দেশ ভাঙার চক্রান্তে কেন চুপ করে থাকেন? প্রশ্ন তুললেন এঁরা
অপর্ণা সেন, শ্যাম বেনেগাল ও রামচন্দ্র গুহ-সহ ৪৯ জন বিদ্বজ্জনের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লেখা খোলা চিঠির বিরুদ্ধে এ বার তোপ দাগলেন কঙ্গনা রানাউত, প্রসূন জোশী ও সোনাল মানসিংহ-সহ ৬১ জন। তাঁরা প্রশ্ন তুললেন, ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দেওয়ার ‘অপরাধে’ যখন কাউকে জেলে পোরা হচ্ছে, কাউকে খুন করা হচ্ছে, তখন কেন মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন ওই বিদ্বজ্জনরা? কেন তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে গত বছরের পঞ্চায়েত ভোটে অভূতপূর্ব হিংসার ঘটনার পরেও মুখ খোলেননি? কেন তাঁরা কিছু বলেননি পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটে হিংসার প্রেক্ষিতে? অপর্ণা, বেনেগাল-সহ ৪৯ জন বুদ্ধিজীবী গত ২৩ জুলাই খোলা চিঠি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। তাঁদের ‘স্বঘোষিত অভিভাবক’ বলেছেন এ দিনের চিঠিতে সই করা ৬১ জন বিশিষ্ট।
শুক্রবার যে খোলা চিঠি লিখেছেন ৬১ জন, তাতে ১২টি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, যার বিরুদ্ধে অপর্ণা সেন-সহ বিদ্বজ্জনদের অংশটি মুখ খোলেননি বলে অভিযোগ। সেই ১২টি ঘটনার মধ্যে ৭টি ঘটনাই পশ্চিমবঙ্গের।
এ দিনের চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী হওয়ার জন্য যখন পুরুলিয়ায় জগন্নাথ টুডুকে খুন করা হয়েছিল, তখন কোথায় ছিলেন ওই বিদ্বজ্জনরা? যখন উর্দু ভাষায় পড়াশোনা করবেন না আর বাংলা, ভূগোল ও কম্পিউটার শিক্ষার জন্য শিক্ষকের দাবি করায় ইসলামপুরে দাড়িভিট হাইস্কুলের ছাত্রদের গুলি করা হয়েছিল, তখন কেন অপর্ণা-সহ বিদ্বজ্জনদের ওই অংশটি প্রতিবাদ করেননি, এ দিনের চিঠিতে সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে কেন সন্দেশখালির হিন্দুদের ভোটদানে বাধা দেওয়া হলে বিদ্বজ্জনদের ওই অংশটি মুখ খোলেননি, তোলা হয়েছে সেই প্রশ্নও।
৬১ জন বিশিষ্টের লেখা খোলা চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘‘উপজাতি ও প্রান্তিক মানুষরা যখন নকশালপন্থীদের হামলার শিকার হয়েছেন, তখন ওঁরা (আগের চিঠির বিদ্বজ্জনরা) চুপ থেকেছেন। সন্ত্রাসবাদীরা যখন কাশ্মীরে স্কুল পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন, তখনও ওঁরা মুখে কুলুপ এঁটে থেকেছেন। দেশকে ভেঙে টুকরো টুকরো করার কোনও পরিকল্পনা, কোনও চক্রান্তের বিরুদ্ধেই ওঁদের কখনও সরব হতে দেখা যায়নি। দেশের সামনের সারির কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন সন্ত্রাসবাদীদের স্লোগান শোনা গিয়েছে, তখনও তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার প্রয়োজন বোধ করেননি ওই বিদ্বজ্জনরা।’’
আরও পড়ুন- রামের নামে রণহুঙ্কার বন্ধে নরেন্দ্র মোদীকে খোলা চিঠি দেশের বিশিষ্টদের
আরও পড়ুন- কর্নাটকে লক্ষ্যপূরণ বিজেপির, আজই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে চলেছেন ইয়েদুরাপ্পা
গত ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রীকে লেখা খোলা চিঠিতে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের একাংশের আক্ষেপ ছিল, ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি এখন ‘উস্কানিমূলক রণহুঙ্কার’ হয়ে উঠেছে। ২০১৪-য় মোদী-জমানা শুরুর পর থেকে দলিত-সংখ্যালঘুদের উপরে ঘৃণাপ্রসূত হিংসার ঘটনা বেড়েছে বলে অভিযোগ ছিল আদুর গোপালকৃষ্ণন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শ্যাম বেনেগাল, রামচন্দ্র গুহ, বিনায়ক সেন, মণিরত্নম, অপর্ণা সেন, গৌতম ঘোষ, শুভা মুদ্গল, অনুরাগ কাশ্যপ, কৌশিক সেন, কঙ্কনা সেনশর্মা, রূপম ইসলাম প্রমুখ বিভিন্ন ক্ষেত্রের যশস্বীদের। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠাবশত লেখা চিঠিতে, গণপিটুনির প্রতিবিধানে কেন্দ্রের ব্যর্থতা নিয়েও বিঁধেছিলেন তাঁরা।
সেই চিঠিতে বলা হয়, ‘‘দুঃখজনক ভাবে 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি এখন উস্কানিমূলক রণহুঙ্কার হয়ে উঠেছে। যার ফলে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হচ্ছে। একাধিক গণহত্যাও ঘটছে। ধর্মের নামে এত হিংসা অবিশ্বাস্য! এটা মধ্যযুগ নয়! দেশের সংখ্যাগুরু সমাজের অনেকের কাছেই রামের নাম অতি পবিত্র। শীর্ষ স্তরের প্রশাসক হিসেবে, রামের নামে কালি ছিটানো প্রতিরোধের দায়টা কিন্তু আপনারই (প্রধানমন্ত্রীর)!’’
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আগের খোলা চিঠির পরেই তার সমর্থনে এগিয়ে আসতে দেখা গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ওই সময় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে দ্বিতীয় এনডিএ সরকারকে হেয় করতেই বিশিষ্ট জনদের একাংশের একাংশের এই চক্রান্ত। তার মোকাবিলা করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি। এ বারের খোলা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’ নীতির প্রশংসা করেছেন ৬১ জন বিশিষ্ট। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতেই পারে, তা হলে বিজেপি-ই পিছনে থেকে বিশিষ্ট জনদের একাংশকে দিয়ে আগের চিঠিতে সই করা ৪৯ জন বিশিষ্টদের বক্তব্য খণ্ডনের চেষ্টা করল?
ছবি- টুইটারের সৌজন্যে
আগের চিঠির প্রতিবাদে এ দিনের খোলা চিঠিতে বিশিষ্টদের একটি অংশ অভিযোগ করেছেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদীরা যখন কাশ্মীরে স্কুল পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন, দেশকে ভেঙে টুকরো টুকরো করার কোনও পরিকল্পনা, কোনও চক্রান্ত হয়, দেশের কয়েকটি সামনের সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন সন্ত্রাসবাদীদের স্লোগান শোনা যায়, তখন সেগুলি ওঁদের কাছে (আগের চিঠির বিদ্বজ্জনদের) বাক স্বাধীনতা বা আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা মনে হয়। তার জন্য দেশের ঐক্য, সংহতিকে জলাঞ্জলি দিতেও তাঁরা দ্বিধা করেন না। ওঁদের একাংশ বহু বার জঙ্গি, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসবাদীদের মুখপত্র হিসাবেও কাজ করেছেন।’’
মোদী জমানাতেই যে দেশে বিরোধী মতামতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, মূল্য দেওয়া হয় সহিষ্ণুতার আদর্শকে, শুক্রবারের খোলা চিঠিতে তারও উল্লেখ করেছেন ৬১ জন বিদ্বজ্জন।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy