ছবি: এএফপি।
গোটা দেশে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কোল্ড চেন পরিকাঠামো গড়ে তোলা কার্যত অসম্ভব। তাই ফাইজ়ারের করোনা-টিকা ভারতে আনা এবং তা প্রয়োগের বিষয়টি কার্যত বাতিল করার পথে কেন্দ্র। আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাংবাদিক বৈঠকে নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পল বলেন, “এখনও পর্যন্ত মাত্র একটি টিকারই মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রার প্রয়োজন, যে পরিকাঠামো গড়ে তোলা সব দেশের পক্ষেই বেশ কঠিন।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদর পুনাওয়ালা আজ টুইটারে লিখেছেন, ‘‘ভাল প্রতিষেধকের সংজ্ঞা— ১) যা নিরাপদ, ২) দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা দিতে সক্ষম, ৩) যা অতি কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ ও অন্যত্র নিয়ে যাওয়া সম্ভব এবং ৪) সকলের আয়ত্তের মধ্যে।’’ অনেকের মতে, সংরক্ষণের তাপমাত্রার বিষয়টিতে বাড়তি জোর দিয়েছেন সিরাম শীর্ষ কর্তা। কেন্দ্রের তরফেও ইঙ্গিত, ফাইজ়ারের টিকার বদলে সিরাম-সহ বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে ভারতে উৎপাদন ও গবেষণা চলতে থাকা টিকাগুলির উপরেই সরকার বেশি নির্ভর করছে।
আজ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারতে এই মুহূর্তে পাঁচটি প্রতিষেধকের কাজ জোরকদমে চলছে। যার মধ্যে দু’টি প্রতিষেধক তৃতীয় বা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই দু’টির মধ্যে একটি হল, অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড’। সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশের ১৫টি গবেষণা কেন্দ্রে ১৬০০ স্বেচ্ছাসেবকের উপরে ওই প্রতিষেধকের তৃতীয় পর্যায়ের প্রয়োগ চলেছে। অন্য দিকে ভারত বায়োটেকের ‘দেশীয়’ প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় দফার প্রয়োগ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন ভি কে পল।
আরও পড়ুন: মাউথওয়াশ কি ঠেকাতে পারবে সংক্রমণ?
বাকি তিনটি প্রতিষেধকের মধ্যে দেশীয় সংস্থা জ়াইডাস ক্যাডিলার ‘জাইকোভ ডি’-এর দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রয়োগের ফলাফল আসার মুখে। আর এক ভারতীয় সংস্থা ‘বায়োলজিক্যাল ই’-এর প্রতিষেধকটি প্রথম/দ্বিতীয় ধাপের প্রয়োগের পর্যায়ে রয়েছে। ভারতে রুশ প্রতিষেধক স্পুটনিক-ভি-এর দ্বিতীয়/তৃতীয় পর্বের পরীক্ষা খুব দ্রুত রেড্ডিজ় ল্যাবরেটরিজ় শুরু করবে। ‘ব্রিকস’ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ জানিয়েছেন, দ্রুত প্রতিষেধক পৌঁছে দিতে স্পুটনিক টিকার উৎপাদন ভারতেই করা হতে পারে। ওই মঞ্চেই আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানান, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা যৌথ ভাবে কোভিডের টিকার স্বত্ব রক্ষার বিষয়টিতে ছাড় দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। ব্রিকসের অন্য দেশগুলির সাহায্য চেয়েছেন তিনি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় শীঘ্রই বিষয়টি আলোচিত হতে পারে।
আরও পড়ুন: করোনা রোগীকে ফেরাল সবাই, প্লাজ়মা দিল পুলিশ
স্বাস্থ্যকর্তাদের যুক্তি, ভারতের নিজস্ব তিনটি ও বিদেশি দু’টি প্রতিষেধকের চূড়ান্ত ফলাফল কয়েক মাসের মধ্যেই আসবে। সে ক্ষেত্রে ফাইজ়ারের টিকা আমদানির প্রয়োজন হবে না। ভি কে পলের মতে, গোটা দেশে ফাইজ়ারের প্রতিষেধক দিতে হলে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি কোল্ড চেনের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে, যা দুঃসাধ্য। এখনও পর্যন্ত দেশে-বিদেশে যে সমস্ত প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়েছে, তার মধ্যে একটি বাদে অন্যগুলির অধিকাংশকেই সাধারণ তাপমাত্রা থেকে মাইনাস ২০ ডিগ্রির মধ্যে সংরক্ষণ করা সম্ভব। সেই পরিকাঠামো ভারতের রয়েছে।
কেন্দ্রীয় কর্তাদের মতে, ফাইজ়ারের পক্ষে গোটা ভারতের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। স্বল্প সংখ্যক প্রতিষেধকই তারা দিতে সক্ষম বলে মনে করছে এ দেশের প্রতিষেধক সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি। সব দিক বিবেচনা করে ফাইজ়ারের টিকা আমদানি না-করার প্রশ্নে কার্যত ঐকমত্যের পথে কেন্দ্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ভারতে প্রতিষেধক প্রথমে দেওয়া হবে ৩০ কোটি মানুষকে। যাঁদের মধ্যে এক কোটি হলেন স্বাস্থ্যকর্মী (চিকিৎসক, নার্স, আশা কর্মী, ডাক্তারির পড়ুয়ারা), দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছেন পুরকর্মী, পুলিশ ও আধাসেনারা। এঁদের সংখ্যা দু’কোটি। তৃতীয় ধাপে টিকা পাবেন ২৬ কোটি পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রবীণ। এক কোটি প্রতিষেধক দেওয়া হবে এমন প্রবীণদের, যাঁদের পুরনো রোগের ইতিহাস রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy