সত্যজিৎ রায় থেকে শুরু করে ঋতুপর্ণ ঘোষ, গৌতম ঘোষ থেকে সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্ত থেকে রাজ চক্রবর্তী – সমস্ত পরিচালকেরাই ছবিতে প্রেমের দৃশ্যে যথেষ্ট যত্নশীল থেকেছেন বাঙালি মননের দিকে তাকিয়ে।
‘অন্তহীন’ ছবিতে রাধিকা আপ্তে
বৃষ্টির সঙ্গে প্রেমের একটা চিরকালীন যোগ রয়েছে। এই প্রেম নিঃসন্দেহে নারী পুরুষের। প্রসঙ্গ হল, সিনেমাটোগ্রাফিতে কীভাবে ফুটে উঠেছে প্রেম বৃষ্টিকে সাক্ষী করে বা সঙ্গে নিয়ে। বাস্তব জীবনে প্রেমের প্রকাশ কখনও শান্ত, ধীর; কখনও বা আদিম। কিন্তু বাস্তবকে রিল বন্দি করার সময় কতটা সাবালক হয় প্রেমের পট? বস্তুত বাংলা সংস্কৃতির একটা প্রতিফলন থাকে বাংলা সিনেমাতে। অবশ্য সব আঞ্চলিক সংস্কৃতির ক্ষেত্রেই বিষয়টা মোটামুটি একই।
প্রাচ্যের দেশের সিনেমার মতো যৌনতার প্রদর্শন বাংলা সিনেমায় হয় না। তা ছাড়া সেন্সর বোর্ডেরও একটা নির্দেশিকা আছে। ছবিতে যৌনতা কতটুকু, কী ভাবে দেখানো হবে সে নিয়ে। পরিচালকদেরও একাংশ দাবি করেন, অনেক বাংলা সিনেমা যথাযথ যৌনতা দেখানো হয়নি বলে সঠিক মানের হয়ে উঠতে পারেনি। তা ছাড়া ছবির প্রয়োজনে অভিনেত্রীর শরীর প্রদর্শন নিয়েও অনেক বিতর্ক রয়েছে এই বাংলায়। সত্যজিৎ রায় থেকে শুরু করে ঋতুপর্ণ ঘোষ, গৌতম ঘোষ থেকে সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্ত থেকে রাজ চক্রবর্তী – সমস্ত পরিচালকেরাই ছবিতে প্রেমের দৃশ্যে যথেষ্ট যত্নশীল থেকেছেন বাঙালি মননের দিকে তাকিয়ে।
“সোনার খাঁচা”
‘বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি, এ কোন অপরূপ সৃষ্টি’ – বাগানে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গানে লিপ মেলাচ্ছেন অপর্ণা সেন। পরনে তার শাড়ি, বাগান জুড়ে তিনি ইতি-উতি ছুটছেন বিস্ময়ে; ছবির নাম “সোনার খাঁচা”। ছবির নায়ক উত্তম কুমার। কন্ঠে লতা মঙ্গেশকর। এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়, যত দিন বঙ্গে ঋতুরঙ্গ থাকবে, সেই রঙ্গমঞ্চে যত দিন আষাঢ় থাকবে, তত দিন থেকে যাবে এই গান, আর ওই আবেগ।
“চোখের আলোয়“
একটা সময় পুজো মণ্ডপ হোক কিংবা বিয়ে বাড়ি, একটা গান বাজত একটানা — ‘আর কত রাত একা থাকব।’ মোটামুটি গ্রামের দিকের বিয়ে বাড়িগুলির থিম সং ছিল এটি। রাতভর বৃষ্টিতে ছাদে ভিজতে ভিজতে প্রেমিক মনের আকুতি উজাড় করে নাচছেন, গাইছেন দেবশ্রী রায়। প্রেমের তীব্র অপেক্ষা গানের প্রতিটি পরতে, নায়িকার চোখে মুখে, অভিব্যক্তিতে। ছবির নাম “চোখের আলোয়”। “চোখের আলোয়” ছবিটিতে পুলক বন্দোপাধ্যায়ের লেখা গানটিতে সুর দিয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী আর কন্ঠ আশা ভোঁসলে।
“প্রেমের কাহিনী“
দেব ও কোয়েল অভিনীত প্রেমের কাহিনী“ ছিল এক সময়ের হিট ছবি। দেবের কেরিয়ারের প্রথম দিকের অন্যতম সেরা এই ছবিতে সুর দিয়ে ছিলেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ছবির একটি গান ‘রিম ঝিম এই ধারাতে’ সেই সময় বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। বৃষ্টিতে নায়ক নায়িকাকে একসঙ্গে ভিজতে দেখে দিল গার্ডেন গার্ডেন হয়েছিল একটি প্রজন্মের। গানটি গেয়েছিলেন শান ও শ্রেয়া ঘোষাল।
“অন্তহীন”
অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় রাধিকা আপ্তে, রাহুল বোস, অপর্ণা সেন, কল্যাণ রায় অভিনীত “অন্তহীন” ছবিটি বক্স অফিস মাতিয়েছিল একটা সময়। ছবির গল্প সমাজ, মানুষের জীবন, জীবনের নানা পরিস্থিতি, সেই সব পরিস্থিতিতে তৈরি হওয়া ভিন্ন আবেগ নিয়েই। বলা বাহুল্য ছবিতে প্রত্যেক অভিনেতাই দাপটের সঙ্গে নিজেদের রেশ রেখে গেছেন, সঙ্গে থেকে গিয়েছে ‘যাও পাখি বলো, হাওয়া ছলছল’ গানটি। কন্ঠে শ্রেয়া ঘোষাল এবং ছবিতে রাধিকা আপ্তে দু’জনেই অনবদ্য। আজও বর্ষার দিনে চিরপ্রেমিক মন বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে এই গান গুনগুন করে মনে মনে।
“রসোগোল্লা”
ছবির গল্প নবীন চন্দ্র দাসের জীবনী নিয়ে। নাম ভূমিকায় উজান গঙ্গোপাধ্যায়। গল্পটি অত্যন্ত সরল। নবীন চন্দ্রের, তার স্ত্রী ক্ষীরোদমণির (ভূমিকায় অবন্তিকা বিশ্বাস) জন্য নতুন এক মিষ্টি বানানোর ইচ্ছে। সেই ইচ্ছে পূরণ হয় রসগোল্লা আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে। পাভেল ও স্মরণজিৎ চক্রবর্তী অসাধারণ সারল্য রেখেছেন গল্পে। তেমনই সরলতায় ভরা ছবির চিত্রনাট্য। ছবিতে সুর আরোপ করেছেন কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য, অনুপম রায় এবং অর্ণব দত্ত। ছবিতে ‘টাপুর টুপুর বৃষ্টি নুপুর, জল ছবিরই গায়’ গানটিতে নবীনচন্দ্র ও ক্ষীরোদমণির বাল্যপ্রেমের আবেগ ফুটে উঠেছে অন্য মাত্রায়। গানের কথা, গায়কী, দৃশ্যপট সব কিছু যেন সত্যি মন ভাল করে দেয়। প্রেম যে কতটা সরল সেটাই চুপিসাড়ে বলে এই গান।
এই প্রতিবেদনটি সংগৃহীত এবং ‘আষাঢ়ের গল্প’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy