ফাইল চিত্র।
বেশির ভাগ মুসলিম সংগঠন আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, অযোধ্যার বিতর্কিত জমি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় মেনে নেওয়া হবে। আজ সেই পথে হেঁটেই প্রধান মামলাকারী সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড বলল, তারা এই রায় নিয়ে কোনও রিভিউ পিটিশন পেশ করবে না। তবে রায় সম্পর্কে মুসলিম সমাজের একাংশের অসন্তোষ চাপা থাকেনি। মুসলিম ল বোর্ডের সচিব জ়াফরিয়াব জিলানি এবং এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি আজ জানিয়ে দিয়েছেন, এই রায়ে তাঁরা সন্তুষ্ট নন। উভয়েরই বক্তব্য, বিতর্কটা ছিল মসজিদ নিয়ে। বিকল্প জমি এর সমাধান নয়। মুসলিম ল বোর্ড আগামী দিনে রায় পর্যালোচনার আবেদন জানানোর কথাও ভাবছে।
তবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড স্বাগত জানিয়েছে রায়কে। তাদের সচিব জাফর ফারুকি জানান, তাঁরা রায় পর্যালোচনার আবেদন জানানোর পথে হাঁটবেন না। এর আগে শুনানির একটি পর্ব শেষ হওয়ার পরেও মধ্যস্থতার কথা বলেছিলেন ফারুকি। এতে প্রশ্ন ওঠে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড কি নিজেদের দাবি ছেড়ে দিচ্ছে? ফারুকির বিরুদ্ধে সিবিআই মামলা করেছে উত্তরপ্রদেশে। ফারুকির উপরে সেই চাপ কাজ করছে কি না, উঠেছে সেই প্রশ্নও। এআইএমআইএম নেতা ওয়াইসি মন্তব্য করেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট নিঃসন্দেহে সুপ্রিম, কিন্তু তারা ভুল করতে পারে না, এমন নয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এই রায়ে তথ্যকে হারিয়ে জয়ী হল বিশ্বাস।’’ সাংবাদিক বৈঠক করে ওয়াইসি বলেন, ‘‘রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট যে ভাবে সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের ব্যবহার করেছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই। এই রায় সৌভ্রাতৃত্বের নয়।’’
মুসলিম ল বোর্ডের সচিব জ়াফরিয়াব জিলানি সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের বাইরে এবং পরে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, “রায়ে সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে বহু কিছু বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা এই রায়ে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। সংবিধানের ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদ এর অনুমতি দেয় না।” রায়ের কিছু অংশকে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে শান্তির আবেদন জানিয়েছেন জিলানি। বলেছেন, “এতে কারও জয় বা পরাজয় হয়নি। আমরা সম্ভাব্য আইনি পথে যাব। আমরা সকলের কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করছি।”
শীর্ষ আদালত বলেছে, অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে মন্দির তৈরি হবে। বিকল্প পাঁচ একর জমি পাবে মুসলিমদের পক্ষের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। ল বোর্ডের সচিব জিলানির বক্তব্য, “দীর্ঘদিন ধরে যে বিতর্ক চলেছে তা মসজিদ নিয়ে, জমি নিয়ে নয়। মসজিদের বিনিময়ে জমি হয় না। আমাদের অন্য জায়গায় ৫০০ একর জমি দিলেও সমস্যার সমাধান হবে না।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘কোর্ট এক দিকে মেনে নিয়েছে, রামলালার মূর্তি বসানো হয়েছে ১৯৪৯ সালে। তার আগে ওখানে নমাজ পড়া হত এবং মসজিদ ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও সিদ্ধান্ত অন্যদের বিশ্বাসের পক্ষে এবং বাস্তব ইতিহাসের বিরুদ্ধে গিয়েছে।” জিলানি এ-ও বলেছেন, “আমরা রায়ের ব্যাপারে সহমত নই। তবে এ কথা কখনওই বলব না যে, চাপ ছিল। সকলেই ভুল করতে পারে। শীর্ষ আদালত অতীতে বহু রায়ের পর্যালোচনা করেছে। যদি ল বোর্ডের ওয়ার্কিং কমিটি চায়, তা হলে ৩০ দিনের মধ্যে আমরা রিভিউ পিটিশন দাখিল করব। আমাদের আইনি টিম রায়ের পুরোটা পড়ার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।”
কী হতে পারে রিভিউ পিটিশন জমা পড়লে?
আইনজীবীরা বলছেন, আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট পক্ষ সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন জমা দিতে পারে। তার শুনানি হবে ওই বেঞ্চেই, যেখানে শুনানি চলছিল। প্রথমে বেঞ্চের চেম্বারে, পরে প্রয়োজন মনে হলে শুনানি হবে এজলাসে সকলের সামনে। নতুন কোনও নথি সামনে এলে তা-ও শোনা হবে।
রিভিউ পিটিশনের রায় অসন্তুষ্ট পক্ষের দিকে গেলে কী হবে?
সেই পরিস্থিতিতে কোনও শীর্ষ আধিকারিক প্রধান বিচারপতির সামনে কিউরেটিভ পিটিশন দায়ের করবেন। তাতে বলা হবে, আগের রায়ে কিছু ত্রুটি রয়েছে। আদালত সংশোধনের চেষ্টা করুক। প্রধান বিচারপতি তখন তৈরি করবেন নতুন বেঞ্চ, যাতে অন্তত ৫ জন বিচারপতি থাকবেন। সেই বেঞ্চে এই কিউরেটিভ পিটিশনের উপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শুনানিতে বাদী-বিবাদী দু’পক্ষকেই ডাকার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
কিউরেটিভ পিটিশন খারিজ হলে?
সে ক্ষেত্রে অসন্তুষ্ট পক্ষ জরুরি ভিত্তিতে ফের পিটিশন করতে পারে। সেটিই তাদের শেষ হাতিয়ার। তাতেও হেরে গেলে রায় মেনে নেওয়া ছাড়া তাদের কোনও উপায় থাকবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy