Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

করোনা: ভারতের হাতে ৩০ দিন, সতর্কবার্তা বিশেষজ্ঞদের

ভারত এখন সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাপে। চতুর্থ বা পঞ্চম সপ্তাহেই ভয়াবহ সংক্রমণ ছড়িয়েছিল অন্য দেশগুলিতে।

করোনা ত্রাস: বেঙ্গালুরু স্টেশনে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা। ছবি: পিটিআই।

করোনা ত্রাস: বেঙ্গালুরু স্টেশনে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২০ ০৪:৩৭
Share: Save:

দু’শোর বেশি লোকের যে কোনও ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ। এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করেছে দিল্লি সরকার। কড়াকড়িতে পিছিয়ে নেই অন্য রাজ্যও। মহারাষ্ট্রের সাতারায় গত কাল পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অভিযোগ, ওই পাঁচ জন একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন, যাতে পাঁচশোর বেশি মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। বেশির ভাগ রাজ্যে স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বহু অফিসে বাড়ি থেকেই কাজ করতে বলা হচ্ছে। বন্ধ সিনেমা হল, শপিং মলের মতো বিনোদনস্থল। জমায়েত আটকাতে বন্ধ বিয়েও। নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে মুম্বইয়ের সিদ্ধি বিনায়ক, বেলুড় মঠ, পুরীর মন্দিরেও।

বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে কি? ভারতে সংক্রমিতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ১১৪। মারা গিয়েছেন ২ জন। একশো কোটির দেশে সংখ্যাটা কি খুব ভয় পাওয়ার মতো? বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, করোনাভাইরাসে মৃত্যুহার অতটাও বেশি নয়। সে দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে ইবোলা বা মার্স। কিন্তু এই ভাইরাসটি খুব দ্রুত ছড়ায়। ফলে সংক্রমিতের সংখ্যা মারাত্মক হয়। এর খুব অল্প শতাংশ লোকও যদি মারা যান, সেই সংখ্যাটাও কিন্তু ভয়ানক। তিন মাসে গোটা বিশ্বে সংক্রমণ ঘটেছে ১ লক্ষ ৭৩ হাজারেরও বেশি জনের। এর মধ্যে ৬৬৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ভারত এখন করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে। অর্থাৎ কি না, চিন, ইটালি, ইরানের মতো আক্রান্ত দেশ থেকে রোগ নিয়ে যাঁরা ফিরেছেন, তাঁদের থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। সেই সংখ্যাটা একশো ছাড়ালেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই আছে। কিন্তু ‘সংক্রমণ-হার’ এখানেই যাতে আটকানো যায়, তার জন্যই ব্যাপক সতর্কতা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের ভাষায় যা হল, ‘ফ্ল্যাটনিং দ্য কার্ভ’।

নির্দেশ কেন্দ্রের

(সব ব্যবস্থাই আপাতত ৩১ মার্চ পর্যন্ত)

• সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কাতার, ওমান, কুয়েত থেকে কিংবা এই দেশগুলি হয়ে যাঁরা আসছেন, ১৪ দিন বাধ্যতামূলক ভাবে কোয়রান্টিন। ১৮ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর।

• ১৮ মার্চ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তুরস্ক, ব্রিটেন থেকে কোনও যাত্রী (ভারতীয় বা বিদেশি) ভারতে আসতে পারবেন না। কোনও বিমান সংস্থা ওই যাত্রীদের বিমানে নিতে পারবেন না। ১৮ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর।

রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে কিছু প্রস্তাব

• সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জিম, মিউজিয়াম, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সুইমিং পুল, থিয়েটার বন্ধ।

• পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতে হবে। যে পরীক্ষা চলছে, সেখানে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১ মিটার ব্যবধান রাখতে হবে।

• বাড়ি থেকে কাজ করুন কর্মীরা, ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে মিটিং— আর্জি বেসরকারি সংস্থাকে।

ব্যাপারটা এ রকম— ইটালিতে প্রথম সপ্তাহে সংক্রমণ হয়েছিল ৩ জনের। পরের সপ্তাহেই আক্রান্ত ১৫২। তার পরের সপ্তাহে ১০৩৬। চতুর্থ সপ্তাহে ৬৩৬২। পঞ্চম সপ্তাহে ২৭৯৮০। মৃতের সংখ্যা ২১৫৮। সংক্রমণ ও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকা মৃতের সংখ্যার ক্রমবর্ধমান গ্রাফটাই ভারতে তৈরি হতে দেওয়া যাবে না বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। গ্রাফ বা রেখাচিত্রে আক্রান্তের সংখ্যার ওই লম্বা লাফ আটকানোর নামই ‘ফ্ল্যাটনিং দ্য কার্ভ’।

অনেকটাই পরে আক্রান্ত হয়েছে ভারত। প্রথম সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল তিন। দ্বিতীয় সপ্তাহে ২৪, তৃতীয় সপ্তাহে ১০৫...। সংক্রমণের এই গতিটাই ধরে রাখতে চাইছে দেশের চিকিৎসকেরা। লক্ষ্য হচ্ছে, এক বছরে এক লক্ষ লোক আক্রান্ত হোক, এক মাসে যেন এক লক্ষ আক্রান্ত না-হয়। কারণ তা হলে, দেশের চিকিৎসা পরিকাঠামোয় অত রোগী সামলানো যাবে না। যেমনটা ঘটেছে ইটালিতে। হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রোগী এলে যাঁদের বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে, শুধু তাঁদেরই আইসিইউয়ে রাখা হচ্ছে। বৃদ্ধ, মৃতপ্রায়দের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারণ হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা কিংবা চিকিৎসা পরিষেবা সীমিত। মহামারি (চতুর্থ ধাপ) ঘোষণা হয়েছে ইটালিতে।

কেন্দ্রের পরামর্শ

• বিয়েবাড়িতে নিমন্ত্রিতের সংখ্যা যথাসম্ভব কম। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সম্মেলন স্থগিত।

• জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলুক স্থানীয় প্রশাসন।

• বাজার, রেলস্টেশন, পোস্টঅফিস, শপিং মলে ‘কী করণীয় এবং কী করবেন না’ তার তালিকা ঝুলিয়ে দেওয়া। বাজারের সময় নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ।

• নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ নয়।

• গণপরিবহণ জীবাণুমুক্ত করা ও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা এবং পারস্পরিক দূরত্ব কমপক্ষে ১ মিটার রাখা।

• আলিঙ্গন ও করমর্দন নয়।

ভারতের পরিস্থিতি যাতে চিন বা ইটালির মতো না-হয়, তার জন্য আগামী তিরিশটা দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। চতুর্থ বা পঞ্চম সপ্তাহেই ভয়াবহ ভাবে সংক্রমণ ছড়িয়েছে অন্য দেশগুলোতে। সেটা রুখতেই ধর্মস্থানগুলোর দরজায় ‘তালা’ দেওয়া হচ্ছে, বন্ধ সিনেমা হল, অফিসে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর-এর ডিরেক্টর জেনারেল বলরাম ভার্গব বলেন, ‘‘বড় এলাকা জুড়ে সংক্রমণ ঠেকাতে ৩০ দিন হাতে রয়েছে ভারতের। এটাই সময়...।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy