প্রতীকী ছবি।
মুসলিমদের জনসংখ্যা বাড়ছে ঠিকই। কিন্তু স্বাধীনতার পরে ষাট বা সত্তরের দশকে যে হারে মুসলিমদের জনসংখ্যা বাড়ত, এখন আর সে হারে বাড়ছে না বলেই জনগণনার হিসেব। সঙ্ঘ পরিবার চাইছে, গোটা দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি আনুক মোদী সরকার। সঙ্ঘের তির মুসলিমদের দিকে। কিন্তু দেশে দশ বছর অন্তর যে জনগণনা হয়, তার পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি দশ বছরে মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধাপে ধাপে কমে আসছে।
গত ১৫ অগস্ট লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, প্রত্যেকের পরিবারকে ছোট রাখা উচিত। সকলের জন্য শিক্ষা-স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করা না গেলে দেশ সুখী হতে পারে না। মোদী তাঁর লালকেল্লার বক্তৃতায় বিশেষ কোনও সম্প্রদায়ের দিকে আঙুল তোলেননি। কিন্তু বলেছিলেন, সমাজের একটি অংশই পরিবারের জন্ম সংখ্যা কম রাখছে।
এ বার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ কোনও রাখঢাক না করেই জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার জন্য মুসলিমদের দায়ী করছে। আরএসএসের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১৯৫১ থেকে ২০১১— দেশের মোট জনসংখ্যায় মুসলিমদের হার ৯.৮ শতাংশ থেকে ১৪.২৩ শতাংশে পৌঁছেছে। কিন্তু জনগণনার হিসেব বলছে, ২০০১-র তুলনায় ২০১১-তে মুসলিমদের সংখ্যা ২৪.৬ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে তার আগের দশকে, অর্থাৎ ১৯৯১-র তুলনায় ২০০১-তে মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ছিল ২৯.৫ শতাংশ।
আগের দশকগুলিকে এই হার ৩০ শতাংশের বেশি।
২০১১ জনগণনা
• মোট ১২১.০৯ কোটি
• হিন্দু ৯৬.৬৩ কোটি (জনসংখ্যার ৭৯.৮%)
• মুসলিম ১৭.২২ কোটি (জনসংখ্যার ১৪.২%)
মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার
১৯৫১-৬১ ৩২.৪%
১৯৬১-৭১ ৩০.৯%
১৯৭১-৮১ ৩০.৭%
১৯৮১-৯১ ৩২.৮%
১৯৯১-২০০১ ২৯.৫%
২০০১-২০১১ ২৪.৬%
জনসংখ্যা বৃদ্ধি কি আদৌ ভারতের চিন্তার কারণ? দ্বিতীয়বার মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে গত জুলাইয়ে কেন্দ্রের অর্থ মন্ত্রকের আর্থিক সমীক্ষা কিন্তু উল্টো কথাই বলেছিল। আর্থিক সমীক্ষা বলেছিল, গোটা দেশে জন্মের হার কমছে। তার ফলে দেশের জনসংখ্যায় বয়স্কদের হার বেড়ে যাচ্ছে।
মহিলারা মাথা পিছু গড়ে যত জন সন্তানের জন্ম দেন, তাকেই জন্মের হার বলে। নিয়ম বলে, এ দেশে জন্মের হার ২.১ হলে জনসংখ্যা একই থাকবে। কিন্তু আর্থিক সমীক্ষায় মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, ২০২১-এই জন্মের হার ১.৮ শতাংশে নেমে আসবে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কিছু রাজ্যে এখনই জন্মহার ১.৬ থেকে ১.৭-এর ঘরে। ফলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে এই সব রাজ্যের ২০ শতাংশ মানুষের বয়স হবে ৫৯ বছরের বেশি।
সঙ্ঘ পরিবারের নেতাদের আশঙ্কা, এ দেশে হিন্দুরা একসময় সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন। আরএসএসের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১৯৫১-য় মুসলিম ছাড়া বাকি ধর্মের মানুষেরা ছিলেন জনসংখ্যার ৮৮ শতাংশ। ২০১১-য় তা ৮৩.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু এই আশঙ্কা উড়িয়ে
দিচ্ছেন দেশে জনগণনার ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল ও সেন্সাস কমিশনারের কর্তারা।
তাঁদের যুক্তি, ২০১১-র জনগণনায় দেখা গিয়েছিল, তার আগের দশকে মুসলিমদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। ২০০১-এর তুলনায় ২০১১-তে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১৭.৭ শতাংশ। মুসলিমদের ২৪.৬ শতাংশ। কিন্তু হিন্দুদের বৃদ্ধির হারও ছিল ১৬.৮ শতাংশ। মুসলিমরা জনসংখ্যার ১৪.২ শতাংশ হলে হিন্দুরা ৭৯.৮ শতাংশ। প্রতিটি জনগণনাতেই দেখা যাচ্ছে, হিন্দুদের মতোই মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমশ কমে আসছে। ফলে হিন্দুদের সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার দূরদূরান্তে কোনও আশঙ্কা নেই।
জনগণনা বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, শিক্ষার হার, আয় বাড়লেই পরিবার পরিকল্পনার প্রভাব দেখা যায়। পারিবারিক সিদ্ধান্তগ্রহণে মহিলাদের ভূমিকা বেড়ে যায়। মুসলিমদের পুরুষ-নারীর অনুপাতও বেড়েছে। ২০০১-এ প্রতি হাজার জন মুসলিম পুরুষে মহিলাদের সংখ্যা ৯৩৬ ছিল। ২০১১-য় তা বেড়ে ৯৫১ হয়েছে। হিন্দু-খ্রিস্টানদের মতো মুসলিমদের মধ্যেও শিক্ষার হার বেড়ে যাওয়ায় জন্মের হার কমতে শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy