প্রতীকী ছবি।
দিনে কত গ্লাস জল পান করা উচিত বলুন তো! প্রশ্নটা সহজ, উত্তরটা নয়। এক কথায় বলতে গেলে যখন জন তেষ্টা পাবে, তখনই জল পান করবেন। তবে এখানে একটা কিন্তু আছে। অনেকেরই জল তেষ্টা পায়ই না। মেরে কেটে দিনে বড়জোর তিন চার গ্লাস জল খান। কম জলপান সুস্বাস্থ্যের পরিপন্থী। কেন না, আমাদের শরীরের মোট ওজনের ষাট শতাংশই জলীয়। ঠিক যেমন পৃথিবীর তিনভাগ জল, আমাদের শরীরেরও তাই।
কম জল মানেই অসুখ বিসুখ
সকালে ঘুম ভেঙেই বেড টি, ব্রেকফাস্টে আধা গ্লাস জল, লাঞ্চে মেরে কেটে এক গ্লাস। দিন ভর বড়জোর তিন চার গ্লাস জল শরীরে যায়। শীতকালে আরও কম। পর্যাপ্ত জলের অভাবে কত রকম শারীরিক সমস্যা হতে পারে জানলে তেষ্টা না পেলেও জল খেতে ভুলবেন না। প্রয়োজনের তুলনায় কম জল পেলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে জলাভাব জনিত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। মোদ্দা কথা, ডিহাইড্রেশন হয়ে যখন তখন সমস্যায় পড়তে পারেন। এমনও হতে পারে ডায়রিয়ার কারণে মোটে বার তিনেক বাথরুম যেতে হলেই অথবা প্রবল জ্বরে এমন ডিহাইড্রেশন হয় যে হাসপাতালে ভর্তি করে স্যালাইন দেওয়া ছাড়া কোনও গতি থাকে না। কম জলপান করলে যে সব সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে এক নজরে জেনে নেওয়া যাক-
আরও পড়ুন: এই গরমে ঠান্ডা জল খাচ্ছেন? সাবধান...
কম জল মানেই কনস্টিপেশন অবধারিত। হজমের সমস্যার সম্ভাবনাও বাড়তে পারে। আসলে আমরা যে খাবার খাই তা ইন্টেস্টাইন হয়ে কোলনে পৌঁছয়। সেই সময় শরীরে বিভিন্ন নিউট্রিয়েন্টস ও জলীয় অংশ শোষিত হয়। কম জল পান করলে মল হয়ে উঠবে কঠিন। মল ত্যাগ করা কষ্টকর হবে। ক্রমশ পাইলস, অ্যানাল ফিসার সহ মলদ্বারের রোগের ঝুঁকি বাড়বে। এমনকি পরবর্তী কালে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি থেকে যায়। শরীরে কম জল থাকায় বিপাকীয় ক্রিয়ায় তৈরি কিছু অপ্রয়োজনীয় ও বিষাক্ত পদার্থ জমে গিয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। আমাদের শরীরের ৩৫ শতাংশ জলীয় অংশ সঠিক ভাবে রক্ত সংবহনের জন্যে আবশ্যক। জল কম খেলে শরীরের মোট রক্তের আয়তন (ব্লাড ভলিউম) কমে যায়। ফলে রক্ত চাপ কমে যায়। মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছতে অসুবিধা হয়। আর এর ফলে সারা দিনই ক্লান্ত লাগে। ঘুম পায়, কোনও কাজ করতে ইচ্ছা করে না। কম জল পান করলে কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়ে। একই সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব না করার জন্য ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিডনির কাজকর্ম। মনের ওপরেও প্রভাব পড়ে কম জল খেলে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, কোনও কাজে মনঃসংযোগ করা মুশকিল হয়। এমনকী, ছোটখাট বিষয়ও ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
ঠিক কতটা জলপান করা উচিত
আমাদের মত গরমের দেশে দিনে (যাদের কিডনির কোনও অসুবিধা নেই ) আট থেকে বারো গ্লাস জল পান করা উচিত। তবে ব্যাপারটা ব্যক্তি বিশেষে কিছুটা অদল বদল হতে পারে। যারা রোদ্দুরে ঘোরাঘুরি করেন, বা শারীরিক পরিশ্রম করেন, অথবা খেলাধুলো করেন তাদের বেশি জল তেষ্টা পায়। তাই এ কথা বলাই যায় যখন জল তেষ্টা পাবে তখনই জল পান করতে হবে। আর যারা কম জল পান করেন তাঁদের নিয়ম মেনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস জল পানের অভ্যাস করতে হবে। ছোট থেকেই শিশুদের মধ্যে জলপানের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। সকালে খালি পেটে জল পান করলে শরীরের অনেক টক্সিক পদার্থ বেরিয়ে যায়। ঘুম থেকে উঠে আমরা চোখ মুখ ধুতে পারি কিন্তু শরীরের অভ্যন্তর ধুয়ে ফেলতে পারে জলপান। সন্ধের পর থেকে জল খাওয়া কমিয়ে দিলে ভাল। বিশেষ করে যারা প্রস্টেটের অসুখে ভুগছেন তারা সন্ধের পর বেশি জলপান করলে রাত্তিরে ঘুমের বারোটা বাজবে।
আরও পড়ুন: কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে খেতে পারেন এই ৭ জুস
অতিরিক্ত জলপান অপ্রয়োজনীয়
জল ভাল বলে মিনিটে মিনিটে জল খাওয়া আর ঘন ঘন বাথরুম দৌড়নোর অভ্যাসও মোটেও ভাল নয়। তবে হবু মা বা স্তন্যদাত্রী মা, জ্বর বা ডায়রিয়ার রোগীদের তুলনামূলক ভাবে কিছুটা বেশি জল দরকার হয়। জল পান ভাল বলে অনেকে ৮ থেকে ১০ লিটার পর্যন্ত জল খেয়ে ফেলেন। এর কোনও দরকার নেই। বাড়তি জল শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে। রোদে দীর্ঘক্ষণ খেলার পর ঢকঢক করে এক সঙ্গে অনেকটা জল খেলে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। এর ফলে এক্সারসাইজ অ্যাসোসিয়েটেড হাইপোন্যাট্রিমিয়া (EAH) অর্থাৎ শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে গিয়ে আচমকা জ্ঞান হারানোর ঝুঁকি থাকে।
বেশি জলের বিপদ
অতিরিক্ত জলপান করলে কিছু শারীরিক সমস্যা হতে পারে। মনের অসুখ থাকলেও অনেক সময় বাড়তি জলপানের প্রবণতা থাকে।
বেশি জলপানের জন্য রক্তে সোডিয়াম কমে গেলে মাথা ঝিম ঝিম করতে পারে। বার বার বাথরুমে দৌড়তে হয়।
কথাবার্তা অসংলগ্ন হতে পারে। লেথার্জি লাগে, অর্থাৎ কোনও কাজ করতে ইচ্ছে করে না। সারাদিনই শুয়ে বসে থাকতে ইচ্ছা করে। যাদের স্ক্রিজোফেনিয়া বা এই ধরনের মনের অসুখ রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত জলপানের প্রবণতা থাকে।
বিশ্ব জল দিবসে আসুন আমরা জলপান ও জল সংরক্ষণের ব্যাপারে সতর্ক হই। বৃষ্টির জল ধরে রেখে ব্যবহার করলে ভবিষ্যত প্রজন্মকে জলের সমস্যায় কষ্ট পেতে হবে না।
জল পান করুন, ভাল থাকুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy