Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পুরুষের সম্পত্তি নয় নারী, অপরাধের তালিকা থেকে বাদ পড়ল পরকীয়া

আবেদন জমা পড়েছিল ‘পুরুষের বিরুদ্ধে বৈষম্যে’র অভিযোগ তুলে। সেই সূত্রে পরকীয়া সংক্রান্ত আইনটি খতিয়ে দেখতে শুরু করে সু্প্রিম কোর্টের বেঞ্চ।

পরকীয়া ফৌজদারি অপরাধ নয়, রায় সুপ্রিম কোর্টের। অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস

পরকীয়া ফৌজদারি অপরাধ নয়, রায় সুপ্রিম কোর্টের। অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:১৮
Share: Save:

আবেদন জমা পড়েছিল ‘পুরুষের বিরুদ্ধে বৈষম্যে’র অভিযোগ তুলে। সেই সূত্রে পরকীয়া সংক্রান্ত আইনটি খতিয়ে দেখতে শুরু করে সু্প্রিম কোর্টের বেঞ্চ। আজ এক ঐতিহাসিক রায়ে পরকীয়া সম্পর্ক শুধু অপরাধের তালিকা থেকেই বাদ পড়ল না, সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট বলে দিল, ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা পরকীয়া আইনটি আগাগোড়া নারীর প্রতিই বৈষম্যমূলক ছিল।

প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আজ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৮ ধারাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে জানাল, ‘‘স্বামী কখনওই স্ত্রীর প্রভু হতে পারে না।’’ আদালতের সিদ্ধান্ত, পরকীয়া কোনও শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়। বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে পরকীয়া অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে বিবেচিত হবে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কেউ অন্যের পরকীয়ার জেরে আত্মহত্যা করলে প্রমাণসাপেক্ষে তা আত্মহত্যায় প্ররোচনা হিসেবেও গণ্য হবে। কিন্তু বিবাহিতা নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ালে পুরুষের পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা জরিমানা বা দুইই হওয়ার যে আইন ছিল এত দিন, তা আর বলবৎ থাকবে না।

এত দিন অবধি, পরকীয়ায় অভিযুক্ত হতেন পুরুষরাই। সেই সূত্রেই গত বছর ‘পুরুষ-বৈষম্যের’ অবসান চেয়ে আদালতে গিয়েছিলেন কেরলের অনাবাসী জোসেফ শাইন।

আরও পড়ুন: একই সঙ্গে বিয়ে আর যৌন স্বাধীনতা, এই দুয়ের প্র্যাকটিস কি সম্ভব?

কিন্তু ৪৯৭ ধারার ছত্রে ছত্রে আসলে নারীকে প্রায় জড়বস্তু হিসেবে দেখা হয়েছিল, সেটা এ দিন দ্ব্যর্থহীন ভাবে বলেছে আদালত। বেঞ্চের মতে, আইনটি সেকেলে, স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর। মহিলাদের সমানাধিকারের বিরোধী।

কী রকম? ৪৯৭ ধারায় নারী যেমন অভিযুক্ত হতেন না, তেমনই অভিযোগ করতেও পারতেন না। অর্থাৎ স্বামী পরকীয়ায় জড়ালে স্ত্রীর কিছু বলার ছিল না। কোনও অবিবাহিত মেয়ে বা বিধবা নারীর সঙ্গে যদি কোনও বিবাহিত পুরুষের সম্পর্ক হয়, তা হলে কোনও প্রশ্ন তোলার অবকাশ ছিল না। বিবাহিত নারীর সঙ্গে সম্পর্ক হলে তবেই তা শাস্তিযোগ্য। অর্থাৎ স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ‘অধিকার’ লঙ্ঘিত হলে তবেই তা অপরাধ বলে গণ্য হত। স্বামীর অনুমতি থাকলে আবার পরকীয়া দোষের ছিল না। আদালতের মতে, এতে নারীর নিজস্ব মত, নিজস্ব পছন্দ, নিজস্ব অধিকারের কোনও জায়গা নেই। ‘‘এটি মহিলাদের পুরুষের সম্পত্তি হিসেবে তুলে ধরেছে।’’

প্রধান বিচারপতি ছাড়াও এই সাংবিধানিক বেঞ্চের সদস্য ছিলেন বিচারপতি আর এফ নরিম্যান, বিচারপতি এ এম খানউইলকর, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি ইন্দু মলহোত্র। তাঁরা সর্বসম্মত ভাবে রায় দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য পরকীয়াকে অপরাধের তকমামুক্ত করার বিরোধী ছিল। সরকারের বক্তব্য ছিল, তাতে বিবাহের পবিত্রতা নষ্ট হবে। তার উত্তরে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘পরকীয়া থেকে যত না অসুখী দাম্পত্যের জন্ম হয়, অসুখী দাম্পত্য তার চেয়ে অনেক বেশি করে পরকীয়ার পথ প্রস্তুত করে।’’

প়ৃথিবীর বহু দেশেই এখন পরকীয়া আর অপরাধ নয়। চিন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রাজিলের মতো দেশের সঙ্গে এ বার নাম জুড়ল ভারতের। যদিও রায় নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘‘ব্রিটিশ জমানার আইন অনেক আগেই শেষ হওয়া উচিত ছিল।’’ কিন্তু দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়ালের মন্তব্য, ‘‘এই রায় মহিলাদের বিরোধী। আমরা মানুষকে বিয়ে করার জন্যও বলছি আবার অবৈধ সম্পর্কের জন্য ছাড়ও দিচ্ছি!’’ সমাজকর্মী বৃন্দা এডিজের আশঙ্কা, ‘‘পরকীয়া অপরাধ না হলে স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পরে তার বিরুদ্ধে কী ভাবে লড়বেন স্ত্রীরা?’’ কংগ্রেস নেত্রী রেণুকা চৌধুরিও এই সুরে সুর মিলিয়েছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE