সেই কোনও কালে তানসেনের মল্লার রাগে নেমে আসতো বারিধারা। আজও যেন বৃষ্টির রিমঝিম শব্দের সঙ্গে মিশে যায় সুরের ছন্দ।
বর্ষা এলায়েছে তার মেঘময় বেণী
বর্ষা আর আগের মতো নেই। ঠিক ছোটবেলায় যেমনটা ভুগোলের পাতা লেখা ছিল। সেই লেখা মিথ্যে হয়ে গিয়েছে। বাংলায় এখন আর জুন মাসে বর্ষা আসে না। এখন বর্ষা আসে তার নিজ ভঙ্গিতে, নিজ ইচ্ছায়। তবুও গ্রীষ্মের প্ৰখর দাবদাহ থেকে বাঁচতে বর্ষার অপেক্ষা করে সাধারণ মানুষ। নতুন ফসল বোনার পরে জলের অপেক্ষা করে চাষীরা। গ্রীষ্ম শেষে বর্ষায় প্রাণ পায় শহর। বর্ষার ঘনঘটার তীব্র আনন্দে বাঙালির মন নেচে ওঠে আপন ছন্দে।
এই বর্ষার সঙ্গেই ওতঃপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে বর্ষার গান, বৃষ্টির গান। সেই কোনও কালে তানসেনের মল্লার রাগে নেমে আসতো বারিধারা। আজও যেন বৃষ্টির রিমঝিম শব্দের সঙ্গে মিশে যায় সুরের ছন্দ। সন্ধ্যের কালো মেঘপুঞ্জ দেখে ঠোঁট গুনগুনিয়ে ওঠে, 'নীল অঞ্জন ঘন পুঞ্জ ছায়ায় সম্বৃত অম্বর'। হেডফোনে চলে বৃষ্টির গান। বৃষ্টির সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীতের বন্ধন যেমন চিরকালীন তেমনই বহু সময়ে বহু ভাষায় বহু গান হয়েছে বৃষ্টি নিয়ে।
রিমঝিম ঘন ঘন রে
সন ১৮৮১, রবীন্দ্রনাথ লিখলেন 'বাল্মীকি প্রতিভা'। সেখানেই বনদেবীদের কণ্ঠে রবি ঠাকুর বসালেন এই গানের সুর। বৃষ্টির জল মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেগে ওঠে বনানী। আর তার সঙ্গেই আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে নেচে ওঠে বনের ময়ূর ময়ূরী সহ অসংখ্য প্রাণী। বৃষ্টির সঙ্গে এই গানের যাপন চিরকালীন।
অব কে সাওয়ান
শুভা মুদগলের কণ্ঠে এই গানের জনপ্রিয়তা চিরকালীন। বৃষ্টি মানেই লাগামছাড়া আনন্দ। শিরদাঁড়ায় প্রেমের ঠান্ডা শ্রোত। প্রবল বর্ষামুখর দিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মন মাতানো এই গান ছোট থেকে বড় সবারই ভীষণ প্রিয়।
শাওন রাতে যদি
বৃষ্টি কখনও আনন্দের কখনও বা বেদনার। বাইরে ঝিরঝির বৃষ্টির সঙ্গে এই গানের সুর হৃদয়স্পর্শী। ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা ছায়াছবি ‘দেবদাস’ এ উত্তম কুমারের লিপে ব্যবহৃত হয় এই নজরুলগীতি। গেয়েছিলেন শিল্পী মান্না দে। অসম্ভব ভাললাগার মধ্যেও কোথাও যেন এক অপ্রকাশিত দুঃখে বুকের ভিতরটা মুচড়ে ওঠে এই গানের সুরে।
বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি
এই জগৎ সংসারে বৃষ্টি সত্যিই এক অপরূপ সৃষ্টি। বৃষ্টির গানের কথা উঠলে তাই লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে এই গান মাথায় আসে। বীরেশ্বর সরকারের কথায় ও সুরে ‘সোনার খাঁচা’ ছায়াছবির এই গান আজও সমান জনপ্রিয়। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে লতা মঙ্গেশকরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই গানটিকে নতুন ভাবে গেয়েছেন সুরকার গায়ক অরিজিৎ সিংহ। যা ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে নেটদুনিয়ায়।
সজনা বরষে হ্যা কিউ আঁখিয়া
ছোটবেলার প্রেমের সম্পর্কে এক পশলা বৃষ্টি যেন অনুঘটক। কত কত ব্যক্তিগত মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে থেকে যায় বৃষ্টি। সেই স্মৃতিকেই আরও উসকে দেয় ওস্তাদ রশিদ খান এবং অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে এই গান। নব অঙ্কুরিত পাতার মতোই সুন্দর সদ্য গড়ে ওঠা প্রেম। প্রেম যেমন তার আপন খেয়ালে মাতোয়ারা তেমনই বৃষ্টিও নিজ ছন্দে স্বাধীন। জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সুরে 'বাপি বাড়ি যা' ছবির এই গান সেই বৃষ্টিকেই প্রেমের গোপন সাক্ষী হওয়ার কথা বলে।
বরষো রে মেঘা
বৃষ্টির গান নিয়ে কথা বলতে গেলে, এই গানটির উল্লেখ করা অত্যাবশ্যক। ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি চলচ্চিত্র ‘গুরু’ তে শ্রেয়া ঘোষালের কণ্ঠে এই গান আজও চর্চিত হয় মুখে মুখ। গানটিতে লিপ মিলিয়েছিলেন অভিনেত্রী ঐশ্বর্য্য রাই বচ্চন।
এই প্রতিবেদনটি সংগৃহীত এবং 'আষাঢ়ের গল্প' ফিচারের অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy