গাফিলতির শুরু ষাটের দশকে। প্রায় ছয় দশক পরে তারই খেসারত দিচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর সাধের বুলেট ট্রেন প্রকল্প।
মহারাষ্ট্রের তারাপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৬১ সালে। দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে, তার জন্য স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছিলেন পালগড়ের আদিবাসীরা। প্রতিশ্রুতি ছিল, জমিজিরেত ছেড়ে যাওয়া মানুষগুলির সব ক্ষতি পুষিয়ে দেবে সরকার। দেওয়া হবে বাস্তু ও চাষের জমি। সঙ্গে ছিল চাকরির আশ্বাস, এলাকায় হাসপাতাল আর স্কুল গড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও। কিন্তু সে সব প্রতিশ্রুতি আজও রয়ে গিয়েছে কাগজে-কলমে। স্থানীয় আদিবাসীদের অভিযোগ, অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্র ও মহারাষ্ট্রের একের পর এক সরকার। ঘটনাচক্রে, সেই পালগড় দিয়েই ছোটার কথা বুলেট ট্রেনের। যা জুড়বে মুম্বই ও অমদাবাদকে।
এই প্রকল্পের জন্য ২০০ হেক্টর জমি চাইতেই বেঁকে বসেছেন পালগড়ের আদিবাসী ও সাধারণ মানুষ। প্রায় ৭২টি গ্রামের বাসিন্দারা একজোট হয়ে সরকারকে জানিয়েছেন, একই ভুল করে দ্বিতীয়বার উদ্বাস্তু হতে রাজি নন তাঁরা। সমীক্ষার কাজে যাওয়া রেল কর্মীদের মেরেধরে খেদিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে একাধিক বার।
কেন্দ্রে ও রাজ্যেও বিজেপির সরকার। রাজনৈতিক কারণেই এই লড়াইয়ে পালগড়ের মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেস। পরিস্থিতি এতে ঘোরালো হয়েছে আরও। তাই সদ্য হওয়া পালগড়ের উপনির্বাচনে বিজেপি জিতলেও, জমি পাওয়ার বিষয়ে রীতিমতো সন্দিহান ন্যাশনাল হাইস্পিড রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআরসিএল)।
মুম্বই-আমদাবাদ ৫০৮ কিমি পথের মধ্যে ১১০ কিমি লাইন গিয়েছে ৭২টি গ্রামের উপর দিয়ে। গোটা প্রকল্পের প্রায় ২০ শতাংশ জমি না মেলায় কার্যত থমকে গিয়েছে গোটা প্রকল্পের কাজ। অথচ, এনএইচআরসিএলের পরিকল্পনা ছিল, ২০১৮ সালের মধ্যে চূড়ান্ত সমীক্ষা সেরে ফেলে একসঙ্গে ২৬টি দেশি-বিদেশি ঠিকাদার সংস্থাকে দিয়ে গোটা প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেওয়ার। কিন্তু এখনও বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা তাঁদের অবস্থানে অনড়।
রেলের কাছে সমস্যা হল, প্রস্তাবিত লাইনের পাশেই পাহাড় থাকায় ওই জমি অধিগ্রহণ করা ছাড়া রাস্তা খোলা নেই। কারণ, পাহাড় কেটে লাইন পাততে হলে প্রকল্পের খরচ বেড়ে যাবে। আপত্তি জানাবে বিনিয়োগকারী সংস্থা।
আগামী ২০২২ সাল অর্থাৎ স্বাধীনতার ৭৫ বছরের পূর্তিতে বুলেট ট্রেন চালাতে মরিয়া প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। সমাধান সূত্র হিসেবে জমি হস্তান্তরের আগেই দ্রুত আদিবাসীদের জন্য নতুন বাড়ি, স্কুল ও হাসপাতাল গড়ে দিতে বলা হয়েছে এনএইচআরসিএল কর্তৃপক্ষকে। জমি পাওয়ার আগেই এ ভাবে বাড়ি-স্কুল গড়ে দেওয়া কতটা ঠিক, তা নিয়ে মৃদু আপত্তি জানিয়েছিল এনএইচআরসিএল। রীতিমতো ধমক দিয়ে রেল বোর্ড জানিয়েছে, জমি না পেলেও সরকার যে আদিবাসীদের পাশে রয়েছে, সেই বার্তা দিতেই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। স্থানীয় যুবকদের প্রকল্পে কাজ দিতে অবিলম্বে প্রশিক্ষণ শিবিরও খুলতে বলা হয়েছে।
রেল কর্তৃপক্ষের হিসেব, পঞ্চাশটি গ্রামের মানুষ জমি দিতে নিমরাজি আছেন। উপযুক্ত পরিকাঠামো-সহ বাসস্থান, চাকরির প্রশিক্ষণ— এই ধরনের পদক্ষেপ দেখলে তাঁরা এগিয়ে আসতে পারেন জমি দিতে। সে ক্ষেত্রে চাপ বাড়বে বাকিদের উপরে।
আপাতত সেই আশাতেই বুক বাঁধছে রেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy