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ৭২৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ১৩৭ জন রোগীর। তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা অন্ধ্রপ্রদেশে এখনও পর্যন্ত ৪ লক্ষ ১৪ হাজার ১৬৪ জন মানুষ নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ লক্ষ ১২ হাজার ৬৮৭ জন। তবে মৃত্যুর নিরিখে অন্ধ্রের চেয়ে এগিয়ে কর্নাটক। অন্ধ্রে যেখানে এখনও পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা কর্নাটকে সংখ্যাটা ৫ হাজার ৪৮৩। কর্নাটকে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লক্ষ ২৭ হাজার ৭৬। সেরে উঠেছেন ২ লক্ষ ৩৫ হাজার ১২৮ জন করোনা রোগী।
এই তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। সেখানে এখনও পর্যন্ত ২ লক্ষ ১৯ হাজার ৪৫৭ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ মধ্যে ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৭৪১ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। করোনার প্রকোপে সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ৩৫৬ জন। তবে মৃত্যুর নিরিখে আবার উত্তরপ্রদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে থাকে দিল্লি। সেখানে এখনও পর্যন্ত ৪ হাজার ৪০৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৭১ হাজার। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৯২২ জন রোগী। তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৭৬৬। এর মধ্যে ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৬৪৪ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এখনও পর্যন্ত করোনার প্রকোপে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ১২৬ জন।
তালিকায় অষ্টম, নবম এবং দশম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে বিহার, তেলঙ্গানা এবং অসম। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৩, ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৯০ এবং ১ লক্ষ ৩ হাজার ৭৯৪। প্রথম দশে থাকা এই তিন রাজ্যে মৃত্যু সংখ্যা এখনও হাজারের গণ্ডি পেরোয়নি।
আরও পড়ুন: ৮ সেপ্টেম্বর থেকেই কি কলকাতায় মেট্রো চলাচল শুরু?
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy