Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
হেপাটাইটিস

করোনার ভয়ে হেপাটাইটিসকে অগ্রাহ্য? ক্ষতি হতে পারে মারাত্মক

হেপাটাইটিস ডের স্লোগান ‘হেপাটাইটিস মুক্ত ভবিষ্যৎ’ বাস্তবায়িত  করতে গেলে চাই, সব মানুষের সহযোগিতা।

হেপাটাইটিস সি-র সংক্রমণে ৯৫% বেশি রোগীকে অ্যান্টি-ভাইরাল দিয়ে সারিয়ে তোলা সম্ভব। ছবি: শাটারস্টক

হেপাটাইটিস সি-র সংক্রমণে ৯৫% বেশি রোগীকে অ্যান্টি-ভাইরাল দিয়ে সারিয়ে তোলা সম্ভব। ছবি: শাটারস্টক

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২০ ১২:০৪
Share: Save:

করোনার দাপটে হেপাটাইটিস ভাইরাসরা প্রচারে কিছুটা পিছিয়ে গেলেও অসুখের প্রকোপ যে কমে গেছে তা মোটেও নয়। এই মুহুর্তে বিশ্বের ৩২কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের সঙ্গে সহবাস করছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র হিসেবে স্রেফ হেপাটাইটিস বি সংক্রমণের জন্য বছরে ৯ লক্ষ মানুষ মারা যান। বিশ্বের জনসংখ্যার মোট ১০% মানুষের শরীরে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ও ১৯% এর শরীরে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস বাসা বেঁধে আছে। এই ভাইরাস পরিবার ( হেপাটাইটিস এ থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ই পর্যন্ত) কোভিড ১৯ এর থেকে কোনও অংশেই কম ক্ষতিকারক নয়। সংক্রামক অসুখ হেপাটাইটিস সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে পৃথিবী জুড়ে হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয় প্রতি বছর ২৮ জুলাই।

ওড়িশার কটকের খ্যাতনামা গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিস্ট এস পি সিংহ এর উদ্যোগে ২০১০ সাল থেকে হেপাটাইটিসের সংক্রমণ আটকানোর পাশাপাশি অসুখটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে দিবস পালনের তোড়জোড় শুরু হয়। তাতে সম্মতি দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রসঙ্গত ২৮ জুলাই নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী বি স্যামুয়েল ব্লুমবার্গের জন্মদিন, যিনি হেপাটাইটিস বি ভাইরাস শনাক্ত করার জন্য নোবেল পুরস্কার পান। হেপাটাইটিস মুক্ত ভবিষ্যৎ— এ বারের ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস ডে-তে এই শপথ নেওয়ার ডাক দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।

আরও পড়ুন: বাড়ি বাড়ি পরীক্ষা, সচেতনতা, কড়া লকডাউন, তবেই রাজ্যে নিয়ন্ত্রণে আসবে করোনা​

গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিস্ট কল্যাণ বসুর- এর মতে এবারে কোভিড ১৯ ভাইরাসের দাপটে হয়তো হেপাটাইটিসের সংক্রমণ অনেকটাই কমে যাবে। কারণ নভেল করোনার কারণে লোকজনের মেলামেশা কিছুটা হলেও কমেছে, একই সঙ্গে কিছুটা পরিচ্ছন্নতাও মেনে চলছেন আম জনতা। হেপাটাইটিস বি, সি ও ডি ছড়ায় মূলত রক্ত ও অন্যান্য বডি ফ্লুইড থেকে।

কোভিডের চেয়ে কম ক্ষতিকারক নয় হেপাটাইটিস। ছবি: শাটারস্টক

হেপাটাইটিস এ এবং ই ছড়ায় জল থেকে। করোনার কারণে দূরত্ব বজায় রাখায় বডি কন্ট্যাক্ট হেপাটাইটিসের প্রকোপ অনেকটাই কমে যাবে বলে আশাবাদী কল্যাণবাবু। হেপাটাইটিস ডের স্লোগান ‘হেপাটাইটিস মুক্ত ভবিষ্যৎ’ বাস্তবায়িত করতে গেলে চাই, সব মানুষের সহযোগিতা। ঠিক যে ভাবে গুটিবসন্তের ভাইরাসকে পৃথিবী ছাড়া করা হয়েছে, সে ভাবেই এই রোগের ভাইরাসদের বিদায় করতে হবে।

আরও পড়ুন: আসল এন৯৫ চিনবেন কী করে? সংশয় হলে কী করবেন?​

পাঁচ ধরনের ভাইরাস হেপাটাইটিস রোগটি ডেকে আনে। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই, এই পাঁচটি ভাইরাসের মধ্যে হেপাটাইটিস বি, সি এবং ডি এই তিনটি ভাইরাস মারাত্মক। এরা একবার শরীরে প্রবেশ করলে আজীবনই ঘাপটি মেরে বসে থাকার চেষ্টা করে আর তলে তলে লিভারের বারোটা বাজায়। ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ক্রনিক হেপাটাইটিস।

অসুখটা ক্রনিক হয়ে গেলে লিভার ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর চরম পরিণতি সিরোসিস অফ লিভার এবং লিভার ক্যানসার। অবশ্য অ্যাকিউট হেপাটাইটিসেও রোগী জটিল অবস্থায় পৌছে গিয়ে তার থেকে হেপাটিক কোমা এমনকি জীবনহানির আশঙ্কা থাকে। তাই জন্ডিস বা হেপাটাইটিসের কোনও রকম উপসর্গ হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার। করোনার ভয়ে আখের বা অড়হড় পাতার রস খেয়ে বাড়ি বসে থাকবেন না।

আরও পড়ুন: ক্লান্ত লাগলেই কি করোনা? উদ্বিগ্ন হবেন না, এ সব করুন

জন্ডিস বনাম হেপাটাইটিস

ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে লিভারের প্রদাহকে বলা হয় হেপাটাইটিস। হেপাটাইটিস মানেই কিন্তু জন্ডিস নয়। জন্ডিস রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। জন্ডিস আর হেপাটাইটিসের মূল পার্থক্য নিয়ে অনেকের মনেই নানান সংশয় আছে। আসলের অসুখটার নাম হেপাটাইটিস আর তার লক্ষণ অর্থাৎ শরীর হলদেটে হয়ে যাওয়াকে বলে জন্ডিস। হেপাটাইটিস ছাড়াও অন্য কারণে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে শরীর হলদে হয়ে যায়। হেপাটাইটিস হলে জন্ডিস ছাড়াও আরও কয়েকটি উপসর্গ দেখা যায়। যেমন খাবার বিস্বাদ লাগে, অরুচি হয়, জ্বর বা জ্বরজ্বর ভাব থাকে, রোগী সামান্য পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠে, হেপাটোমেগালি অর্থাৎ লিভার ফুলে যেতে পারে, স্প্লিনেমেগালি অর্থাৎ প্লীহা বা স্প্লিন বড় হয়ে যায়। কারো কারও আবার লিম্ফ গ্ল্যান্ড ফুলে ওঠে। এ ছাড়া ক্ষিদে নষ্ট হয়ে যায়, বমি ও বমিবমি ভাব, অরুচি, সামগ্রিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।

ক্রনিক হেপাটাইটিসের লক্ষণ দেখলেই চিকিৎসা জরুরি

আশা করা যায়, এ বছর করোনার জন্য বেশিরভাগ মানুষ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখছেন তাই জলবাহিত হেপাটাইটিস এ এবং ই ভাইরাস খুব একটা ছড়িয়ে পড়তে পারবে না। হেপাটাইটিস বি ও সি-র ক্ষত্রে ডাক্তারবাবুদের কপালে ভাঁজ পড়ে, যদি অসুখটা ক্রনিক পর্যায়ে চলে যায়। হেপাটাইটস বি-র ক্ষেত্রে অসুখটা চুপচাপ বসে থাকতে পারে বলে জানালেন কল্যাণ বসু। মাঝে মধ্যে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। কোনও রকম উপসর্গ দেখলেই ডাক্তার দেখান জরুরি। এই অসুখ ছ’মাসের কম সময় স্থায়ী হলে তা অ্যাকিউট, আরও বেশি হলে ক্রনিক। হেপাটাইটিস সি-র সংক্রমণ হলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা করালে অ্যান্টিভাইরাল দিয়ে ৯৫% রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা যায় বলে ভরসা দিলেন কল্যাণবাবু। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ে রোগী অসুখটা জটিল হওয়ার পর চিকিৎসকের কাছে যান, তখন চিকিৎসা করে ভাল ফল পাওয়ার আশা করা মুশকিল।

বাড়ির হালকা রান্না খেতে হবে

হেপাটাইটিস ভাইরাসের সংক্রমণে জন্ডিস হলে বেশিরভাগ মানুষই খাওয়া দাওয়া নিয়ে অযথা আশঙ্কা করেন। অনেকের ধারণা এই সময় হলুদ ছাড়া রান্না আর পেঁপে সেদ্ধ আর শিঙি মাছ না খেলে রোগ সারে না। শিঙি মাছের বদলে যে কোনও টাটকা মাছ, চিকেন, সবই খাওয়া যায়। শরীর হলুদ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে হলুদ খাওয়া বা না খাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। বরং হলুদে থাকা অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করে। হেপাটাইটিস হলে বাড়ির স্বাভাবিক সব রান্নাই রোগী খেতে পারেন, তবে বেশি তেল মশলা ও ভাজা পোড়া, গুরুপাক খাবার খাবেন না। করোনার পাশাপাশি হেপাটাইটিস প্রতিরোধ করতে উদ্যোগী হন, সচেতন হন। সবাই ভাল থাকুন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy