লকডাউনের মধ্যেও দেশ জুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। তবে এই অতিমারির মধ্যেও কিছুটা হলেও স্বস্তির আবহ কেরলে। সারা দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যখন ঊর্ধ্বগামী, তখন নিজেদের রাজ্যের লেখচিত্রটি প্রায় সরলরেখায় টেনে আনতে সক্ষম হল সেখানকার বাম সরকার। গত সোমবার থেকে প্রতিদিন যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৮ থেকে ১৩-র মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। রবিবার সকালে তা ০-তে এসে ঠেকেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি সেখানে।
জানুয়ারির শেষ দিকে কেরলের বাসিন্দা তিন বিদেশফেরতের হাত ধরেই ভারতে প্রথম নোভেল করোনা হানা দেয়। সেই থেকে গত আড়াই মাস ধরে এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে গোটা দেশ। গত ২৪ মার্চ থেকে লকডাউন কার্যকর হওয়ার সত্ত্বেও দেশে আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃতের সংখ্যাও ৩০০ ছুঁইছুঁই। ঢের পরে শুরু হলেও, মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।পড়শি রাজ্য তামিলনাড়ুতেও আক্রান্তের সংখ্যা যেখানে ১০০০ ছুঁইছুঁই, সেখানে কেরলে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও ৫০০-ও পেরোয়নি। এখনও পর্যন্ত দু’জন প্রাণ হারালেও, সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১২৩ জন।
সংক্রমণ ঠেকাতে রাজ্য সরকার শুরু থেকে উদ্যোগী হয়েছিল বলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা গিয়েছে বলে দাবি চিকিৎসকদের একাংশের। তাঁদের মতে, সংক্রমণ চিহ্নিত করতে পরীক্ষায় কোনও কার্পণ্য করেনি কেরল সরকার। ভারতের মতো জনঘনত্বের দেশে ব্যাপক হারে পরীক্ষা করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে গোটা দেশে যখন কাটাছেঁড়া চলছে, সেইসময় শুধুমাত্র এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই ১৩ হাজারের বেশি মানুষের পরীক্ষা করেছে কেরল সরকার। সেই তুলনায়, আক্রান্তের নিরিখে কেরলের চেয়ে এগিয়ে থাকা অন্ধ্রপ্রদেশে পরীক্ষা হয়েছেছ’হাজার মানুষের । আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ছুঁইছুঁই তামিলনাড়ুতে পরীক্ষা হয়েছে আট হাজার মানুষের।
‘ওয়াক ইন কিয়স্ক’ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ছবি: পিটিআই।
আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরেই চলে আসছে করোনাভাইরাসের টিকা! দাবি অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীর
করোনা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকা নিয়ে বিভিন্ন রাজ্য থেকে যখন অভিযোগ জমা পড়েছে, সেইসময় র্যাপিড টেস্টিং কিট দিয়েই কাজ চালিয়ে নিয়েছে কেরল সরকার, যার সাহায্যে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ১-২টি উপসর্গ দেখেই রোগের নির্ণয় করা সম্ভব। এর জন্য নিজের সাংসদ তহবিল থেকে রাজ্য সরকারের হাতে ৫৭ লক্ষ টাকা তুলে দেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরও। তার সাহায্যেই যে এলাকায় সংক্রমণের প্রকোপ বেশি, সেখানে গিয়ে পরীক্ষা করতে শুরু করেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। আবার স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি ‘ওয়াক ইন কিয়স্ক’ও তৈরি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে কাচ দিয়ে ঘেরা কিউবিকলে বসেই লালারসের নমুনা সংগ্রহের কাজ সারা যায়। সামনে থেকে যে ৩০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করে চলেছে, তাঁরা যাতে সরসারি আক্রান্তের সংস্পর্শে না আসেন তার জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়।
কেরলের সামনে অন্য আর একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, বিদেশ থেকে আগতদের কোয়রান্টিনে নিয়ে যাওয়া। প্রতিবছর ১০ লক্ষের বেশি বিদেশি পর্যটক কেরলে আসেন। রাজ্যের মোট জনসংখ্যার একটা বড় অংশ বিদেশে থাকেন। চিনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন বহু পড়ুয়া। তাঁদের মধ্যে থেকে সংক্রমণের উৎস খুঁজে বার করে, সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন মানুষদের কোয়রান্টিনে রাখতেশুরু থেকেই সক্রিয় ছিল কেরল সরকার। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ইটালি থেকে ফিরে কাউকে কিছু জানাননি এক দম্পতি। প্রশাসন যখন বিষয়টি জানতে পারে, তত ক্ষণে একাধিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া হয়ে গিয়েছে তাঁদের। তাঁরা যেখানে গিয়েছিলেন এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যাঁদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, সেইরকম ৯০০ জনকে খুঁজে বার করে কোয়রান্টিনে রাখা হয়। ইটালি থেকে ফিরে করোনা ধরা পড়ে ওই দম্পতির কন্যা ও জামাতারও। সংবাদমাধ্যমে তাঁরা জানান, সরকার শুধুমাত্র তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থাই করেনি। কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থাও করে। করোনা কাটিয়ে সেরে উঠেছেন তাঁরা।
ত্রাণ বিলির তোড়জোড়। ছবি: পিটিআই।
আরও পড়ুন: লকডাউন ভাঙায় বাধা, তলোয়ারের কোপে পুলিশের হাত ছিন্ন পঞ্জাবে
এর পাশাপাশি, লকডাউনের জেরে রাজ্যে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করেছে রাজ্য সরকার। সেখানে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। করোনা খাতে ব্যয়ের জন্য ২৬০ কোটি ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। আগাম দু’মাসের টাকা জমা করা হয়েছে পেনশনভোগীদের অ্যাকাউন্টেও। ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নেটওয়ার্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার।
এত কিছু সত্ত্বেও মার্চের শুরুতে পোঙ্গল উপলক্ষে জমায়েতে অনুমতি দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল কেরল সরকারকে। তবে তার পরেও যে ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে কেরল সরকার, তা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও জায়গা করে নিয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশের ছ’টি রাজ্য করোনা নিয়ে কেরল সরকারের পরামর্শ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy