হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময়েই ধর্ষিতা হন তিনি। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় হাসপাতালের সেই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর সাজা হয়। কিন্তু তাঁর প্রশ্ন, সরকারি মানসিক হাসপাতালের ভিতরের ছবিটা বদলেছে কি?
ওয়ার্ডে বেশি চিৎকার করায় নার্স তাঁকে বেঁধে রেখেছিলেন। প্রতিবাদ করে জুটেছিল বেদম মার। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় তদন্ত কমিটি বসেছিল। সেই মার খাওয়া রোগিণীর প্রশ্ন, এর পরেও রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে কি?
মানসিক হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়া পাওয়ার পরে তাঁর যাওয়ার জায়গা ছিল না। শেষে পরিচিত এক কাগজকুড়ানি মহিলা নিজের ঘরে তাঁকে ঠাঁই দেন। কেন সরকারি তরফে মানসিক রোগীদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে না? সরকারি কর্তাদের কাছে তাঁর প্রশ্ন।
বিচ্ছিন্ন ভাবে নয়। বিভিন্ন মানসিক হাসপাতালে একদা অনেকটা সময় কাটিয়েছেন যাঁরা, নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা নিজেরাই এ বার এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই প্রশ্নগুলি করবেন। জবাব চাইবেন প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা, মহিলা কমিশনের কাছে। কলকাতায় আজ, বুধবার এই অভিনব ট্রাইব্যুনালের আয়োজন হয়েছে।
এর আগে মানসিক রোগীদের অধিকার আদায় নিয়ে কিছু সভা-সমিতি, মিছিল হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম রোগী ও সুস্থ হয়ে জীবনের মূলস্রোতে ফেরা মানুষদের নিয়ে বসছে এমন ‘ট্রাইব্যুনাল’। যেখানে মানসিক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা পেয়ে বাইরে বেরোনো প্রায় হাজারখানেক মানুষের থাকার কথা। সেখানে থাকবেন সরকারি প্রতিনিধি, সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, মহিলা কমিশনের সদস্যেরা ও মনোরোগ চিকিৎসকেরাও। সুস্থ হয়ে যাওয়া মানসিক রোগীরাও ওই ট্রাইব্যুনালে প্রশ্ন তুলবেন। তাঁদের প্রশ্ন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) মানসিক রোগ নিয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরেও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সমাজ এমন উদাসীন কেন?
মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় বলেন, “মানসিক হাসপাতালে যে ভাবে রোগীদের বিনা পোশাকে রাখা হয়, মাথার চুল কামিয়ে দেওয়া হয়, তা মর্মান্তিক। কিছু সুপারিশ পাঠিয়েছিলাম। তার কিছু মানা হচ্ছে।”
রাজ্য জুড়ে সমালোচনায় বাধ্য হয়েই মাস খানেক আগে রাজ্যের মানসিক হাসপাতালগুলি থেকে ‘সলিটারি সেল’ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য। হিংস্রতা বা অন্য কোনও অজুহাতে এ বার আর রাজ্যের কোনও মানসিক হাসপাতালে কোনও রোগীকে আলাদা ঘরে আটকে রাখা চলবে না। এমন ঘটলে তৎক্ষণাৎ সেখানকার আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে স্বাস্থ্যকর্তারা জানান। মানবাধিকার কর্মীদের মতে, এটা বড় জয়।
ট্রাইব্যুনালের আয়োজক সংগঠনের তরফে রত্নাবলী রায় বলেন, “এই ট্রাইব্যুনালকে আমরা সরকারের কাছে তদ্বিরের নতুন অস্ত্র হিসেবে মনে করছি। যে মানসিক রোগীদের ক্ষমতায়নের জন্য আমরা লড়ছি, তাঁরাই তাঁদের বঞ্চনার গল্প সরাসরি বলবেন, যাতে আইনে, সরকারি নীতিতে কিছু বদল আনা যায়।”
বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারাও। এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই উপেক্ষিত। ধাপে ধাপে আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে মানুষের এতটা অনাস্থা আর থাকবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy